চুয়াডাঙ্গায় কাবাডি প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণকালে জেলা প্রশাসক

কাবাডি খেলা বাঙালীদের ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে
ইসলাম রকিব: চুয়াডাঙ্গায় জেলা পুলিশের আয়োজনে দুই দিনব্যাপী মহান বিজয় দিবস আন্তঃইউনিট কাবাডি প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল সোমবার সমাপনী দিনে প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। মহিলা বিভাগ কাবাডি প্রতিযোগিতার ফাইনালে ৩৫-১২ আলমডাঙ্গা থানা দলকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা দল। পুরুষ বিভাগের ফাইনালে ২৭-০৯ পয়েন্টে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা দলকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে দামুড়হুদা মডেল থানা। পুরুষ ও মহিলা বিভাগের ফাইনাল শেষে জমকালো আয়োজনে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতার মূল আয়োজক চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আরএম ফয়জুর রহমানের (পিপিএম সেবা) সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে চ্যাম্পিয়ন ও রানার দলের হাতে পুরস্কার তুলে দেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, আজকের এই কাবাডি খেলার মধ্যদিয়ে আমরা যেন আমাদের সেই শৈশব বা কৈশরে ফিরে গেছি। যেখানে ফসলের মাঠ ফাঁকা হলে উন্মুক্ত ফাঁকা জায়গায় মাটির বুক জুড়ে কাবাডি খেলায় আমরা মেতে উঠতাম। কাবাডি খেলা বাঙালীদের ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে। তাই এই খেলাটি যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য আমাদেরকে সার্বিকভাবে কাবাডি নিয়ে কাজ করতে হবে। সময় এসেছে বাঙালির অস্থিমজ্জায় মিশে থাকা এই জাতীয় খেলাটিকে আরো গতিসম্পন্ন ও বেগবান করার। কাবাডির যে উন্মাদনা সেটি যাতে গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ুক সেই ব্যবস্থা করা হবে। কাবাডি প্রতিযোগিতার আয়োজক ও চুয়াডাঙ্গা নবাগত পুলিশ সুপার আরএম ফাইজুর রহমান বলেন, মহান বিজয় দিবস ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডির ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের সামনে মেলে ধরতে এবং কাবাডির উৎকর্ষ সাধনে খেলোয়াড়দের দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রতিভা অন্বেষণ করতে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ বালক ও বালিকাদের জন্য মনমুগ্ধকর ও জাঁকজমক পূর্ণ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।
সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায় কাবাডি বেশ জনপ্রিয় একটি খেলা। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে জাতীয় খেলা কাবাডির নবজাগরণ এনে দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান সম্মানিত ইন্সপেক্টর জেনারেল ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার। জাতীয় খেলার হারানো গৌরব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন নানাবিধ কর্মক্রম পরিচালনা করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন এর পৃষ্ঠপোষকতায় মহান বিজয় দিবস ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ জাকজমকপূর্ণ আন্তঃইউনিট কাবাডি (বালক ও বালিকা) প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এই আয়োজন চুয়াডাঙ্গাবাসীসহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কলাকুশলীরা এবং চুয়াডাঙ্গা কাবাডি এসোসিয়েশন এর সাথে জড়িত বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রীড়াবিদ এবং কর্মকর্তাবৃন্দ প্রতিযোগিতাটি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে এই আয়োজনকে অনন্য উচ্চতায় মেলে ধরেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার তরুণ ও তরুণীদের মধ্যে খেলার প্রতি দারুণ আগ্রহ ও আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ কর্তৃক আয়োজিত কাবাডি প্রতিযোগিতায় (বালক ও বালিকা) অংশগ্রহণকারী মোট দলের সংখ্যা ছিল ৮টি এর মধ্যে বালক ৪টি ও বালিকা ৪টি। পুলিশ সুপার আরও বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অপরিহার্য অংশ। কাবাডি মানুষকে একত্রিত করার এবং মানুষের মধ্যে ঐক্য ও সৌহার্দের বোধ জাগিয়ে তোলার ক্ষমতা রাখে। শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় কাবাডি খেলার অন্যবদ্য ভূমিকা রয়েছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতীয় খেলাটি দেশের গ-ি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লেও বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পুলিশ সুপার আরও বলেন, চুয়াডাঙ্গার যুব সমাজকে কাবাডি খেলার সাথে সম্পৃক্ত করতে প্রয়োজনীয় সকল ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) সদ্য পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত মো. রিয়াজুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি দৈনিক মাথাভাঙ্গা সম্পাদক প্রকাশক সরদার আল আমিন, দৈনিক প্রথম আলোর চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি শাহ আলম সনি, চুয়াডাঙ্গা ডিএফ’র সভাপতি এখলাছ উদ্দিন সুজন, জেলা ক্রীড়া অফিসার আমানুল্লাহ আহমেদ ও সরকারি গণগ্রন্থাগারের সহকারী লাইব্রেরিয়ান মাসুদ রানা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল আনিসুজ্জামান লালনের সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন ডি-আই ওয়ান আবু জিহাদ খন্দকার ফখরুল আলম খান, সদর অফিসার্স ইনচার্জ সেকেন্দার আলী, টিআই প্রশাসন ওলিউজ্জামান, কেএম জাহাঙ্গীর আলম, পুলিশ অফিস (ক্রাইম সেকশন), মোটরযান ইনচার্জ জিয়াদ হাসান, আর আই আমিনুল ইসলাম, ইন্সপেক্টর আব্দুল বারিকসহ পুলিশ কর্মকর্তাগণ। দু-দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত এ কাবাডি প্রতিযোগিতার ম্যাচগুলো পরিচালনা করেন ফজলুল হক মালিক লোটন, ইসলাম রকিব, ফিরোজ উদ্দিন, আব্দুল হাই, মেহেরুল্লা মিলু, এএসআই আজমল ও এএসআই নাহিদ।