হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় স্বাস্থ্য সেবার মান বৃদ্ধি ও পরিষ্কার পরিছন্নতা নিশ্চিত করাসহ লোকবল সংকট দূর করনের সিদ্ধান্ত
স্টাফ রপর্িোটার: চুয়ডাঙ্গা স্বাস্থ্য সেবার মান বৃদ্ধিতে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তে নমুনা পরীক্ষায় অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ যাবতীয় অনিয়ম দূর করার লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছে তদন্ত ও তদারক কমিটি। যতো দ্রুত সম্ভব চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসক সংকট নিরসনের পাশাপাশি পরিষ্কার পরিছন্নতায় প্রয়োজনীয় কর্মী নিযুক্তকরণেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন।
দীর্ঘ সময় ধরে সভার সদস্যদের অভিমত গুরুত্বের সাথে শোনার পর সভাপতির বক্তব্যে সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলেন বলেন, সরকারের নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত অর্থ আদায় যেমন অন্যায় তেমনই দরিদ্র্যদের নিখরচায় পরীক্ষার কথা সরকার বললেও তা না করে টাকা নেয়াটাও দুঃখজনক। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শক্ত পদক্ষেপ নেয়া হবে। এছাড়াও কোন প্রকারের অনিয়মকে প্রশ্রয় দেয়ায হবে না। চুয়াডাঙ্গায় স্বাস্থ্য সেবার মান বৃদ্ধিতে যা যা করনীয় তা যথাসময়ে সুষ্ঠুভাবে করতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করাতে আসা ব্যক্তিদের নিকট থেকে ইচ্ছামতো টাকা আদায়ের আমলে নিয়েছে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটি। গতকালের সভায় গঠিন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি ৭ দিনের মধ্যে বৈঠকে বসবে। যথাসম্ভব স্বল্প সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করবে। তাছাড়াও এই কমিটি কোভিড-১৯ রোগী চিকিৎসহ নমুনা সংগ্রহের বিষয়েও তদারকি করবে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মিলনায়তনে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির মত সভায় করোনা পরীক্ষায় অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। বলা হয়, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করতে আসা রোগীদের অভিযোগ, সদর হাসপাতালে সাধারণ মানুষের করোনা পরীক্ষায় সরকার নির্ধারিত ১০০ টাকার পরিবর্তে খেয়াল খুশি মতো টাকা আদায় করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে নেয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। দেয়া হয় না কোন রশিদ। ক্ষেত্রবিশেষ রশিদ দেয়া হলেও সেখানে বসানো হয়না আদায়কৃত টাকার পরিমাণ। যেখানে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং দুস্থ ও অসহায়দের জন্য বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন সেখানে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে তাদের কাছ থেকেও একইভাবে টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। এ কারণে চুয়াডাঙ্গায় নমুনা পরীক্ষাও কম বলে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে নমুনা পরীক্ষার টাকা নির্দিষ্ট খাতে জমা না দেয়ার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। এসব বক্তব্য সভার সভাপতি মনোযোগ দিয়ে শোনেন। ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে সভা। এ সভার শুরুতেই তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সভা হওয়ার কথা মাসে একবার। তা করা না গেলে, দুমাস পর একবার সভা হতে হবে। তাগিদ না দিলে সভা নয় কেনো? ১৯ মাস পর সভা কেন?’ এসব প্রশ্নের জবাব অবশ্য স্বাস্থ্য বিভাগের উপস্থিত তেমন কেউই দেননি। সভার শুরুতেই সভাপতি আরও বলেন, স্বচ্ছভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়িয়ে এলাকাবাসীকে হাসপাতালমুখী করতে হবে। এরপর শুরু হয় এজেন্ডা অনুযায়ী আলোচনা। সভায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার, পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, সিভিল সার্জন এএসএম মারুফ হাসান, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. এএসএম ফাতেহ আকরাম, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মালিক, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়ার রিয়াজুলু ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটনসহ ১৯ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত কমিটির অন্যতম সদস্য চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দার টোটন বলেন, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল কেন্দ্রে করোনার নমুনা দিতে যারা এসেছেন তাদের কাছ থেকে নিয়ম অমান্য করে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। কেন্দ্রে এসে নমুনা দিতে হলে ১শ টাকা নেয়া যাবে। যারা নমুনা দিয়েছেন তাদের প্রায় সকলের কাছেই ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কিংবা তারও বেশি টাকা নেয়ার অভিযোগ আছে। তাছাড়া চলতি মাসে নমুনা দিতে আসা দরিদ্র মানুষদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়া যাবে না এমন নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হয়নি। সকলকেই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে নমুনা দিতে হয়েছে। দেয়া হয়নি রশিদ। সভায় আলোচনায় উঠে উপস্থিত অনেকেই বলেন, এর সাথে ল্যাব টেকনিশিয়ানসহ কয়েকজন কর্মচারি জড়িত। আদায়কৃত অতিরিক্ত টাকা কোথায় গেলো? এসব প্রশ্নের প্রেক্ষিতে সিভিল সার্জন বলেন চলতি মাসের টাকা পাওয়া গেছে। সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত আদায় এবং পূর্বের টাকা নিয়ে অস্বচ্ছতা প্রসঙ্গে উত্থাপিত প্রস্তবনার প্রেক্ষিতে গঠন করা হয় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি। এ আগামী ৭ দিনের মধ্যে বৈঠকে বসে উত্থাপিত অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করবে এই তদন্ত কমিটি। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সহসভাপতি নজরুল ইসলাম সরকার জানান, আজকের বৈঠকে সামগ্রিকভাবে অনিয়মের বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। সরকারি কাজে স্বচ্ছতা থাকা দরকার। এ কারণেই উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত করার লক্ষে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির রিপোর্টের প্রেক্ষিতে পরবর্তি পদক্ষেপ নেয়া হবে। সভায় উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে অনেকেই বলেন, হাসপাতাল চত্ত্বর অটোর চাপে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হয়। হাসপাতালের নোংড়া আবর্জনা যথাযথ সময়ে পরিষ্কার হয় না। করোনা ওয়ার্ডের অভ্যন্তরে রয়েছে নানা অনিয়ম। চিকিৎসকেরও সংকট রয়েছে। সেবিকার সংখ্যাও কম। পরিষ্কার পরিছন্নতায় আরও দুজন কর্মী পৌরসভা থেকে নিযুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়।
সভার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বলেন, হাসপাতালের সর্বক্ষেত্রে সুকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে করোনা ওয়ার্ডে বাড়তি নজর দেয়া দরকার। প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দেয়া হবে। সুইপার সংকট দূর করনে পৌরসভাও লোকবল নিযুক্ত করবে। এছাড়াও সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় হাসপাতাল প্রাঙ্গন যাতে যানজোট মুক্ত থাকে সে লক্ষে যথযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে থাকা অটো সরাতে হবে। সব কিছুই করতে হবে জনস্বার্থে। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের আরো আন্তরিকভাবে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত হতে হবে।
এদিকে, করোনা পরীক্ষা নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আর্থিকসহ নানা স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে গতকাল বুধবার দুপুর থেকে সরব হয়েছেন নেটিজেনরা । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছিলো সমালোচনার ঝড়। অনেকেই অভিযোগ তুলে বলেণ, অধিকাংশই করোনা পরীক্ষা করতে ৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশী আদায় করা হয়েছে। অনেকের অভিযোগ- নমুনা দিয়েছি, দিয়েছি টাকা, কিন্তু মেলেনি ফলাফল । অভিযোগ, বাড়ীতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৩শ টাকা আদায় করলেও রোগিদের দেয়া হয়না টাকা আদায়ের রশিদ ।