জহির রায়হান সোহাগ: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর ও আলমডাঙ্গা পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন আজ। জীবননগর পৌরসভায় ব্যালট পেপারে ও আলমডাঙ্গা পৌরসভায় ইলেকট্রনিক্স ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হবে। ভোটগ্রহণ শুরু হবে সকাল ৮টা থেকে। বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মাঠে কাজ করবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। আলমডাঙ্গায় নির্বাচনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করবে বিজিবির একটি এপিসি টিম।
এদিকে, গতকাল শনিবার বিকেল ৩টা থেকে নির্বাচনে ভোটের নির্বাচনী সামগ্রী বিতরণ করা হয়। আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও জীবননগর উপজেলা চত্বরে স্ব স্ব কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে এসব নির্বাচনী সামগ্রী তুলে দেয়া হয়। পুলিশ ও আনসার সদস্যদের পাহারায় এসব নির্বাচন সামগ্রী কেন্দ্রে কেন্দ্রে নিয়ে যান তারা।
জীবননগরে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। জীবননগর পৌরসভায় ১০টি কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২০ হাজার ৮২৭ জন। এরমধ্যে পরুষ ১০ হাজার ১৩৩ জন এবং মহিলা ১০ হাজার ৬৯৩ জন। পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের সংখ্যা ৫৬০ জন বেশি। জীবননগর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রফিকুল ইসলাম (নৌকা), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শাহাজাহান কবীর (ধানের শীষ) এবং ইসলামী আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী খোকন মিয়া (হাতপাখা) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। এছাড়া সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৩ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৩টি সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলর পদে মোট ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে সংরক্ষিত ১, ২ ও ৩নং আসনে ২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পেয়ারা বেগম (চশমা) ও বর্তমান কাউন্সিলর মাহফুজা পারভীন বিউটি (আনারস)। ৪, ৫ ও ৬নং সংরক্ষিত আসনে ৪জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কাত্যায়নী রানী ভক্ত (টেলিফোন), খালেদা আলম (আনারস), বর্তমান কাউন্সিলর পরিছন বেগম (চশমা), ও রিনা খাতুন (জবাফুল)। ৭, ৮ ও ৯নং সংরক্ষিত আসনে ৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর রিজিয়া বেগম (চশমা), সাবেক কাউন্সিলর রেখা খাতুন (টেলিফোন) ও শাহানারা খাতুন (আনারস) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৮ জন। এর মধ্যে ১ নং ওয়ার্ডে ৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর আপিল মাহমুদ (পাঞ্জাবি), সাবেক কাউন্সিলর আপেল মাহমুদ (পানির বোতল), ও রেজাউল বিশ^াস (উটপাখি)। ২নং ওয়ার্ডে ২জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর সাইদুর রহমান (পানির বোতল) ও সাবেক কাউন্সিলর শেখ জয়নাল আবেদীন (ডালিম)। ৩নং ওয়ার্ডে ৮জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর আতিয়ার রহমান (উটপাখি), আশাদুল ইসলাম (ডালিম), ইলিয়াস হোসেন (ব্রিজ), ইয়াদুল ইসলাম (পানির বোতল), কামরুজ্জামান খোকা (গাজর), মো. খোকন (টেবিল ল্যাম্প), রফিকুল ইসলাম (ব্ল্যাকবোর্ড) ও শাহ জামাল উদ্দীন (পাঞ্জাবি)। ৪নং ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছেন ৫জন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর আব্দুর রশিদ (পাঞ্জাবি), কামরুজ্জামান বিদ্যুত (পানির বোতল), কামাল উদ্দীন (ডালিম), বিল্লাল হোসেন (উটপাখি) ও বর্তমান কাউন্সিলর সোয়েব আহাম্মদ অঞ্জন (টেবিল ল্যাম্প)। ৫নং ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩জন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর খন্দকার আলী আজম (উটপাখি), আনারুল ইসলাম (টেবিল ল্যাম্প) ও জামাল হোসেন খোকন (পানির বোতল)। ৬নং ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হয়েছেন ৫জন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর কাজী নাসির ইকবাল ঠা-ু (উটপাখি), বর্তমান কাউন্সিলর আবুল কাশেম (ডালিম), আল মামুন রনি (পানির বোতল), মুরাদ হোসেন (টেবিল ল্যাম্প) ও সাজু আহাম্মদ (পাঞ্জাবি)। ৭নং ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ৫জন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আক্তারুজ্জামান (পানির বোতল), বর্তমান কাউন্সিলর ওয়াসিম রাজা (উটপাখি) ও রবিউল ইসলাম রবিন (টেবিল ল্যাম্প)। ৮নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন ৩ জন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আল মামুন (পানির বোতল), আশরাফ হোসেন (ডালিম) ও শহিদুল ইসলাম (উটপাখি) এবং ৯নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন ৬ জন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর আফতাব উদ্দীন (উটপাখি), আসাদুল হক (পাঞ্জাবি), চাঁন আলী বিশ^াস (ব্ল্যাকবোর্ড), জহুরুল ইসলাম (ডালিম), মতিয়ার রহমান (টেবিল ল্যাম্প) ও শুকুর আলী (পানির বোতল) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
জীবননগর পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মুনিম লিংকন জানান, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্বাচনের মাঠে ৯জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ১ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ২ প্লাটুন বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যের একাধিক টিম কাজ করবে।
এদিকে, আলামডাঙ্গা পৌরসভায় ইলেকট্রনিক্স ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। আলমডাঙ্গা পৌরসভার ১৫টি ভোট কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২৬ হাজার ১৩৯ জন। এর মধ্যে মহিলা ১৩ হাজার ৫৫৮ জন ও পুরুষ ১২ হাজার ৫৮১ জন। নির্বাচনে মেয়র পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তিনবারের নির্বাচিত মেয়র হাসান কাদির গনু নৌকা প্রতীক, বিএনপির মনোনীত সাবেক মেয়র জেলা বিএনপির নির্বাহী সদস্য মীর মহিউদ্দিন ধানের শীষ প্রতীক এবং স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জেলা জাসদের (ইনু) সভাপতি এম সবেদ আলী মোবাইল প্রতীকে নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১২ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩জন। তাদের মধ্যে কল্পনা খাতুন (চশমা), রুমা খাতুন (জবা ফুল) ও শিপ্রা বিশ্বাস (আনারস), ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪ জন। তাদের মধ্যে রাবেয়া খাতুন (আনারস), রেখা খাতুন (জবা ফুল), সুফিয়া খাতুন (চশমা) ও আয়েশা সিদ্দিকা (বলপেন) ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থিতা করছেন ৫জন। তাদের মধ্যে নুরজাহান খাতুন (টেলিফোন), রীতা খাতুন (জবা ফুল), রসিদা খাতুন (দ্বিতল বাস), আরজিনা খাতুন (আনারস) ও মনোয়ারা খাতুন (চশমা) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৬ প্রার্থী। ১নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫ প্রার্থীর মধ্যে আলাল উদ্দিন (পানির বোতল), মাসুদ রানা তুহিন (উটপাখি), শরীফুল ইসলাম (টেবিল ল্যাম্প), নাহিদ হাসান তমাল (পাঞ্জাবি) ও মিকাইল হোসেন (ডালিম)। ২নং ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে দুজন প্রার্থীর মধ্যে কাজী আলী আজগর সাচ্চু (উটপাখি) ও খন্দকার মজিবুল ইসলাম (পানির বোতল)। ৩নং ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে তিন প্রার্থীর মধ্যে জহুরুল ইসলাম স্বপন (টেবিল ল্যাম্প), দীনেশ কুমার বিশ^াস (উটপাখি) ও নওশের আলী (পানির বোতল)। ৪নং ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রার্থিতা করছেন ৯জন। তার মধ্যে সদর উদ্দিন ভোলা (ডালিম), শাহীন রেজা (টেবিল ল্যাম্প), আকতারুজ্জামান (পাঞ্জাবি), ইলিয়াস হোসেন (স্ক্রু ড্রাইভার), আলম হোসেন (উটপাখি), কাজী হাবিবুর রহমান (ফাইল কেবিনেট), পরিমল কুমার ঘোষ কালু (পানির বোতল), বিমল কুমার বিশ^াস (ব্রিজ) জয়নাল আবেদীন (ব্ল্যাকবোর্ড)। ৫নং ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪ প্রার্থীর মধ্যে আব্দুল গাফফার (উটপাখি), সিরাজুল ইসলাম (টেবিল ল্যাম্প), শহিদুল ইসলাম (পানির বোতল) ও মশিউর রহমান (ডালিম)। ৬নং ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪ প্রার্থীর মধ্যে রেজাউল হক তবা (উটপাখি), ডালিম হোসেন (ডালিম), আবুল কাশেম (টেবিল ল্যাম্প) ও লালন আলী (পানির বোতল)। ৭নং ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪ প্রার্থীর মধ্যে ফারুক হোসেন (টেবিল ল্যাম্প), বাপ্পি (উটপাখি), শামীম আশরাফ (পানির বোতল) ও আসাদুল হক (ডালিম)। ৮নং ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩ প্রার্থীর মধ্যে জাহিদুল ইসলাম (উটপাখি), দেলোয়ার মোল্লা (ডালিম) ও আশরাফুল হোসেন (পানির বোতল)। ৯নং দুই প্রার্থীর মধ্যে মামুন অর রশিদ হাসান (টেবিল ল্যাম্প) ও সাইফুল মুন্সি (উটপাখি) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আহমেদ জানান, আলমডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ১জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ২ প্লাটুন বিজিবি, বিজিবির একটি এপিসি টিম, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যের একাধিক টিম কাজ করবে।