স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় বিভিন্ন সড়কে ব্যারিকেট সৃষ্টি করে যানবাহনে গণডাকাতি ও প্রস্তুতিকালে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের নিকট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি ডিজেলচালিত করাত, একটি লোহার করাত (৫৪ ইঞ্চি), চারটি হেঁসো, লোহার রডসহ নগদ ২৫ হাজার টাকা। গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্নস্থান থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার নওদা ব-বিল গ্রামের বকাপাড়ার মন্টু আলীর ছেলে সজিব হোসেন ওরফে ফজা (২৩), একই উপজেলার বেলগাছি গ্রামের বোটপাড়ার শহিদুল ইসলামের ছেলে সোহেল হোসেন (২২), একই গ্রামের ম-লপাড়ার ওমর আলীর ছেলে সোহাগ আলী (২৮), ফরিদপুর গ্রামের স্কুলপাড়ার বাবুল শেখের ছেলে রনি (২০), হারান আলীর ছেলে খোকন (২০), সাইদুলের ছেলে সুরুজ আলী (২১)। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৮ জুন রাত সাড়ে ৩টার দিকে আলমডাঙ্গা-চুয়াডাঙ্গা সড়কের আলমডাঙ্গার পৌরসভার সীমানা পিলারের নিকট ব্যারিকেড দিয়ে যাত্রীবাহী নৈশকোচ পূর্বাশা পরিবহন ও নদীয়া ডিলাক্সে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এতে ৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা লুট করে নেয় ডাকাত দল।
পরবর্তীতে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) একরামুল হোসাইন, এসআই শেখ হাদীউজ্জামান, এএসআই মোস্তফা কামাল ও রাসেল তালুকদার সঙ্গীয় ফোর্সসহ বিশেষ অভিযান পরিচালনা শুরু করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলসহ আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়। শুক্রবার ১০ জুন রাতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় রনিকে তার নিজ বাড়িতে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওইদিন রাতেই সজিব হোসেন ওরদে ফজা ও সোহেল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। তার স্বীকারোক্তিতে উদ্ধার করা হয়েছে একটি ডিজেল চালিত করাত, দুটি হেঁসো ও লুটের নগদ ২৫ হাজার ৩৪২টাকা।
অপরদিকে, শুক্রবার ১০ জুন মধ্যরাতে আলমডাঙ্গার নাগদাহ-ছোটপুটিমারি সড়কের ঘোলদাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ তারিফুজ্জামান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় জাকির হোসেনের পরিত্যক্ত বাড়ির নিকট পৌঁছুলে ডাকাতদল টহলরত পুলিশের গাড়িতে গতিরোধ করার চেষ্টা করে। পোষাক পরিহিত পুলিশ সদস্যদের দেখতে পেয়ে ডাকাতদল পালিয়ে যায়। পরে তাদের ধাওয়া করে সোহাগ, খোকন ও সুরুজ আলী নামের তিনজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এর আগে গত ৩১ মে রাত ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কের বন্ডবিল ঠান্ডুর ইটভাটার সামনে ডাকাতদল তা-ব চালায়। এতে ইজিবাইক ও প্রাইভেটকারের মোট ১০-১২ জন যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা ও সোনার দুটি আংটি ছিনিয়ে নেয়। ভুক্তভোগী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বিষয়টি স্বীকার করলেও আলমডাঙ্গা থানার ওসি বিপ্লব কুমার নাথ কিছুই জানেন না বলে জানান।
অপরদিকে গত রোববার ৪ জুন রাত সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী জীবননগর চাঁনপুর সড়কে ব্যারিকেট দিয়ে ডাকাতদল তা-ব চালায়। এতে ২০ থেকে ২৫ জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা ও সোনার গয়না লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত বুধবার ৮ জুন রাত ৯ টার দিকে মুন্সিগঞ্জ-নাগদাহ সড়কের পুটিমারী মাঠে গাছ ফেলে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই সময় বিভিন্ন ইউপি সদস্যসহ কয়েকটি যানবাহনের ২০-৩০ যাত্রীদের জিম্মি করে নগদ টাকা ও মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তথা ৭ ঘণ্টা পর রাত পৌনে ৪টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কের বন্ডবিল গেট সংলগ্ন পৌর সীমানার সন্নিকটে হানা দেয়। এখানেও ডাকাতদল সড়কে গাছ ফেলে ব্যারিকেড তৈরি করে। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পূর্বাশা পরিবহন ও নদীয়া ডিলাক্স, একটি ট্রাক ও দুটি আলমসাধু ডাকাতির কবলে পড়ে। এসময় ডাকাতদল প্রায় ৬-৮ লাখ টাকা অস্ত্রের মুখে লুট করে নিয়ে যায় বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন বলেন, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় পরিবহনে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ছোটপুটিমারি মাঠে ডাকাতি প্রস্তুতির ঘটনায় আরও তিনজনকে আটক করা হয়েছে। মোট ৬জনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র, নগদ টাকা ও স্বয়ংক্রিয় করাত উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ার মিরপুর থানায় হত্যা, চুরি, ডাকাতিসহ অন্য মামলা রয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।