স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় চলন্ত মাইক্রো থেকে ঝাপিয়ে বোরহান উদ্দিন নামে এক সদ্য বিবাহিত যুবক আত্মহত্যা করেছেন। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার কুলপালা নামকস্থানে এ ঘটনা ঘটে। পরে তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে এর কিছুক্ষণ পর কর্তব্যরত চিকিৎসক বোরহান উদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত বোরহান উদ্দিন (২১) মেহেরপুর সদর উপজেলার নবগঠিত বারাদী ইউনিয়নের নতুন দরবেশপুর গ্রামের কাঠব্যবসায়ী মিয়াজানের ছেলে ও মেহেরপুর সরকারি কলেজের এইচএসসি পরিক্ষার্থী।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের জাহাঙ্গীরের মেয়ে পপি খাতুনের সাথে বোরহান উদ্দিনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত শনিবার ২৭ নভেম্বর পরিবারের অগোচরে তারা বিয়ে করে। এরপর সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে মেহেরপুর সদর জেলার বোরহান উদ্দিনের চাচাতো বোনের বাসায় গিয়ে ওঠে। এদিকে রাতে বাড়িতে না আসায় পরিবারের সদস্যরা বোরহানকে আত্মীয়স্বজনদের নিকট খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। গতকাল রোববার রাতে চাচাতো বোনের বাড়ি মেহেরপুর সদর উপজেলার সিংহাটি গ্রামে অবস্থান করছে বলে জানতে পাই বোরহানের বাবা। রাত ১০ টার দিকে ওই বাড়িতে পৌঁছুলে তাদের বিবাহের বিষয়টি জানতে পারে বোরহানের পরিবারের সদস্যরা।
নিহত বোরহানের মামাতো ভাই আলামিন দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, গতকাল রাতে বোরহানের বাবা আমাকে মুঠোফোনে জানায় ছেলেকে পাওয়া গেছে, তাকে বাড়িতে নিয়ে আসতে হবে বলে আমাকে তাদের বাড়িতে আসতে বলে। পরে ওই বাড়িতে পৌঁছুলে বোরহানের বাবা তাদের বিয়ের বিষয়টি মেনে নেয়নি। সবাই বোঝানোর পর ছেলের পরিবার মেনে নেয় এবং বোরহানকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য বলা হলে তার স্ত্রীকে সাথে না নিয়ে যাবে বলে জানায়। পরে রাতেই একটি মাইক্রোযোগে নববিবাহিতা স্ত্রী পপি খাতুন, বোরহান, তার বাবা ও তার এক মামাতো ভাই নতুন দরবেশপুর গ্রামের উদ্দেশ্য রওনা হয়। যাওয়ার পথে কুলপালা নামকস্থানে পৌঁছুলে চলন্ত মাইক্রোবাসের জানালা থেকে লাফ দেয় বোরহান। এ সময় সামনে থেকে আসা ট্রাকের পেছনের চাকায় পিষ্ট হয়। পরে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও বলেন, পপি খাতুনের এর আগে দু’বার বিয়ে হয়েছিল। এজন্য ছেলের বাবা প্রথমে মেনে নিতে না পারলেও পরে সবার অনুরোধে মেনে নেয়। গাড়ির মধ্যে এই নিয়ে ছেলেকে কটুক্তি করায় মান অভিমানে আত্মহত্যা করেছে বোরহান উদ্দিন।
অবশ্য বোরহানের অপর এক আত্মীয় জানিয়েছে, বোরহান ও পপিকে সাথে নিয়ে দামুড়হুদা উপজেলার টেইপুর গ্রামে যাচ্ছিলো। সেখানে বোরহানের ফুফুর বাড়ি।
এদিকে সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আহত অবস্থায় বোরহানকে হাসপাতালে নেয়ার পর তারা চিকিৎসকে জানায়, ব্যাডমিন্টন খেলার সময় পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। পরে সন্দেহ হলে হাসপাতালের দায়িত্বরতদের চাপের মুখে চলন্ত মাইক্রো থেকে ঝাপিয়ে আত্মহত্যার বিষয়টি বেরিয়ে আসে।
এদিকে, দুই পরিবার তাদের বিয়ের বিষয়টি মেনে নেয়ার পরও শুধুমাত্র পিতার কটুক্তির পর এই আত্মহত্যার ঘটনা রহস্যজনক মনে করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। ঠিক পরিবারের নিকট থেকেও আত্মহত্যার স্পষ্ট কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পুলিশের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার রহস্য উদঘাটন বলে ধারণা সামাজিক মহলের। এ বিষয়ে জানতে নিহত বোরহানের বাবা মিয়াজান ও সদ্য বিবাহিত পপি খাতুনের মুঠোফোনটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া যায়নি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সাজিদ হাসান দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, পরিবারের সদস্যরা প্রথমে জানায় ব্যাডমিন্টন খেলার সময় বোরহানের আঘাত লেগেছে। পরে আমাদের চাপাচাপি চলন্ত গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার বিষয়টি জানায়।
তিনি আরও বলেন, তার দুই পা ভেঙ্গে গেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হাসপাতালে আসার কিছুক্ষণ পর জরুরি বিভাগের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়োজিত পুলিশ লাইন্সের নায়েক বলয় বিশ্বাস নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে জানায়, সদ্য বিবাহিত স্ত্রী ও বোরহানকে নিয়ে মেহেরপুরে যাচ্ছিল। এসময় হঠাৎ মাইক্রোর জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে হাসপাতালে আসলে এর কিছুক্ষণ পর সে মারা যায়। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, আমি এখনো এ বিষয়টি কিছুই জানি না। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।