ভালাইপুর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের ভালাইপুর বাজারে বন্ধুর মায়ের অপমানের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে দুই তরুণ সজল আহমেদ (২৭) ও মামুন অর রশিদ (২৪) হত্যার প্রতিবাদে ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আলুকদিয়া, চিৎলা, জুড়ানপুর ও খাদিমপুর ইউনিয়নের লোকজন। গতকাল রোববার বিকেলে ভালাইপুর বাজারে এসব কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় বক্তারা জোড়া খুনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের পাশাপাশি তাদের ইন্ধনদাতাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। এ সময় খুনিদের বিচারের দাবিতে সেøাগান দিতে থাকে এলাকাবাসী।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাব্বুর রহমান বলেন, এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে ইতিমধ্যে পুলিশ দুজনকে এবং র্যাব একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। হৃদয় নামের একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বাকি আসামিরা পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। ২৫ এপ্রিল রাতে ভালাইপুর বাজারে ঘটা এ জোড়া খুনের ঘটনায় নিহত মামুনের ভাই আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের স্বপন আলী বাদী হয়ে পরদিন ৩০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এরপর পুলিশ ও র্যাব অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত আসামি মানিক, মিঠু ও হৃদয় নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে হৃদয় গতকাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মানববন্ধনে বাজার কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ বাজারে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। বাজারের ৫৬৫ দোকানদার সন্ত্রাসীদের ভয়ে থাকেন। সজল ও মামুন হত্যা মামলার এক আসামির বিরুদ্ধে কুলবিলা গুচ্ছগ্রামের সাত খুনসহ অনেক মামলা রয়েছে। অতীতে কোনো খুনের ঘটনায় আসামি ধরতে পুলিশের কখনো এতো সময় লাগেনি। বিচার না হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরও ঘটবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান লাল্টু বলেন, ১৯৯৮ সালে এ বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এরপর ২৫ বছর ধরে একটি সংঘবদ্ধ চক্র লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে। চক্রটি বাজারটিকে আবারও অশান্ত করতে চায়। এ লুটেরাদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
জেলা যুবলীগের যুগ্মআহ্বায়ক চিৎলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলতে চাই, আপনার সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসেন।’
জেলা যুবদলের যুগ্মসম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালাম বলেন, ‘সজল ও মামুনের হত্যাকারীদের পেছনে কোন অপশক্তি আছে, তা ভালো করে খতিয়ে দেখতে হবে।’
চিৎলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তৌহিদুল ইসলাম বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘কে এই বাজারে গ্যাঙ পোষেন, চাঁদাবাজি করেন, বাজার থেকে তোলা টাকায় গ্যাং গড়ে তুলে সদস্যদের অস্ত্র কিনে দেন, তা সবাই জানে। অবিলম্বে খুনের পেছনের গডফাদার ও মাস্টারমাইন্ড যারা আছেন, আমরা তাদের গ্রেপ্তার ও বিচার চাই।’
চিৎলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের আইন হাতে তুলে নিতে বাধ্য করবেন না। আমরা এখনো শান্ত আছি। শুধু মানববন্ধন নয়, এরপর কঠোর আন্দোলন করা হবে। পুলিশ পারে না এমন কোনো কাজ নেই। সারা দেশে পুলিশ প্রশাসন যেভাবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, সেভাবে আসামিদের ধরে কয়রাডাঙ্গা গ্রামবাসীকে দেখান। আর যদি প্রশাসন ব্যর্থ হয়, শান্তিপ্রিয় কয়রাডাঙ্গা গ্রাম অশান্ত হবে, এর দায় প্রশাসনকে নিতে হবে।’
মেহেরপুর কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) মোজাম্মেল হক পুলিশকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা যদি দ্রুততম সময়ে আসামিদের না ধরেন, তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২৫ এপ্রিল বেলা দুইটার দিকে ভালাইপুর গ্রামের ছামেনা খাতুন ভালাইপুর বাজারের আশরাফুল বস্ত্রালয়ে কাপড় কিনতে আসেন। এ সময় দোকানের কর্মচারী রিয়নের সঙ্গে দরদাম নিয়ে তার তর্কবিতর্ক হয়। ছামেনার সঙ্গে রিয়ন খারাপ ব্যবহার করেন এবং দোকান থেকে বের করে দেন। বিষয়টি তিনি বাড়িতে গিয়ে ছেলে টিপু সুলতানকে জানান। টিপু সুলতান তার বন্ধু সজল, পলাশ, রাসেল, জুয়েল, আনিছুর, লিখন, হালিম, টিপু ও বাদীর ভাই মামুনকে নিয়ে ভালাইপুরের ওই কাপড়ের দোকানে আসামির সঙ্গে কথা বলতে আসেন। দোকানের কর্মচারী রিয়ন সেখানে না থাকায় রাত আনুমানিক আটটার দিকে সবাই তার (মো. রিয়ন) বাড়িতে যান।
রিয়ন দুপুরের ঘটনার জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করলে তাকে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে টিপু সুলতানের মায়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য ভালাইপুরের দিকে রওনা দেন। ভালাইপুর বাজারের জিনারুল স্টোরের সামনে পৌঁছুলে এজাহারভুক্ত আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে দেশি অস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ করেন। ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি কোপে সজলের পেট ও মামুনের বুক ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। তাদের মুমূর্ষু অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক সজল আহমেদকে তাৎক্ষণিক মৃত ঘোষণা করেন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মামুন অর রশিদ মারা যান।