স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের হার আশঙ্কাজনক বেড়েছে। ১২৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা ভাইরাস পজিটিভ হয়েচে ৮২ জন। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গার আরও একজনের ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। জীবননগরে উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও একজন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩১ জন। এদিকে জীবননগর উপজেলা আগামীকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে সর্বাত্মক কঠোর লকডাউনের আওতায় নেয়া হচ্ছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা জেলা কেরানা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা ও শহরতলী আলুকদিয়া ইউনিয়নে ৭ দিনের লকডাউনের আজ তৃতীয় দিন। দামুড়হুদা উপজেলার ১৪ দিনের লকডাউনের আজ ৮ম দিন।
চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ নতুন আরও ১৩৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট ল্যাবে প্রেরণ করেছে। এদিন তথা সোমবার নতুন শনাক্ত ৮২ জনের মধ্যে সদর উপজেলার ৩৫ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ৭ জন, দামুড়হগুদা উপজেলার ২০ জন ও জীবননগর উপজেলার ২০ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৫শ ৫৮ জন। ৩১জন সুস্থ নিয়ে মোট সুস্থ হলেন ২০১০ জন। মৃতের সংখ্যা ৮৫ জন। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গাতে ৭৮ জন, চুূয়াডাঙ্গার বাইরে মারা গেছেন ১১ জন। এছাড়াও করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন বেশ ক’জন। জেলায় বর্তমানে সক্রিয় রোগী ৬৩৮ জন। এর মধ্যে বাড়িতে ৫৮৪ জন। হাসপাতালে ৫০ জন, রেফার্ড রয়েছেন ৪ জন। সদর উপজেলায় সক্রিয় ২৩৩ জনের মধ্যে ২১৪ জন বাড়িতে, হাসপাতালে ১৮ জন, রেফার্ড রয়েছেন ১ জন। তিনি ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শারীরিক অবস্থা গুরুতর। আলমডাঙ্গা উপজেরায় সক্রিয় রোগী ৭৭ জনের মধ্যে ৬৮ জন নিজ নিজ বাড়িতে। হাসপাতালে ৮ জন। রেফার্ড রয়েছেন ১ জন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়ার রুমা নামের এক নারী ঢাকায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি মারা গেছেন। দামুড়হুদা উপজেলায় সক্রিয় রোগী ২১০ জনের মধ্যে ১৯২ জন নিজ নিজ বাড়িতে, ১৬ জন হাসপাতালে ও ২ জন রেফার্ড রয়েছেন। জীবননগর উপজেলায় সক্রিয় রোগী বেড়ে ১১৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ১১০ জন নিজ নিজ বাড়তে, ৮ জন হাসপাতালে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় যেসব রোগী শনাক্ত হয়েছে তাদের মধ্যে ফার্মপাড়ার ২ জন, দৌলাতদিয়াড়ের ১ জন, গুলশানপাড়ার একজন, পোস্ট অফিসপাড়ার ১ জন, নতুন বাজারপাড়ার একজন, বেলগাছির একজন, গাড়াবাড়িয়ার ১ জন, ডিঙ্গেদহের ২ জন, কোর্টপাড়ার একজন, মুসলিমপাড়ার একজন, সরোজগঞ্জের একজন, গোরস্তানপাড়ার একজন, দক্ষিণ হাসপাতালপাড়ার ২ জন, পীরপুরের একজন ও তেঘরির একজনসহ জেলা শহরের প্রায় প্রতিটি মহল্লাতেই রয়েছেন করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগী রয়েছে। গত রোববার ভোর ৬টা থেকে সর্বাত্মক কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার ছিলো অনেকটাই ঢিলে ঢালা। শহরে অসংখ্য অটো বা ইজিবাইক যেমন চলেছে, তেমনই শহরে বহু নারী পুরুষকে সড়কে চলাচল করতে দেখা গেছে। এরই মাঝে গতকাল সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ কমিটির জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় চলমান লকডাউন কঠোরাভাবে পালনে সকলকে বাধ্য করতে পুলিশি তৎপরতা জোরদার করার অনুরোধ জানানো হয়। একই সাথে সকাল বিকেল ও রাতে একাধীক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেনের নেতেৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত কাঁচাবাজারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দোকান ছাড়া দিন রাত সব সময় সকল প্রকারের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে খাবারের দোকান বা হোটেলে বসে খাবার খাওয়ানোর সুুযোগ নেই। পার্সেল এবং বাড়ি সরবরাহের জন্য খাবার প্রস্তুত করা যাবে। ওষুধের দোকান ও জরুরী প্রয়োজনীয় ছাড়া কোন কিছুই চলবে না। দূরপাল্লার কোচগুলোও শহরের মধ্যে কোথাও যাত্রী ওঠানো নামানো করবে না। শুধু মাত্র পৌর টার্মিনালে থামবে। ওখানেই যাত্রী ওঠানামা করবে। যদিও চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকা ও আলুকদিয়া ইউনিয়নে ৭ দিনের লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে নির্দেশনা খুব একটা মানতে দেখা যায়নি। তবে শপিং মল, অধিকাংশ চা দোকান বন্ধ রাখতে দেখা গেছে। দামুড়হুদা উপজেলায় বর্তমানে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২১০। এর মধ্যে ১৯২ জন নিজ নিজ বাড়িতে, ৮ জন হাসপাতালে একজন রেফার্ড রয়েছেন। নতুন শনাক্ত হয়েছে ২০ জন। লকডাউনের পর সংক্রমণের হার কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। এ উপজেলায় ১৪ দিনের লকডাউনের গতকাল ছিলো ৭ম দিন। লকডাউন মানতে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের জোর তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়েছে। অধিকাংশকেই স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলাচল করতে দেখা গেছে। ভারত সীমান্তবর্তী অপর উপজেলা জীবননগরে সংক্রমণের হার বেড়েছে। এ উপজেলায় বর্তমানে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১১৮ জন। ১১০ জন নিজ নিজ বাড়িতে। ৮ জন হাসপাতালে। এ উপজেলায় সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় আগামী কাল বুধবার ভোর ৬টা থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন আজ মঙ্গলবার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে। তাতে জানানো হবে বিস্তারিত। জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছেন, জীবননগরে করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল সোমবার পাপ্পু বিশ্বাস (৩৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বাড়িতে স্বাসকষ্ট শুরু হলে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথিমধ্যে বেলা ৩ টার সময় তার মৃত্যু হয়। মৃত পাপ্পু বিশ্বাস (৩৫) জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের হরিহরনগর গ্রামের আয়ুব আলী বিশ্বাসের ছেলে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, পাপ্পু বিশ্বাস গত ৪-৫ দিন ধরে জ্বর, সর্দি, কাশিতে ভুগছিলেন। গতকাল সোমবার বেলা ১ টার দিকে হঠাৎ করে পাপ্পুর খুব স্বাসকষ্ট শুরু হয়। এসময় পরিবারের সদস্যরা পাপ্পুকে মাইক্রোবাসযোগে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। বেলা ৩ টার দিকে পথিমধ্যে পাপ্পুর মৃত্যু হয়। আলমডাঙ্গা উপজেলায় সক্রিয় রোগীর সংখ্যা জনসংখ্যা অনুপাতে এখনও কিছুটা কম। ফলে জেলার ৪টি উপজেলার মধ্যে আলমডাঙ্গা উপজেলা এখন পর্যন্ত কঠোর লকডাউনের বাইরে রয়েছে। এ উপজেলায় বর্তমাানে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৭৭ জন। কোন ব্যাক্তি জরুরী ত্রাণ বা চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন হলে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করা যেতে পারে।
এদিকে রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে ২৪ হাজার ৫৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪ হাজার ৬শ ৩৬ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৮শ ২৭ জন। মারা গেছেন ৭৮ জন। এ নিয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েেেছ ১৩ হাজার ৬শ ২৬ জন।