কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মরসুমের উদ্বোধন

চিনি কারখানা বাঁচিয়ে রাখতে আখচাষের কোনো বিকল্প নেই
দর্শনা অফিস: চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় কেরু অ্যান্ড কোম্পানির চিনিকলে চলতি মরসুমে আখমাড়াই এবারও সাদামাঠা ভাবেই শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে মাড়াই মরসুমের উদ্বোধন উপলক্ষে চিনিকলের কেইন কেরিয়ার প্রাঙ্গণে আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। পরে কেইন কেরিয়ারে আখ নিক্ষেপের মাধ্যমে চলতি মরসুম শুরু করা হয়। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সচিব চৌধুরী রুহুল আমিন কায়সারের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান শেখ শোয়েবুল আলম। প্রধান অেিতথির বক্তব্যে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান শেখ শোয়েবুল আলম বলেন, আখচাষিদের কথা ভেবেই সরকার এই প্রথম পরপর দুই মরসুমের আখের মূল্য এক সাথে বাড়িয়েছে। সেই সাথে দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রেখেছে চিনির মূল্য। চিনি কারখানার অন্যতম কাঁচামাল আখ। সেক্ষেত্রে চিনি কারখানা বাঁচিয়ে রাখতে আখচাষের কোনো বিকল্প নেই। যুগযুগ ধরে চাষিকূল আমাদের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে সমৃদ্ধ করেছে। তিনি বলেন, সব ঠিকঠাক চললে চলতি মরসুমে চিনিতে মোটা অঙ্কের লোকসান কমিয়ে আনতে পারবে প্রতিষ্ঠানটি। সরকার কৃষকের সকল সুবিধা নিশ্চিত করতে হাতে নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বস্তবায়ন করছে। তেমনিভাবে দেশের চিনি শিল্পকে বাঁচাতে হলে চাষি ভাইদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাকে এগিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে বেশি বেশি করে আখ চাষের মধ্য দিয়েই সম্ভব দেশের এ মূল্যবান সম্পদ চিনিশিল্পকে রক্ষা করা। মিলের সকল কর্মচারী-কর্মকর্তাকে নিষ্টা ও আন্তরিকতার সাথে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হতে হবে। শিল্প সমৃদ্ধশীল বাংলাদেশ গড়তে হবে আমাদেরই। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের পরিচালক (উৎপাদন ও প্রকৌশল) আতাউর রহমান খান, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মনজু, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা, চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আরএম ফয়জুর রহমান, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোকসানা মিতা। কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশারফ হোসেনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেন মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) আশরাফুল আলম ভূইয়া। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কেরুজ চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কারখানা) সুমন্ত কুমার, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ইউসুফ আলী, মহাব্যবস্থাপক (ডিস্টিলারী) রাজিবুল হাসান, কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজ, সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান, যুগ্ম-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক সভাপতি তৈয়ব আলী, হাফিজুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স, আখচাষি নেতা আ. হান্নান, আ. বারী প্রমুখ। পরে দোয়া মোনাজাত শেষে মিলের ডোঙ্গায় আখ ফেলে ২০২৩-২৪ আখ মাড়াই মরসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শেখ শোয়েবুল আলম। চলতি মরসুমে ৫৫ মাড়াই দিবসে ৬৫ হাজার টন আখ মাড়াই করে ৪ হাজার টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে চিনিকল কতৃপক্ষ। এ মরসুমে চিনিকল জোনে আখ রয়েছে ৩ হাজার ৮০২ একর জমিতে। এর মধ্যে চিনিকলের নিজস্ব এক হাজার ১৫৩ একর জমিতে আখ রয়েছে। চিনিকলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোশারফ হোসেন বলেন, চিনিকল এলাকায় আখের চাষ কম হয়েছে। এ জন্য এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেকে নেমে আসছে। তাই এবার তিন হাজার ৮১০ টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উদ্বোধনের সময় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী, বাংলাদেশ চিনিকল শ্রমিক ও কর্মচারী ফেডারেশনের নেতারা, আখচাষি ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন। চাষিদের দাবির প্রেক্ষিতে এ মরসুমে আখের মূল্য বাড়িয়েছে সরকার। এবার প্রতিমণ আখের মূল্য ২২০ টাকা করা হয়েছে। তবে চাষিরা বলছেন, চিনির মূল্য অনুযায়ী আশানুরূপ হারে আখের মূল্য বাড়েনি। আখের মূল্য আরও বাড়ানোর দাবি চাষিদের। বাংলাদেশ চিনিকল আখচাষি ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মো. ওমর আলী বলেন, চিনিকল কর্তৃপক্ষের কাছে আখচাষিদের এবারের দাবি আখের মূল্য সরাসরি নগদ টাকায় পরিশোধ করা। মোবাইল ব্যাংকিং শিওর ক্যাশ বা বিকাশে চাষিরা টাকা নেবে না। ঋণের সার, বীজ, কীটনাশক সঠিক সময়ে দিতে হবে এবং চাষিদের কোটায় পাওনা চিনি উত্তোলনের সময় বাড়াতে হবে।