আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার তিয়রবিলা গ্রামে পরকীয়া অভিযোগে গলাই জুতা-স্যান্ডেলের মালা পরিয়ে মারপিট মামলায় তিন আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় তাফসির আহম্মেদ লালসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। সন্ধ্যায় নির্যাতনের শিকার তিয়রবিলা গ্রামের কনেচ আলীর ছেলে ভূষিমাল ব্যবসায়ী লালন আলী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ওই রাতেই খাসকররা ক্যাম্প পুলিশ ৩জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন খাসকররা গ্রামের মৃত আকছেদ মল্লিকের ছেলে শফি মল্লিক (৬০), একই গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আলী (৩০) ও মৃত ধোলাই জোয়ার্দ্দারের ছেলে কলম জোয়ার্দ্দার (৬০)। গতকাল মঙ্গলবার তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তবে চেয়ারম্যানসহ বাকি দুজন এখনও পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছেন আলমডাঙ্গা থানার ওসি বিপ্লব কুমার নাথ। ঘটনার পর থেকে লজ্জায় গা ঢাকা দিয়েছেন নির্যাতনের শিকার ওই নারী ও তার পরিবারের সদস্যরা।
এ সংক্রান্ত মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, লালন আলী তার প্রবাসী প্রতিবেশী পান্নার স্ত্রী সালমা খাতুনের সাথে পরকীয়া সম্পর্কে লিপ্ত এমন অভিযোগ তুলে তাদের বিরুদ্ধে গ্রামে সালিসের আয়োজন করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে একই গ্রামের সন্তান ও খাসকররা ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান তাফসির আহমেদ লালের শত্রুতা রয়েছে। সে কারণে তাফসির আহমেদ মল্লিক লাল তাদের বিরুদ্ধে পরকীয়ায় লিপ্ত থাকার অভিযোগ তুলে ওই সালিসের আয়োজন করেন। গত ২৯ জুলাই দুপুরে তিনি কয়েকজন ব্যক্তিকে লালনের বাড়ি পাঠিয়ে দেন তাকে সালিসে নিয়ে যেতে। ওই সময় লালন সালিসে যেতে অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে চেয়ারম্যান তাফসির আহমেদ মল্লিক লাল অন্যান্য আসামিদের সাথে নিয়ে লালন আলীকে বাড়ি থেকে টেনেহেচড়ে সালিসস্থলে নিয়ে যায়। তারপর সালমা খাতুনকেও ওই সালিসে উপস্থিত করা হয়। এক পর্যায়ে তাদের মারপিট করা হয়। মারপিটের মধ্যসময়ে গ্রামবাসীর সামনে তাদের দুজনকেই জুতোর মালা গলাই পরানো হয়। শেষে আবার তাদেরকে মারপিট করা হয়। এমনকি গ্রাম ছাড়তে নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি দেড় লাখ টাকা জরিমানা ও দু’জনকে গ্রাম ছাড়তে নির্দেশ দেন ইউপি চেয়ারম্যান তাফসির আহম্মেদ লাল ও সালিসকারীরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, দুজনকে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে ইউপি চেয়ারম্যান তাফসির আহম্মেদ লাল ছেলেপক্ষের পরিবারকে এক লাখ টাকা এবং মেয়েপক্ষের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন। জরিমানার টাকা ২০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। সেই সঙ্গে এই টাকা ঈদগাহ মসজিদ ফান্ডে দেয়ার ঘোষণা দেন। গ্রামের মসজিদে নিয়ে তাদেরকে তওবা পড়াতে নিয়ে যান নিজেই। এরপরই চেয়ারম্যান নিজ হাতে অভিযুক্ত দুজনের গলাই জুতোর মালা পরিয়ে গ্রামে ঘোরান। এদিকে এ ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগী যুবক আলমডাঙ্গা থানায় মামলা করেন। এরপর থেকেই চেয়ারম্যান গা ঢাকা দিয়েছেন।
আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের পরিদর্শক বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, পরকীয়ার অভিযোগ তুলে চেয়ারম্যান উভয়পক্ষকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। গলাই জুতার মালা পরিয়ে গ্রামে ঘুরিয়েছেন। আমাদের প্রাথমিক তদন্তে পরকীয়ার কোনো প্রমাণ পায়নি এবং একে অপরের বাড়িতে যাতায়াত করতে কেউ দেখেওনি। ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগী যুবক চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনের নামে মামলা করেছেন। এরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। চেয়ারম্যানসহ বাকি দুজন পলাতক আছেন। খুব শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা হবে।