চুয়াডাঙ্গায় আরও একজনের শরীরে করোনা:  শতাধিক বাড়ি লকডাউন

তথ্য গোপন করে স্বাভাবিক চলাফেরা করেছেন বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর

মাথাভাঙ্গা অনলাইন: চুয়াডাঙ্গার বেগমপুর গ্রামে এক ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন ডা: এএসএম মারুফ হাসান। আক্রান্ত ওই ব্যক্তি তথ্য গোপন করে গত তিনদিন নিজ গ্রামে স্বাভাবিক চলাফেরা করেছেন বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর। সোমবার (২০শে এপ্রিল) রাতে বিষয়টি জানাজানি হলে গোটা জেলা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। আক্রান্তের তথ্য গোপন করে গ্রামটিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলায় পরিবারের সদস্যদের বিচারের দাবি তোলেন অনেকে। যদিও আক্রান্ত ব্যক্তির ছেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় তার বাবা করোনা আক্রান্তের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন সোমবার বিকালেই আইইডিসিআর থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে বিষয়টি। ফেরেন। আজ মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) তাকেসহ পরিবারের আরো দুইসদস্যকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়িসহ গ্রামের শতাধিক বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিভিল সার্জনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদেকুর রহমান ও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামিম কবীর জানান, সোমবার (২০ এপ্রিল) বিকালে তারা গোপন সংবাদে জানতে পারেন চুয়াডাঙ্গা সদরের বেগমপুর গ্রামের বগুলা পাড়ার এই বৃদ্ধ গত ১৬ এপ্রিল ঢাকার কিডনি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাতে যান। এসময়  তার শরীরে করোনা উপসর্গ বুঝতে পেরে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক তার শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর এ পাঠান । এরপর আইইডিসিআর ১৮ এপ্রিল  তার রিপোর্ট পজেটিভ বলে ঘোষণা করে।

এ রিপোর্ট পাওয়ার পর বৃদ্ধকে ঢাকার মুগদা হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিন্তু তিনি মুগদা হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে গোপনে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে ১৮ তারিখেই নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। এসময় তার রোগের কথা গোপন রেখে এলাকায় ঘোরাফেরা করেন । ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হয়।

এ খবর পেয়ে সোমবার রাতেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার  আক্রান্ত বৃদ্ধ’র বাড়িতে যান এবং তাকেসহ তার পরিবারের কাউকে বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর  তার বাড়িসহ ওই পাড়ার প্রায় ১শ’ বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করে পুলিশি পাহারা রাখা হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেন জানান, বেগমপুর গ্রামের ওই ব্যক্তি বেশ কিছুদিন ধরে কিডনি রোগে আক্রান্ত। নিজ বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পরিবারের সদস্যরা গত ৬ই এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরিস্থিতির অবনতি হলে পরিবারের সদস্যরা ১৩ই এপ্রিল ঢাকার কিডনি হাসপাতালে ভর্তি করান।

আক্রান্ত ব্যক্তির ছেলে (একজন চিকিৎসক) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে জানিয়েছেন, ঢাকাতে কিডনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় বাবা ঠান্ডা, সর্দি ও জ্বরে আক্রান্ত হন। করোনা শনাক্তের জন্য অনেক চেষ্টার পর ১৫ই এপ্রিল ঢাকার আইইডিসিআরে তার বাবার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বাবা কিছুটা সুস্থ হলে দুই দিন পর (১৮ই এপ্রিল) আমরা নিজ গ্রামে ফিরে আসি।

ওই চিকিৎসক ছেলের দাবি সোমবার (২০শে এপ্রিল) বিকালে ঢাকার আইইডিসিআর থেকে ফোন করে আমার বাবা করোনা পজেটিভ জানানো হয়। ফেসবুক বার্তায় তিনি উত্তেজিত গ্রামবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, ঢাকা থেকে আসার পর তার বাবাকে তারা নিজ বাড়িতেই রেখেছিলেন। কঠিন সংকটে সকলকে সহমর্মিতা নিয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোরও আহ্বান জানান তিনি।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, গোটা বিষয়টি আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবার গোপন করেছেন। গত তিনদিন ধরে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজ গ্রামে সাধারণ মানুষজনের সঙ্গে অবাধে মিশেছেন, চলাফেরা করেছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে জনরোষ এড়াতে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসক ছেলে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে ক্ষমা চান।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর রাতেই সিভিল সার্জনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সাথে ওই এলাকা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

সিভিল সার্জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি বিশেষজ্ঞ টিমকে আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। তারা সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নিবেন। যদি আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ থাকেন তাহলে তাকে নিজ বাড়িতেই প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করে চিকিৎসা দেওয়া হবে। আর বেশি অসুস্থ হলে তাকে ঢাকাতে রেফার্ড করা হবে।

উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গাতে গত ১৯শে মার্চ ইতালি ফেরত এক যুবক প্রথমবারের মত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ১৫ দিন চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে বাড়িতে

 

 

Comments (0)
Add Comment