স্টাফ রিপোর্টার: পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে মোটরসাইকেল কিনে দিতে না পারায় অভিমানে সাব্বির হোসেন (১৮) নামে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। গতপরশু বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তবে অপর একটি সূত্র বলছে আপন ভাবীর সঙ্গে দেবর ছাব্বিরের পরকীয়ার প্রেমের কারণেই পরিবারের চাপে এ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
ছাব্বির হোসেন কুষ্টিয়া জেলার হাউজিং বি-ব্লক এলাকার মৃত রাশেদুল ইসলামের ছেলে। তিন ভাই বোনের মধ্যে ছাব্বির ছিল মেজ। বাবার মৃত্যুর পর মায়ের সঙ্গে তিন ভাই বোন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পদ্মবিলা ইউনিয়নের হায়দারপুর (বিজিবি-৬) ক্যাম্প এলাকায় নানাবাড়ি বসবাস করছে। ছাব্বির চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে চলতি বছরে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
পরিবারের বরাত দিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিবার রহমান বলেন, তিন ভাই বোনের মধ্যে ছাব্বির ছিলো মেজ। বাবার মৃত্যুর পর মায়ের সঙ্গে তিন ভাই বোন নানারবাড়ি হায়দারপুরে বসবাস করছে। ছাব্বির চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। বেশ কয়েকদিন যাবত মা রিংকি খাতুনের নিকট মোটরসাইকেল কিনে দেয়ার জন্য বায়না ধরে ছাব্বির। টাকা না থাকায় কিনে দিতে পারেনি মা। এরই জের ধরে বুধবার রাত ৮টার দিকে বিষ পান করে ছাব্বির। অসুস্থ হয়ে পড়লে নেয়া হয় হাসপাতালে। রাত পৌনে ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
তিনি আরও বলেন, ছাব্বিরের নানা একজন মুক্তিযোদ্ধা। দুই মাস পর মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা তুলে মোটরসাইকেল কিনে দিতে চেয়েছিলো নানা। তাও মন গলেনি ছাব্বিরের। অবশেষে অভিমানে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলো সে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টার দিকে ছাব্বিরকে হাসপাতালে নিয়ে আসে পরিবারের সদস্যরা। অতিরিক্ত মাত্রায় বিষপান করেছিল। তার পাকস্থলি ওয়াশ করে ভর্তি করা হয়। রাত পৌনে ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। মরদেহ হিমঘরে রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট থানায় বিষয়টি জানানো হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ বলেন, পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে মোটরসাইকেল কিনে দিতে পারেনি। এতেই অভিমানে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে ছাব্বির হোসেন। মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। নিহতের পরিবারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে অপর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, কয়েক মাস আগে ছাব্বির তার বড় ভাবীর সঙ্গে পরকীয়ার জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর থেকে ছাব্বির তার ভাবীকে বিয়ে করার ইচ্ছেপোষণ করলে পারিবারিকভাবে চাপে পড়ে যায় তারা। এ নিয়ে গত বুধবার দুপুরে ৩০টি ঘুমের ওষুধ সেবন করে ছাব্বির। তাতেও কিছু না হলে রাত ৮টার দিকে বিষপান করলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। রাতেই ছাব্বিরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে পরিবারের সদস্যরা। রাত পৌনে ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছাব্বিরের মৃত্যু হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আলমডাঙ্গা উপজেলায় ঘোষবিলা গ্রামের কবরস্থানে ছাব্বিরের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।