স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় নতুন করে ৪ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। দর্শনা ও আলমডাঙ্গায় শিশুসহ ৪ জন করোনা পজেটিভ হয়েছে। এছাড়া কুষ্টিয়ায় ১৫ জন, মেহেরপুরে দুজন ও ঝিনাইদহ জেলায় পাঁচজন নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে করোনা শনাক্তের এ তথ্য পাওয়া যায়। চুয়াডাঙ্গায় নতুন আক্রান্ত ৪ জন বর্তমানে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। অপরদিকে, গত সোমবার জীবননগর পৌরসভার একজন এমএলএসএস করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার রিপোর্ট পাওয়া যায়। ফলে গতকাল মঙ্গলবার পৌরভবন লকডাউন করে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে।
জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে চুয়াডাঙ্গার ৬৬টি রিপোর্ট আসে। এর মধ্যে নতুন করে চারজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এর মধ্যে আলমডাঙ্গা উপজেলায় দুজন ও দর্শনায় দুজন। নতুন করোনা আক্রান্তের মধ্যে ৪ বছরের এক শিশু রয়েছে। নতুন আক্রান্তের সবাই হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। চুয়াডাঙ্গায় এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩১ জন। সুস্থ হয়েছেন ৮৩ জন। করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ জন। আর করোনা আক্রান্ত একজনের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪৬ জন রোগী।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর পৌরসভার একজন এমএলএসএস করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় লকডাউন করা হয়েছে পৌর ভবন। গত সোমবার ওই কর্মচারীর করোনা ভাইরাস পজেটিভ রিপোর্ট আসার পর পৌরসভার স্টাফদের করোনা পরীক্ষা করার জন্য গতকাল মঙ্গলবার ১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নমুনা সংগ্রহ করে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। বাকি ৫২ জনের নমুনা নেয়া হবে আজ বুধবার।
পৌরসভারসূত্রে জানা যায়, জীবননগর পৌরসভার একজন এমএলএসএস করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ওই কর্মচারী শহরের কাজপাড়ায় ভাড়াবাড়িতে বসবাস করেন। গত সোমবারও ওই কর্মচারী অফিস করায় পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম গতকাল পৌরভবন লকডাউন ঘোষণা করেন। লকডাউন ঘোষণার পর পৌরসভার গেটে লাল পতাকা উড়ানো হয়েছে। মেয়রসহ পৌর পরিষদের ১৩ জন, ২২ জন নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, ৩২ জন অনিয়মিত কর্মচারী ও দুজন অস্থায়ী কর্মচারীসহ পৌরসভায় ৬৯ জন স্টাফ রয়েছে। এদিন উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ হতে ৬৯ জনের মধ্যে ১৭ জনের নমুনা নেয়া হয়েছে। কীট সংকট থাকায় বাকিদের আজ নমুনা নেয়া হবে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন। করোনা শনাক্ত ওই এমএলএসএস ঢাকা থেকে আসা তার এক আত্মীয়র সংস্পৃশে আসার কারণে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি বর্তমানে বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন।
এদিকে হাসপাতালসূত্রে জানা যায়, গতকাল ২২টি নমুনা নিয়ে পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরীতে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত ২০৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করলো স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে ১৪১ জনের রিপোর্ট এসেছে। তার মধ্যে ৯ জনের করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে। ৯ জনের মধ্যে ৩ জন করোনা জয় করে সুস্থ হওয়ায় তাদেরকে করোনা মুক্তির ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
মেহেরপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুরে নতুন করে আরও দুজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম। আক্রান্তরা সদর উপজেলার হিজুলী গ্রাম ও শহরের কোর্টপাড়ার বাসিন্দা। দুজনেই মধ্যবয়সী নারী। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, করোনায় আক্রান্তদের একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। দু’দিন আগে করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় তিনি। এছাড়া শহরের কোর্টপাড়ার ওই নারী নিজ বাড়িতে রয়েছেন সেখানে তার চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. নাসির উদ্দীন জানান, মেহেরপুর জেলা থেকে ৫২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে কুষ্টিয়া ল্যাবে পাঠানো হয়। সেখান থেকে দুজন করোনায় আক্রান্ত বলে নিশ্চিত করা হয়। তিনি আরও জানান, আক্রান্ত দুজনের বাড়িসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মেহেরপুর জেলায় মোট করোনায় আক্রান্ত ৩২, সুস্থ ৭ ও মৃত্যু দুজন।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গ্রিন জোন ঘোষণার পরদিনই ঝিনাইদহে একজন চিকিৎসকসহ ৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত ৮ ও ৯ জুন ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ জেলায় এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৬০ জন আর সুস্থ হয়েছেন ৩৮ জন। গত সোমবার সকাল ও দুপুরে ২৮টি নমুনার ভেতরে ২৩টি নেগেটিভ এসেছে বলে স্বাস্থ্যবিভাগের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ঝিনাইদহের বাসিন্দা মাগুরা আড়াই শয্যা হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোকাররম হোসেনসহ কালীগঞ্জে ৩ জন এবং হরিণাকু-ুর একজন রয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার কালীগঞ্জে করোনায় আক্রান্ত তিনজন হলেন কালীগঞ্জ পৌরসভার কলেজপাড়ায় দুজন ও মালিয়াট ইউনিয়নের বেথুলী গ্রামে একজন, মহেশপুরের ১ জন।
উল্লেখ্য, হরেনাথ সাহার মালিকানাধীন হাসপাতাল সড়কের মল্লিক ফার্মেসিতেই ডা. আলতাফ হোসেন রোগী দেখতেন। গত রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে জেলাটিকে গ্রিন জোন হিসেবে দেখানো হয়। দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর থেকে পরিস্থিতি বিবেচনায় কখনোই এ জেলার কোনো এলাকাকে লকডাউন করা হয়নি। এ ব্যাপারে জেলার সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম বলেন, মঙ্গলবার ‘খুলনা, যশোর এবং কুষ্টিয়া থেকে ঝিনাইদহে মোট ৩৮টি রিপোর্ট এসেছে। এর মধ্যে থেকে ৪টি পজেটিভ এসেছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলায় একজন এবং মহেশপুর উপজেলায় একজন। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা সেলের মুখপাত্র ডা. প্রসেঙ্কিত বিশ্বাস বলেন, যেহেতু ইতঃপূর্বে ঝিনাইদহ লকডাউন ছিলো না এবং সুস্থতার হার বেশি, এসব বিবেচনায় একমাত্র জেলা হিসেবে ঝিনাইদহকে গ্রিন জোন হিসেবে ধরা হয়। দেশে করোনার বিস্তার ঠেকাতে এলাকাভিত্তিক লকডাউনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।