‘এসি বিস্ফোরণ হয়নি, আগুন গ্যাস থেকেই’ : ৫০ হাজার টাকা ঘুষ না দেয়ায় প্রাণ গেল মুসল্লিদের

ঢাকা অফিস: মসজিদে আগুন লেগে হতাহতের ঘটনায় শোকে স্তব্ধ তল্লা এলাকা। নিহত ও আহতরা সবাই একই এলাকার বাসিন্দা এবং পরস্পরের প্রতিবেশী। এ ঘটনা তদন্তে শনিবার বিকেল পর্যন্ত তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা কাজও শুরু করে দিয়েছেন। দুপুরে তদন্ত কমিটির প্রধান লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। অপরদিকে মসজিদ কমিটির তরফে বলা হয়েছে, গ্যাস লাইনের লিক মেরামতের জন্য তিতাসগ্যাসকে জানানোহয়। মেরামতের জন্য ৫০ হাজার টাকা ঘুস দাবি করে।

শনিবার গঠিত কমিটির অন্য সদস্য ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক নূর হাসান ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় তারা গ্যাস ও বিদ্যুৎ থেকে আগুনের উৎস ধরে নিয়ে তদন্তকাজ শুরু করেছেন। এর বাইরে মসজিদটিতে আগুন লাগার আর কোনো কারণ তারা প্রাথমিকভাবে খুঁজে পাননি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘মসজিদটিতে এসি বিস্ফোরণের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। কারণ প্রত্যেকটি এসির কম্প্রেসর অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। তবে মসজিদের পেছনের অংশের নিচ দিয়ে গ্যাসের লাইন যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ওই লাইনের লিকেজ থেকে বুদ্বুদ আকারে গ্যাস নির্গত হতেও দেখা গেছে। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, কোনটি আগে হয়েছে। শর্টসার্কিট নাকি নির্গত গ্যাস। তবে নির্গত গ্যাসে বৈদ্যুতিক স্পার্ক থেকে আগুনের সূত্রপাত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এখানে এর বাইরে আর কোনো ঘটনা নেই।’ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্যাসের উপস্থিতি ছিল জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিনি। তিনি চুয়াডাঙ্গার সন্তান।
মসজিদ কমিটির নেতবৃন্দসহ এলাকাবাসীর অভিযোগ, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি হান্নান মিয়া নিজেও এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। তিনি কয়েকদিন আগেও তিতাস গ্যাসকে এ লাইন সংস্কারের কথা বলেছিলেন। কিন্তু তিতাস তখন ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেয়ার কারণে লাইন মেরামত বা সংস্কার করেনি। ফলে লিকেজ হয়ে অন্য দিনের মতই গ্যাস জমে যায় মসজিদে। আর গরমের কারণে এসি চালানোর ফলে বাতাস বের হতে না পারায় গ্যাস জমে যায়। আর সেই থেকেই মূলত দুর্ঘটনা ঘটেছে। মসজিদ কমিটির সভাপতি আবদুল গফুর মিয়া বলেন, কয়েকদিন আগেও আমাদের একজন লোক সাঈদ সাহেব তিতাসকে গিয়ে লিকেজের কথা জানায়। তখন তিতাস থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করা হয়। কিন্তু টাকা যোগাড় করা যায়নি। ফলে আমাদের এত হতাহতের ঘটনা ঘটলো। এদিকে বায়তুল সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে সেই মসজিদে আর আজান বা নামাজ হয়নি। ঘটনার পর শনিবার এ মসজিদে ফজরের আজান হয়নি। অনুষ্ঠিত হয়নি নামাজও। এর আগে শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর শনিবার রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মসজিদ কমিটির সভাপতি গফুর মেম্বারের ভাই আবুল কাশেম জানান, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ অনেকেই দগ্ধ হয়েছেন। খবর পেয়েছি, মুয়াজ্জিন মারা গেছেন। এখনো মসজিদে ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এ অবস্থায় এখনো এ মসজিদে নামাজ হয়নি।

 

Comments (0)
Add Comment