গুণগতমান ভালো না হওয়ায় মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃৃপক্ষ
নজরুল ইসলাম: দ্রুততম সময়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীদের হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে পৌঁছুনো এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সদর উপজেলার পক্ষ থেকে ৭ ইউনিয়নে দেয়া হয়েছিলো পল্লী অ্যাম্বুলেন্স। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিম্নমানের অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করায় সবগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে পরিষদের আঙিনায় আঙিনায়। ফলে অ্যাম্বুলেন্স কেনা প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টাকা জলে পড়েছে বলে সচেতনমহল মনে করছে। প্রতিদিনই নষ্ট হওয়ার কারণে অতিরিক্ত ব্যয়ভার বেড়ে যাওয়ার ফলে পরিষদের পক্ষ থেকে আর মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে রোগী বহণ করার পল্লী অ্যাম্বুলেন্সগুলো নিজেই আজ রোগী হয়ে গেছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সাত ইউনিয়নে রয়েছে ১৭০টি গ্রাম। এসব গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ইউনিয়নে আছে একটি করে কচি কলাপাতা রঙের পল্লী অ্যাম্বুলেন্স। তাতে ওই ইউনিয়নের নাম লেখা আছে অ্যাম্বুলেন্সের গায়ে। অ্যাম্বুলেন্সগুলো নিজের ইউনিয়ন এলাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করে। তবে রোগী নিয়ে ইউনিয়নের বাইরের হাসপাতালে, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে পারবে। এমনকি রোগীর প্রয়োজনে জেলার বাইরেও যেতে পারবে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে তৎকালীন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরিকল্পনায় পল্লী অ্যাম্বুলেন্সের প্রথম যাত্রা শুরু হয়। সদর উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের ভূমি হস্তান্তর কর এক শতাংশ টাকায় ইজিবাইকের মতো ব্যাটারিচালিত সাতটি পল্লী অ্যাম্বুলেন্স রাজশাহী থেকে কিনে আনে উপজেলা প্রশাসন। প্রতিটি অ্যাম্বুলেন্স ক্রয় বাবদ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নেয়া হয় ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা করে। তৎকালীন জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দিন আহমেদ অ্যাম্বুলেন্সগুলো সাত ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের হাতে হস্তান্তর করেন। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা স্ব স্ব ইউনিয়নের আগ্রহী চালকদের হাতে তুলে দেন। চকচকা রঙচঙ দেখে চালকেরা আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পল্লী অঞ্চলের কাঁচাপাকা রাস্তায় চলতে গিয়ে কেনার কয়েক দিনের মাথায় কারিগরের সন্ধান করতে থাকে চালকেরা। প্রায় প্রতিদিনই মেরামত খরচ বেড়ে যাওয়া এবং চালকের দুর্ভোগের কারণে চালক যেমন অ্যাম্বুলেন্স চালানো ছেড়ে দেন; তেমনি মেরামত খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিয়ন কর্তৃৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্সগুলো অকেজো অবস্থায় ইউনিয়ন আঙিনায় ফেলে রেখে দিয়েছে।
সূত্র জানায়, অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া রোগী বহনের অন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকায়, গ্রাম থেকে অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে দুর্ভোগে পড়তে হয় রোগী ও স্বজনদের। হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে খবর দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যাওয়া অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়ে। কম খরচে গ্রামের অসুস্থ রোগীদের হাসপাতাল কিংবা নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশে এ উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই সাথে পল্লী অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের কিছু নীতিমালা করে দেয়া হয়। ২৪ ঘণ্টা পল্লী অ্যাম্বুলেন্স রোগীর সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের গ্রামের কোনো মানুষ ফোন করলেই অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছে যাবে রোগীর কাছে। ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের মতো সাধারণ ভাড়া নিয়ে রোগীকে পৌঁছে দিতে হবে হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা ক্লিনিকে। চালকের মোবাইলফোনে কল করলেই অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছে যাবে। চালকের নম্বর যদি না থাকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের কাছেও ফোন করে অ্যাম্বুলেন্সের সেবা নেয়া যাবে। গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে মহতি উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও অ্যাম্বুলেন্সের গুণগতমান না হওয়ায় তা আজ কোনোই কাজে আসছে না। বিধায় ৭ ইউনিয়নে ইজিবাইকের আদলে কেনা অ্যাম্বুলেন্সের ১১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা জলে গেছে বলে সচেমতন মহল মনে করছে। এ ব্যাপারে কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ওই যে টাকা দিয়ে পল্লী অ্যাম্বুলেন্স কেনা হয়ে ছিলো, তার সাথে আর কিছু টাকা যোগ করলে মাইক্রো অ্যাম্বুলেন্স হয়ে যেতো।