চেতনানাশক পান করিয়ে আয়নাকে গলাকেটে হত্যা করে পরকীয়া প্রেমিক মামুন
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার যাদবপুরে প্রবাসীর স্ত্রী হত্যাকা-ের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছে পুলিশ। কুয়েত প্রবাসী হাবিবুর রহমান হাবিলের বাড়ি ফেরাকে কেন্দ্র করে মনমালিন্যের জের ধরে চেতনানাশক পান করিয়ে তার স্ত্রী আয়না খাতুনকে গলাকেটে হত্যা করে পরকীয়া প্রেমিক মামুন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক জানান, কুয়েত প্রবাসী হাবিবুর রহমান হাবিলের বাড়ি ফেরাকে কেন্দ্র করে জেসমিন খাতুন ওরফে আয়নার সাথে মনমালিন্যের সৃষ্টি হয় পরকীয়া প্রেমিক মামুনের। ভাগ্নে রাব্বিকে শরবতে চেতনানাশক মিশিয়ে আয়না খাতুনকে পান করাতে বলে মামুন। রাব্বি ঘটনার দিন সন্ধ্যায় শরবতের সাথে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে আয়না খাতুনকে পান করায়। রাতে আয়না খাতুন অচেতন হলে ছাদের ওপর দিয়ে তার ঘরে ঢোকে মামুন। পরে ঘরের ড্রেসিং টেবিলের ওপরে থাকা একটি ধারালো ছুরি দিয়ে আয়না খাতুনকে গলাকেটে হত্যা করে মামুন।
ঘটনার দিন রাতে বাদী হয়ে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বড় ভাই আব্দুর রউফ। পরে মামলার প্রধান অভিযুক্ত মামুন হোসেনসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন যাদবপুর গ্রামের মামুন হোসেন (২৭) ও আব্দুর রহমানের ছেলে রাব্বি হাসান (১৬)।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, আয়নার স্বামী কুয়েত প্রবাসী হওয়ার সুবাদে তার সাথে প্রতিবেশী যুবক মামুনের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্কের দাবিতে মামুন আয়নাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। বিয়েতে আয়না খাতুন অস্বীকৃতি জানালে তাদের মধ্যে বিবাদ তৈরি হয়। এরই মধ্যে প্রবাসী স্বামী হাবিবুর রহমান হাবিলের দেশে ফেরার খবরে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে মামুন। এরই এক পর্যায়ে চালায় হত্যাকা-।
তিনি আরও বলেন, আয়না খাতুনের মরদেহ বিবস্ত্র অবস্থায় ঘরে পড়ে ছিলো। এ থেকে আমাদের সন্দেহ-ওই নারীকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হতে পারে। যদিও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি। তাই এখনই এ বিষয়টি নিশ্চিত নয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঘটনার পর থেকেই মাঠে নামে পুলিশ। একদিনের মধ্যেই হত্যার রহস্য অনেকটা উদঘাটন করা হয়েছে। এ হত্যাকা-ে ব্যবহৃত বেশ কিছু আলামতও জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যায় ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি, চেতনানাশক ওষুধ মেশানো পানির গ্লাস, রক্তমাখা কাপড়, চারটি মোবাইলফোন, একটি ট্যাব, ঘাতকের স্যান্ডেল ও লুঙ্গি জব্দ করা হয়েছে। ছুরিটি কুয়েত থেকে সখের বসে কিনে আনেন হাবিবুর। আসামিদের গতকালই আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ সেপ্টেম্বর রাত ২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নতুন যাবদপুর গ্রামে পরকীয়া সম্পর্কের জের ধরে কুয়েত প্রবাসীর স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় সন্দেহভাজন তিন জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে বাদী হয়ে বেশ কয়েক জনকে অজ্ঞাত আসামি করে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত আয়না খাতুনের বড় ভাই আব্দুর রউফ। পরে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় মামুন ও রাব্বিকে।