চুয়াডাঙ্গায় ওভারপাস নির্মাণ কাজ জমি অধিগ্রহণ জটিলতা ও ভ্যারিয়েশনজনিত কারণে বন্ধ

কর্মচারী বলছেন পাথর না থাকায় হচ্ছে না কাজ : ব্যবসায়ীরা বলছেন দেয়া হয়নি কোনো ক্ষতিপূরণ

ইসলাম রকিব: বন্ধ রয়েছে চুয়াডাঙ্গা রেলবাজারস্থ লেবেল ক্রসিং ওভারপাস নির্মাণ কাজ। গত এক সপ্তাহ ধরে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রেল বাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও এইপথ দিয়ে যাতায়াতকারী যানবাহনের ড্রাইভার, মালিক ও সাধারণ মানুষ অভিযোগ করে বলেন, আর কতদিন লাগবে নির্মাণ শেষ হতে। এভাবে আর ধীর গতির কাজ মেনে নেয়া যায় না। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত রেলবাজারের ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা আর কতদিন এভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে থাকবো। ওভারপাস নির্মাণজনিত কারণে আমাদের দোকানপাট ভেঙে দেয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণের একটি টাকাও আমরা আজ অবধি হাতে পাইনি। এ বিষয়ে রেল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি ফারুক হোসেন মালিক বলেন, আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা না পারছি ব্যবসা করতে, না পারছি অন্য কোন কাজ করতে। পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছি। উপায়ান্ত না পেয়ে অনেকে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ব্যবসা করছি। এছাড়া ওভারপাস নির্মাণ জনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটির মাধ্যমে একটি টাকাও ব্যবসায়ীরা যেমন হাতে পায়নি, তেমনি কমিটির কোনো সদস্যকেও পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা পড়েছি উভয় সংকটে। আমরা না পারছি ব্যবসা করতে, না পাচ্ছি ক্ষতিপূরণের টাকা। এভাবে চলতে থাকলে আমাদেরকে পরিজন নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। সেজন্য কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে কর্তৃপক্ষকেই দায়ী থাকতে হবে। ওভারপাস নির্মাণের কাজ বন্ধ থাকা বিষয়ে এ নির্মাণ প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ার নজির আহমেদ বলেন, জমি অধিগ্রহণ জটিলতা ও ভ্যারিয়েশন জনিত কারণে কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে রেলগেট সংলগ্ন অনন্যা ফুড-গোডাউন এলাকায় বর্তমানে আমাদের কাজ হওয়ার কথা কিন্তু সেই জায়গার জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় আমরা যেমন কাজ করতে পারছি না, তেমনি এই অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াটা লেনদি প্রসেজ হওয়ায় আমরাও পড়েছি বেকায়দায়। জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে সড়ক জনপথ বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের ওপর। শুনেছি সাবেক জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমার সময় অধিগ্রহণের কাজটি অনেকটা এগিয়ে ছিলো। কিন্তু সাবেক ডিসি চুয়াডাঙ্গা ত্যাগের আগে নাকি সেই কাজটি বাতিল করে গেছে। এখন আবার নতুন করে প্রসেজ করে কাজ করতে হবে। জমি অধিগ্রহণ কাজটি করতে ছয় মাসের অধিক সময় লাগে। জেলা প্রশাসন ও সড়ক বিভাগের মাধ্যমে বিষয়টি জরিপ করে কাগজপত্র পাঠানো হয় মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে কাগজপত্র এপ্রোভাল হয়ে আসলে ক্ষতিগ্রস্ত জমি মালিকদের মধ্যে ক্ষতিপুরণের টাকা দেয়া হয়। কিন্তু চুয়াডাঙ্গা রেলগেট সংলগ্ন অনন্য ফুডের গোডাউনসহ বেশ কিছু জায়গায় জমি অধিগ্রহণের কাজটি সম্পন্ন করা হয়নি। বিধায় আমরা কাজ করতে পারছি না। এভাবে সময় যত ডিলে হচ্ছে ততই আমাদের কোম্পানির লোকসান হচ্ছে। কোন কাজ না করলেও কর্মকর্তা,- কর্মচারী ও ইকুপমেন্ট বাবদ প্রতিমাসে খরচ হয় ৪০-৪৫ লাখ টাকা খরচ দিতে হয়। এভাবে সময় যত বাড়াবে ততই কোম্পানির লস হবে। তাই আমরাও চাই দ্রুত জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য জটিলতার সমাধান হোক। এ বিষয়ে ওভার পাস নির্মাণ প্রকল্পের আলামিন হোসেন অনিক নামের একজন ওয়াচম্যান বলেন, পাথর না থাকায় আপাতত কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে পাথর চলে আসলে এ সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি। এদিকে চুয়াডাঙ্গার ওভার পাস নির্মাণের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রেলবাজার এলাকার মুকুল বলেন, সামনে আসছে বর্ষাকাল। নির্মাণ কাজ চলাকালীন অবস্থায় রেলবাজার এলাকার অবস্থা কি হবে তা কল্পনা করতে পারছি না। নেই ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা, নেই নির্মাণাধীন ওভার পাসের দু’পাশের রাস্তা। এরকম অবস্থায় রেলবাজার এলাকার যে করুন দশা হবে, তা হবে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ অত্র এলাকার মানুষের গলার কাঁটা। নির্মাণ কাজের মেয়াদ আর কতদিন আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ইঞ্জিনিয়ার নাজির আহমেদ বলেন,প্রাথমিকভাবে যে সময় নির্ধারিত ছিলো তাহলো চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত। বাকি কাজ সম্পন্ন করতে আগামী জুন থেকে পরবর্তী আরো এক বছর সময় লাগতে পারে। সেই আবেদনও ইতিমধ্যে করা হয়েছে। ওভারপাস নির্মাণ কাজের অগ্রগতি, জমি অধিগ্রহণ জটিলতা ও বর্তমানে ওভারপাস নির্মাণ কাজ বন্ধের বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় চুয়াডাঙ্গা শরৎ জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট। কিন্তু মুঠোফোনে তাকে একাধিকবার কল করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।