অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকাসহ মূল্যবান মালামাল লুট

জীবননগর-চাঁনপুর সড়কে বেরিকেড দিয়ে ঘণ্টাব্যাপী ডাকাতদলের তান্ডব

স্টাফ রিপোর্টার: জীবননগর চাঁনপুর সড়কে বেরিকেট দিয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ডাকাতদল তান্ডব চালিয়েছে। এতে ২০ থেকে ২৫ জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা ও সোনার গয়না লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত পরশু রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়া মিস্ত্রিপাড়া-চাঁনপুর সড়কের ফাঁকা মাঠে বাঁশের বেরিকেড দিয়ে ইজিবাইক, ভ্যান, আলমসাধু ও মোটরসাইকেলের যাত্রীদের জিম্মি করে মালামাল লুটের ঘটনা ঘটে। তবে ঘটনার একদিন পার হলেও জীবননগর থানার ওসি নাসির উদ্দিন মৃধা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। অপরদিকে সেই রাতে প্রতিবেশীসহ ২০-২৫ জন ডাকাতির শিকার হয়েছেন এমন ঘটনা উল্লেখ করে সুমন নামে এক ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন। পরে গভীর রাতে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ফেসবুকে পোস্টদাতা সুমনের বাড়ী যায় পুলিশ। পরে ভুক্তভোগীর নিকট ঘটনা শোনার পর পুলিশ চলে যায়।

ডাকাতির কবলে পড়া জীবননগর উপজেলার রঘুনন্দনপুর গ্রামের আমির হোসেনের ইজিবাইক চালক মেহেদী হাসান দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, রোববার বিকেলে জীবননগর পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মালামাল ইজিবাইকযোগে আন্দুলবাড়ীয়া থেকে গ্রীসনগর বাজারে পৌঁছে দিতে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে আনুমানিক রাত সাড়ে ৮টার দিকে চাঁনপুর মাঠের মধ্যে মুখে কাপড় বাধা ৭-৮ জনের একটি ডাকাতদল আমাকে গতিরোধ করে। পরে আমার নিকটে থাকা ওই মালামাল বাবদ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা, আমার ব্যক্তিগত ২৭০০ টাকাসহ গলার একটি সোনার চেন নিয়ে নেয়। তিনি আরও বলেন, সেখানে ইজিবাইক, ভ্যান, আলমসাধু ও মোটরসাইকেলের প্রায় ২০-২৫ জন যাত্রীকে জিম্মি করে নগদ টাকা ও মূল্যবান মালামাল লুট করে নেয়। তবে আমাদের মোবাইল নেয়নি। কোনপ্রকার কথা বললেই মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছিলো। তাদের প্রত্যেকের পরনে হাফ প্যান্ট ও মুখে কাপড় বাধা ছিলো। এসময় একজন পথচারি দূর থেকে টর্চলাইট মারলে অনেক লোক দেখে ‘কারা’ বলে জিজ্ঞাসা করেন। কেউ কোনো সাড়া না দিলে ডাকাতির বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি গ্রামের দিকে চলে যান। পরে ডাকাতদল দ্রুত আমাদের স্থান ত্যাগ করতে বলেন। গতকাল এ বিষয়ে জীবননগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এছাড়া আমার এক প্রতিবেশী সুমন আমার কাছে ঘটনা শুনে তিনি তার ফেসবুকে পোস্ট করেন। সেই রাতেই গুজব ছড়ানোর অভিযোগে পুলিশ তার বাড়িতে আসে। পরে আমার নিকট বিস্তারিত শুনে পুলিশ চলে যায়।

আন্দুলবাড়ীয়া বাজারের ব্যবসায়ী মো. রাজু দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, রোববার রাত ৮টার দিকে চাঁনপুর থেকে আন্দুলবাড়ীয়া বাজারে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ফিরছিলাম। এ সময় চাঁনপুর মাঠের নিকট পৌঁছুলে ৭-৮ জন আমাকে প্রতিরোধ করে। তাদের প্রত্যেকের মুখ ঢাকা ছিলো। আমার নিকট থাকা সামান্য কিছু খুচরা টাকা নিয়ে নেয়। সেখানে আমি ছাড়াও প্রায় ২০-২৫ জনকে জিম্মি করে মালামাল লুট করে। পরে আমাদের ছেড়ে দেয়। অল্প টাকা নেয়ায় বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়নি। আগামীকাল জানাবো।

জীবননগর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামাল হোসেন দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, আমি ডাকাতির বিষয়টি জেনেছি। মেহেদি হাসান নামে একজন ভুক্তভোগী আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন বিভিন্ন যানবাহনের ২০ থেকে ২৫ যাত্রীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতদল তান্ডব চালায়। তাদের নিকট থাকা নগদ টাকা ও মূল্যবান মালামাল লুট করে নেয়। এ ঘটনায় ওই ভুক্তভোগী জীবননগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

রঘুনন্দনপুর গ্রামের সুমন বলেন, ডাকাতির কবলে পড়া মেহেদি হাসান ও আমার বাড়ি পাশাপাশি। সেই রাতে তার নিকট ডাকাতির ঘটনা শোনার পর ফেসবুকে একটি পোস্ট দিই। এতে ওই রাতেই পুলিশ আমার বাড়িতে আসে। পরে মেহেদির নিকট প্রকৃত ঘটনা শুনলে পুলিশ চলে যায়।

জীবননগর থানার ওসি নাসির উদ্দিন মৃধা দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে এমন খবর শুনে ওই রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সেখানে আমরা কাউকেই পাইনি। একজন ডাকাতির ঘটনা উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট করলে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়; তিনি শুনেছেন বলে জানান। কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় এখনো কেউ অভিযোগ করেনি।

Comments (0)
Add Comment