দেশে মহামারি করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে । পর পর দুদিন শুক্র ও শনিবার ১০১ জন করে ২শ ২ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। এ অবস্থায় চলমান ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সরকারের কাছে।
করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকার গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি এই প্রস্তাব দিয়েছে। তবে সরকার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। চলমান এই কঠোর লকডাউন আরও বাড়ানো হবে কি না, সে বিষয়ে আগামী ১৯ এপ্রিল সোমবার সিদ্ধান্ত জানা যাবে।
শনিবার জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির একজন সদস্য বলেন, করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু কমছে না। তাই আরও এক সপ্তাহ সর্বাত্মক লকডাউন রাখার পরামর্শ দিয়ে একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সরকারের কাছে।এ বিষয়ে সরকার এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। আগামী ১৯ এপ্রিল এ সংক্রান্ত সভায় সিদ্ধান্ত হতে পারে। ওই সদস্য বলেন, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক থাকায় চলমান লকডাউন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে এ বিষয়ে আগামী সোমবার সভা ডাকা হয়েছে। সেখানেই লকডাউনের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। আর প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। এরপর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। যেটি ছিল কার্যত ‘লকডাউন’। কয়েক দফায় বর্ধিত হয়ে টানা ৬৬ দিন ছিল এ অবস্থা। গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এরপর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে করোনা পরিস্থিতি। কিন্তু এ বছর মার্চে শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে এবার সংক্রমণ বেশি তীব্র। মধ্যে কয়েক মাস ধরে শনাক্তের চেয়ে সুস্থ বেশি হওয়ায় দেশে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা কমে আসছিল। কিন্তু মার্চ থেকে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যাও আবার বাড়তে শুরু করেছে।গত বছরে এত মৃত্যুর সংখ্যা দেখেনি দেশ। তবে এ বছরই আক্রান্ত ও মৃত্যু রেকর্ড হারে বাড়তে থাকে।
করোনা সংক্রমণের এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহের জন্য গণপরিবহন চলাচল বন্ধসহ বিধিনিষেধ আরোপ করে ১৮ দফা নির্দেশনা দেয় সরকার। এরমধ্যে গণপরিবহন অর্ধেক আসনে যাত্রী বহনের শর্ত দিয়ে চালুর অনুমতিও দেওয়া হয়। খোলা হয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শপিংমল।এরপর আরও অবনতির দিকে যেতে থাকে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি।এর প্রেক্ষিতে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করে সরকার।তবে এর মাঝে ১২ ও ১৩ এপ্রিল আগের লকডাউন বর্ধিত করা হয়। কিন্তু সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথম দিন ৯৬ জনের রেকর্ড মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সর্বশেষ শনিবার (১৭ এপ্রিল) বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যে বলা হয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে।এ নিয়ে দেশে করোনায় প্রাণ হারালেন মোট ১০ হাজার ২৮৩ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণঘাতি ভাইরাসটি ধরা পড়েছে ৩ হাজার ৪৭৩ জনের শরীরে।এ নিয়ে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭ লাখ ১৫ হাজার ২৫২ জন।এর আগে গত শুক্রবারও (১৬ এপ্রিল) ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, চলমান লকডাউন বাড়ানোর পরামর্শ আছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।