আলমডাঙ্গা ব্যুরোঃ ৩৫ কোটি টাকা ব্যায়ে খননকৃত আলমডাঙ্গার ওসমানপুর গ্রামের নিচ দিয়ে প্রবাহিত কুমার নদ দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের অভিযোগ উঠেছে। ফলে নদীতে নামতে পারছেন না সাধারণ গ্রামবাসি। প্রশাসনের নিকট স্মারকলিপি দিয়েও সুরাহা মেলেনি। অবৈধভাবে নদী দখল করে মাছ চাষকে কেন্দ্র করে ক্রমেই ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসি।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভেতর দিয়ে বহমান কুমার নদ। এ কুমার নদের একটা অংশ চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলা ও কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত। এই স্থানে নদের এক পারে মিরপুর উপজেলার শুকচা বাজিতপুর গ্রাম ও অন্যপারে আলমডাঙ্গা উপজেলার ওসমানপুর গ্রাম। যদিও নদটি আলমডাঙ্গা উপজেলার সীমানার অংশে। তবুও ২ পারের গ্রামবাসির জন্য আবহমান ধরে উন্মুক্ত ছিল। এখানে উভয় গ্রামবাসি বোরো ধানের চারা দেন, পাট জাগ দেন, মাছ ধরেন স্বাধীনভাবে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে এই কুমার নদের খননকাজ শুরু হয়। ৩৫ কোটি টাকা ব্যায়ে আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার খননকাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এমতাবস্থায়, সরকারি অর্থে পূণর্খননকৃত কুমার নদের উপর নজর পড়ে মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পাগলা গ্রামের হামিদুল ইসলামের নেতৃত্বে কিছু ব্যক্তি। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বুনারঘাট থেকে পাগলা গ্রামের হাটের নীচ পর্যন্ত মোট ৫টি স্থানে বাঁশের বেড়া দিয়ে বাঁধ দিয়েছেন মাছ চাষের উদ্দেশ্যে। এ সময় অনেকে জানান, গত ১ মে ওসমানপুর গ্রাম বরাবর অবৈধভাবে বাঁধ দেওয়ার সময় বাঁধা দেন ওসমানপুর গ্রামবাসি। সে সময় হামিদুল ও তার লোকজন হামলা করেন।
অবৈধ বাঁধের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারি ওসমানপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, হামিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকান্ডের নানা অভিযোগ রয়েছে। মিরপুর উপজেলার একেবারে সীমান্তবর্তি এলাকায় তার রাজত্ব। সে কারণে প্রশাসনের দৃষ্টির আড়ালে থেকে যায় তার অধিকাংশ অপরাধ। তিনি জানান, বাঁধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় গত ২ মার্চ ওসমানপুর গ্রামের শিপন নামের এক যুবকের উপর গুলি বর্ষণ করা হয়। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় বেঁচে যান শিপন।
ওসমানপুর গ্রামের জালাল বিশ্বাস বলেন, গত কয়েক বছর ধরে হামিদুল ও তার লোকজন নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে। অথচ প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয় নি।
আন্দোলনকারিদের রুবেল মাস্টার, হানেফ মন্ডল ও বকুল হোসেনসহ অনেকে জানান, নদী আবহমানকালের মত উন্মুক্ত থাক। ধনি-গরীব নির্বিশেষে সকলে ব্যবহার করুক। কোন স্বার্থান্নেষীমহল ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থে তা দখল করে ব্যবসা করবেন আর সকলে প্রকৃতির এই সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবে তা হতে পারে না। সে কারণে অবৈধ দখলদারদের কালথাবা থেকে নদীকে মুক্ত করতে আন্দোলন করছেন গ্রামবাসি। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত ১ মে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবর স্মারকলিপি প্রেরণ করা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে দুটটি তদন্ত শেষ হয়েছে। কিন্তু ফলোদয় হয়নি কিছুই।
আশাদুল হক বলেন, স্মারকলিপি প্রদানের প্রেক্ষিতে দুটি তদন্তের পরও নদী থেকে অবৈধ বাঁধ অপসারণ করা হয়নি। সে কারনে এলাকাবাসি গত ৮ রমজানের দিন মানববন্ধনের আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু লকডাউনের ভেতর মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করতে প্রশাসন নিষেধ করে। সে জন্য মানববন্ধন করা সম্ভব হয়নি।
আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলী জানান, ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছি। যেহেতু দুই জেলার সীমান্তবর্তি স্থানের ঘটনা, সে কারণে দুই জেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঈদের পরে বৈঠকের কথা ছিল। বর্তমান পরিস্থিতির কারনে কিছুটা বিলম্ব হলেও দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা হবে।
রওশন বিশ্বাস বলেন, কুমার নদের অবৈধভাবে বাঁধ দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসির মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় যেকোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
ছবিঃ কুমার নদ।