হাসপাতালে শয্যাসংকট : চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ায় হু হু করে বাড়ছে করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ ঘণ্টায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত সেখানে ৪২২ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এদিকে নতুন ৫৮৯ নমুনা পরীক্ষা করে ১৭৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় করোনা শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। নতুন করে শনাক্ত হওয়া ১৭৬ জনের মধ্যে কুষ্টিয়া সদরের ৯৭জন, দৌলতপুরের ১৮জন, কুমারখালীর ১৭জন, ভেড়ামারার ৩৭জন, মিরপুরের তিনজন ও খোকসার চারজন রয়েছেন। এখন পর্যন্ত জেলায় ৭০ হাজার ২০৯ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য নেয়া হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে ৬৭ হাজার ২৮৩ জনের। মোট শনাক্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৬১ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ৩৭৯ জন। বর্তমানে কুষ্টিয়ায় সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৩৭১ জন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২৬৮জন ও হোম আইসোলেশনে আছেন ৩ হাজার ১০৩ জন। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এমএ মোমেন। তিনি বলেন, শয্যাসংকটের কারণে অতিরিক্ত রোগীরা হাসপাতালের মেঝে, করিডোর এবং বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীর ভিড়ে সেখানেও পা ফেলার জায়গা নেই। গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। তবে অক্সিজেনসহ পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকলেও জনবল ও জায়গার অভাব। এ জন্য চিকিৎসক, নার্স, আয়াসহ সংশ্লিষ্ট সবাই চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এমএ মোমেন বলেন, শনিবার দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিলেন ৪২২ জন। এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত রোগী ছিলেন ১৯২ জন ও করোনা সন্দেহ রোগী ছিলেন ১৩০ জন। তিনি বলেন, কুষ্টিয়ায় করোনা হাসপাতাল হওয়ার পর একসঙ্গে ৪২২ জন রোগী ভর্তি এই প্রথম। এর আগে ২০০ রোগীর কাছাকাছি ভর্তি হয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে যে পরিমাণ রোগী ভর্তি হচ্ছে, তা আগে কখনো হয়নি। এতো রোগীর চাপ সামলাতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা, অক্সিজেন সিলিন্ডার পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। কিন্তু আয়া, সুইপার, পিয়ন ও ফান্ডের অভাব রয়েছে। এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। রোগীর চাপ দেখে মনে হচ্ছে আরও শয্যা বা ইউনিট বাড়াতে হবে। চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যাও বাড়াতে হবে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) তাপস কুমার সরকার বলেন, অধিকাংশ রোগীকে অক্সিজেন দেয়ার দরকার হচ্ছে। রোগীর সংখ্যা বাড়ায় অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে যাচ্ছে। অনেকেই ৪০ থেকে ৭০ ভাগ অক্সিজেন স্যাচুরেশন নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। তাদের অবস্থা জটিল। তাদের কমপক্ষে এক সপ্তাহের জ্বর, ঠা-া ও কাশি রয়েছে। এ রকম বেশির ভাগ রোগীই আসছেন জটিল অবস্থা নিয়ে। আর অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাওয়ার পর যেসব রোগী আসছেন, তাদের বাঁচানো কঠিন হচ্ছে। এ জন্য আগে থেকেই চিকিৎসাসেবা নিতে হবে। মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। অসচেতনতার কারণে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।
শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, রোগীর ভিড়ে হাসপাতালের কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই। গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। অক্সিজেনসহ পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকলেও জনবল ও জায়গার অভাব রয়েছে। এজন্য চিকিৎসক, নার্স, আয়াসহ সংশ্লিষ্ট সবাই সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। জরুরি বিভাগের সামনে একটি ট্রাক থেকে কয়েকজন শ্রমিককে অক্সিজেন সিলিন্ডার নামাতে দেখা যায়। সিলিন্ডার নিয়ে তারা দ্বিতীয় তলায় ওঠে যান। সেখানে ভিড় ঠেলে কোনোরকমে একটি ওয়ার্ডে প্রবেশ করেন। সেখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসা চলছে। বাইরের কাউকে সেখানে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। সিঁড়ি থেকে ওয়ার্ডের প্রবেশমুখ পর্যন্ত শতাধিক মানুষ গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, করোনা এভাবে বাড়তে থাকলে কোনো সিস্টেমই কাজে আসবে না। তখন অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে যাবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যা ঘটেছে। এজন্য আমাদের সবার সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।
জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম বলেন, কঠোরভাবেই বিধিনিষেধ পরিপালন করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিনই জেলা-উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে।