বেগমপুর প্রতিনিধি: দর্শনা কেরুজ চিনিকলের আওতার ফুরশেদপুর কৃষি খামারের জমি লিজ নিয়ে এক বছরেও লিজের টাকা পরিশোধ করেনি লিজ গ্রহীতা উজলপুর গ্রামের আসালাম উদ্দিন। সাবলিজ নিয়ে আখ লাগিয়ে বিপাকে পড়েছেন কোটালী গ্রামের আখচাষি নস্কর মিয়া। লিজের টাকা আদায় করতে অনেকটায় বাধ্য হয়ে পুলিশি সহয়তায় আখ কর্তন করলেন কেরুজ কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, দর্শনা কেরুজ চিনিকলের আওতায় ফুরশেদপুর কৃষি খামারের বাহির বিভাগের ৭ দশমিক ৪০ একর জমি গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে লিজ নেন বেগমপুর ইউনিয়নের এরেঙ মেম্বারের ছেলে বিএনপি নেতা আসলাম উদ্দিন। একবছর অতিবাহিত হলেও আসলাম উদ্দিন ওই লিজের ২ লাখ ১৭ হাজার টাকা টাকা পরিশোধ করা থেকে বিরত থাকেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই জমি লিজের মেয়াদ শেষ হলেও টাকা জমা দেননি আসলাম। লিজের টাকা জমা দিতে কেরুজ কর্তৃপক্ষ ৮ বার নোটিশও করেন আসলামকে। তাতেও কর্ণপাত করেননি তিনি।
সূত্রজানায়, আসলাম উদ্দিন ওই জমি লিজ নিয়ে কোটালী গ্রামের খাজের আলীর ছেলে নস্কর আলীর নিটক সাবলিজ দেন। নস্কর আলী লিজের সমুদয় টাকা পরিশোধ করে আখ চাষ করেন। নস্কর টাকা পরিশোধ করলেও কেরুজ কর্তৃৃপক্ষের খাতায় টাকা জমা হয়নি। গত ২০ দিন আগে নস্কর তার রোপণকৃত আখ কর্তন করতে গেলে কর্তৃপক্ষ বাঁধা দেয়। কর্তনকৃত আখ জমিতেই পড়ে শুকাতে থাকে। চাষি নস্কর আলী অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবিঘা জমি ৭ হাজার টাকা করে লিজ নিয়ে আখ চাষ করি। মাঝ পথে এসে আমাকে কায়দায় ফেলে সাড়ে ১১ হাজার টাকা করে লিজ বাবদ আমার কাছ থেকে আদায় করে নেয় লিজ গ্রহীতা। জমি না নেয়ার কোনো উপায়ও ছিলো না। কারণ সে সময় লাগানো আখ অনেক বড় হয়ে গিয়েছিলো। এখন আখ কাটতে গিয়ে জানতে পারছি আমি টাকা শোধ করলেও লিজ গ্রহীতা চিনিকল কর্তৃপক্ষের টাকা শোধ করেননি। একদিকে চড়ামূল্যে লিজের টাকা আদায় অন্যদিকে জমিতে আখ শুকানো সবদিক থেকে আর্থিকভাবে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। জানতে পারলাম লিজের টাকা না পেয়ে গতকাল বুধবার সকালে আমার লাগানো আখ পুলিশের সহয়তায় কর্তন করেছে কেরুজ কর্তৃপক্ষ। লিজ গ্রহীতার কারণে আমি পাপের দায়ে ঠেকে গেছি। লিজ গ্রহীতা আসলাম উদ্দিন বলেন, আমি কোনো জমি সাবলিজ দেইনি। আমি আমার লিজ নেয়া জমির আখ কেটেছি।
একটি সূত্রজানায়, আসলাম উদ্দিনের লিজ নেয়া জমি হরিশপুর গ্রামের মৃত খোকাই ম-লের ছেলে শহিদুল ইসলাম দেখভাল করতেন। শহিদুল আসলামের পার্টনার এ কথা বলে নস্কর মিয়ার কাছ থেকে সমুদয় টাকা আদায় করে নিজ পকেটে ভরেন। যে টাকা আসলামের নিকট পৌঁছায় না। যার কারণে এ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। ফুরশেদপুর কৃষি খামারের ইনচার্জ মনিরুল ইসলাম বলেন, চিনিকল কর্তৃপক্ষ আসলামের নিকট জমি লিজ দিয়েছে। লিজের সময় শেষ হলেও কর্তৃপক্ষ টাকা বুঝে পায়নি। একবছর ধরে টাকার জন্য আসলামের পেছনে ঘুরছি। টাকার জন্য তাকে আটবার নোটিশও করা হয়েছে। কোনভাবেই কাজ হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপ-ব্যবস্থাপক (মিলস ফার্ম) হুমায়ুন কবির বলেন, এ জমি লিজ আমার সময়কার না। তারপরও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করা এবং প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষা করায় আমাদের কাজ। টাকা আদায় করতে সবরকম চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় আজকের এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। বেগমপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আসলাম উদ্দিন বলেন, চিনিকল কর্তৃপক্ষের আবেদনের কারণে সেখানে যাওয়া হয়। যাতে করে আখ কাটার সময় কোনো সহিংস ঘটনা না ঘটে। জমি লিজ দেয়া এবং টাকা আদায় করা নিয়ে পূর্বেও নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে চিনিকল কর্তৃপক্ষকে। তাই ভবিষ্যতে জমি লিজ দেয়ার বিষয়টি সতর্কতার সাথে না দেখলে আবারও জটিলতায় পড়তে হবে বলে চিনিকলের সাধারণ শ্রমিক ও কর্মচারীরা মনে করছেন।