স্টাফ রিপোর্টার: ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্য অক্ষুণœ রেখে আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপনে সকল ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিদের প্রতি আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেছেন, কোরবানি দেয়া পশুর চামড়া জাতীয় সম্পদ। এ চামড়া বিক্রির টাকা সমাজেরই দুস্থ দরিদ্র্যদের মাঝে বিতরণ করা হয়। ফলে চামড়ার উপযুক্ত মূল্য পরিশোধ করা যেমন ব্যবসায়ীদের নৈতিক দায়িত্ব, তেমনই চামড়া যাতে কেটে বা পড়ে থেকে পঁচে নষ্ট না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিকভাবে সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিৎ। গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ঈদুল আজহা উদযাপনের প্রস্তুতিসভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান এবারের পবিত্র হজ্বব্রত পালনে চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশ থেকে যারা পবিত্র মক্কায় গেছেন তাদের সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করেন এবং সকলের পবিত্র হজ পালন মহান সৃষ্টিকর্তা কবুল করুন বলে ফরিয়াদ জানিয়ে দেশের ও দেশবাসীর কল্যাণে সকলের দোয়াও কামনা করেন। তিনি কোরবানির পশু কোরবানি দেয়ার পর বর্জ্য দ্রুত সময়ে অপসারণে পৌর প্রশাসনকে আন্তরিক হওয়ার পাশাপাশি কোরবানি দাতাদের দায়িত্বশালতার পরিচয় দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, কোরবানির বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলে পরিবেশ নষ্ট করলে তার ক্ষতিকর প্রভাব মহল্লাবাসীর ওপর পড়ে। রক্ত ড্রেনে না দিয়ে মাটিতে পুতে দেয়া ভাল। ড্রেনে দিলে মশার উপদ্রব বাড়ে। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে পশুহাটগুলোর দিকে উপজেলা প্রশাসনসহ পুলিশ প্রশাসনের বাড়তি নজরদারির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, একজন কৃষক বা খামারিকে একটি গরু কিম্বা ছাগল ভেড়া মোষ পালনে প্রচুর পরিশ্রম করার পাশাপাশি প্রচুর অর্থও ব্যয় করতে হয়। অনেক কৃষক, অনেক খামারির পালিত পশু বিক্রি করে অর্জিত টাকা নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন থাকে। কোন কারণে ওই স্বপ্ন যাতে ভেঙে না যায় তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। টাকার জাল নোট কারবারী ও অজ্ঞানপার্টি চক্রের উৎপাত তথা অপতৎরতা বন্ধে পুলিশের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কৃষি ব্যাংক এবারের ঈদ পশুহাটগুলোতে নগদ টাকা আদান প্রদানে বুথের ব্যবস্থা করেছে। প্রয়োজনে টাকা তোলা যাবে, পশু বিক্রির পর তাৎক্ষণিকভাবে টাকা রাখাও যাবে। আর পশুহাটে নেয়া এবং বিক্রিসহ আনার পথে যাতে কোন প্রকারের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকেও নজর রাখা প্রয়োজন। কোরবানি উপলক্ষে কৃষক পরিবারে ঘরে ঘরে পশু পালনের যে রেওয়াজ চালু হয়েছে তা দেশের জন্য খুবই ইতিবাচক। খামারে গরু ছাগল পালনের মধ্য দিয়ে দেশে মাংসের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। ফলে পশুপালনকারীদের প্রতি আমাদের সর্বাত্মক যত্মবান হওয়া প্রয়োজন। গরু ছাগল পালন করার মাধ্যমে লাভবান হলে সমাজে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতিসভায় জেলা পুলিশের তরফে ডিবি ওসি লুৎফুল কবীর উপস্থিত থেকে পুলিশি তৎপরতার বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য চিত্র তুলে ধরে স্থানীয় সচেতন মহলের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ জেলার পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় সর্বস্তরের সকলের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক সচেষ্ট। প্রস্তুতিসভায় বলা হয়, যেহেতু সকাল হওয়ার পর ৭টা সাড়ে ৭টা বাজতে বেশ সময় লাগে। তারপর আবার কোরবানি দেয়ার তোড়জোড় থাকে, সেহেতু সকাল ৭টা সাড়ে ৭টার মধ্যে ঈদের নামাজ সম্পন্ন করাই ভাল। যদিও এবারও ঈদগা ও মসজদি কমিটি স্থানীয়ভাবে নিজেদের সুবিধামত সময় নির্ধারণ করে নেবে। ঈদের আগে পরে আতশবাজি, পটকাবাজি যাতে না হয় সেদিকে পুলিশকে বাড়তি নজরদারি করতে হবে। ঈদের দিন ও আগে পরে উঠতি বয়সীদের মধ্যে চরম উশৃঙ্খলভাবে চলাচল করতে দেখা যায়। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সাপের মত করে মোটরসাইকেল চালিয়ে সে নিজেকে যেমন ফেলে মৃত্যু ঝুঁকিতে, তেমনই সড়ককে করে তোলে অনিরাপদ। এসব বন্ধে অভিভাবকদেরও আন্তরিক হতে হবে। সড়কে বৈধ অবৈধ যানে চেপে উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে নেচে বেড়ানোও উশৃঙ্খলতা। পদে পদে থাকে দুর্ঘটনায় বড়ধরণের ক্ষতির ঝুকি। ফলে এসব বন্ধ করতে হবে। ঈদ সবার জন্য আনন্দের করে তুলতে সকলকেই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। সভায় ডিডিএলজি শারমীন আক্তার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল হামীদ রেজা, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পৌরসভার সিইও শামীম ভূইয়া, সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এসএম ইস্রাফিল, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হাজি অ্যাড. সেলিম উদ্দীন খান, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন, চেম্বার প্রতিনিধি নাসির আহাদ জোয়ার্দ্দার, গোলাম মর্তুজা প্রমুখ উপস্থিত থেকে অভিমত ব্যক্ত করেন।