আলমডাঙ্গা ব্যুরো: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় চিপস কিনে দেয়ার কথা বলে শিশুকে অপহরণ করেন চাচাসহ কয়েকজন। বিকেলে অপহরণ হওয়া শিশুকে রাতে উদ্ধার করেছে পুলিশ। আটক করা হয়েছে শিশুর চাচাসহ পাঁচজনকে। আলমডাঙ্গার পৌর এলাকার আনন্দধামের ক্যানালপাড়ার একটি বাড়ি থেকে বুধবার মধ্যরাত ৩টার দিকে অপহৃত ৫ বছর বয়সী ফরহানকে উদ্ধার করা হয়। অপহৃত শিশু কাজী আব্দুল আজিজ ফারহান কলেজপাড়া এলাকার দন্ত চিকিৎসক কাজী সজীবের একমাত্র ছেলে।
পুলিশ জানায়, বুধবার বিকেলে আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার কলেজপাড়ায় বাড়ির সামনে থেকে মোটরসাইকেলে চড়িয়ে চিপস কিনে দেয়ার কথা বলে শিশু ফরহানকে ফিল্মি স্টাইলে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। রাতেই শিশুটির বাবা কাজী সজীব আলমডাঙ্গা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। রাত ১০টার দিকে ফারহানের পিতার মোবাইলফোনে কল দিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায় অপহরণকারীরা। টাকা না দিলে ওই শিশুপুত্রকে খুন করার হুমকিও দেয় অপহরণ চক্রের সদস্যরা। এরপর অভিযানে নামে পুলিশ। অভিযানের একপর্যায়ে মধ্যরাত ৩টার দিকে উপজেলার আনন্দধাম এলাকা থেকে শিশুটির বাবা কাজী সজীবের আপন চাচাতো ভাই সুমনসহ আরও পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। আটককৃত অন্য চারজন হলেন- আনন্দধাম ক্যানালপাড়ার মিজানের ছেলে শাওন (২৫), লুৎফরের ছেলে আকাশ (২০), সেলিমের স্ত্রী রাশেদা (৪০) ও আসাননগরের আকমল শেখের ছেলে খোরশেদ (৩৫)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আলমডাঙ্গা থানায় আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম জানান, শিশুটির বাবার একটি লিখিত অভিযোগের পর অভিযান শুরু করে পুলিশ। শহরের বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টা করা হয়। সারা রাত অভিযানের পর মধ্যরাত ৩টার দিকে আনন্দধাম এলাকার একটি বাড়ি থেকে অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারী সজীবের চাচাতো ভাই কাজী সুমনসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। এ সময় অপহরণ কাজে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেলও জব্দ করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম আরও জানান, সুমনই অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে বিষয়টি স্বীকার করেছে।
শিশুটির বাবা কাজী সজীব বলেন, ‘বুধবার বিকেলে আমার ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে বাড়ির সামনে খেলছিলো। সন্ধ্যায় ছেলেকে বাড়ি ফিরতে না দেখে অনেক খোঁজাখুঁজি করি। পরে এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে জানতে পারি, বিকেলে একটি মোটরসাইকেলে দুইজন ব্যক্তি আমার ছেলেকে নিয়ে গেছে। রাতেই আমি আলমডাঙ্গা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করি। রাত ১০টার দিকে মোবাইলফোনে কল দিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায় অপহরণকারীরা। টাকা না দিলে আমার ছেলেকে খুন করার হুমকিও দেয় তারা।’
উদ্ধার হওয়া শিশু কাজী ফারহান জানিয়েছে, চাচা সুমন তাকে অপহরণকারীদের মোটরসাইকেলে তুলে দিয়েছিলো। বলেছিলো ‘তুমি এদের সাথে যাও আমি আসছি।’ তারপর অপহরণকারীরা শিশুটিকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে ক্যানালপাড়ার ওই বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে তারা জোরে জোরে গান বাজিয়ে নাচানাচি করেছিলো। নাচানাচির এক পর্যায়ে একজন শিশুটির শরীরে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে দেয়। তারপর কী ঘটেছিলো তা শিশুটি আর বলতে পারেনি।
প্রেস ব্রিফিংকালে অপহৃত শিশু ফারহানের বাবা কাজী সজীব জানান, বুধবার বিকেলে ছেলে অপহরণের সংবাদ শোনার পর থেকে আমি পুরো আপসেট হয়ে যাই। কী যন্ত্রণায় রাত কেটেছে তা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তবে প্রথম থেকেই আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ আন্তরিকতা দেখিয়েছে। বিশেষ করে এ এসপি সার্কেল জাহাঙ্গীর আলম ও আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর কবীর। পুলিশের আন্তরিকতা, পরিশ্রম, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার কারণে আমি সন্তানকে জীবিত ফিরে পেয়েছি। এতো তাড়াতাড়ি সন্তানকে ফিরে পাবো তা কল্পনা করতে পারিনি। ব্রিফিংকালে শহরের অনেকে ভীড় জমায়। তারা সকলেই এ সাফল্যে পুলিশের ভূয়সী প্রশংসা করে।
শিশু ফারহান অপহরণের মাস্টারমাইন্ড সুমনের পরিচয়: শিশু ফারহান অপহরণের মাস্টারমাইন্ড কাজী সুমন শিশু ফারহানের বাবা কাজী সজীবের আপন চাচাতো ভাই। একই বাড়িতে বসবাস তাদের। কাজী সুমন একজন মুরগি বিক্রেতা। পরিবারের সকলেই নম্র ভদ্র হলেও সুমন মাদক সেবন চক্রের সাথে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সে শ্বাশুড়ি হত্যা মামলার আসামি সিআইডি কনসটেবল অসীমের মাদকব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে। মাদকের সাথে সম্পৃত্ততার কারণে নিজের মুরগি ব্যবসায় বার বার ধ্বস নামে। এজন্য পরিবারে অশান্তি বিরাজ করতো।
অভিযানে উদ্ধার হওয়া সামগ্রী: অভিযান পরিচালনার সময় অপহরণে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে (রেজি. নং-চুয়াডাঙ্গা-হ-১২-৬৩৬৮)। এছাড়া আটককৃতদের ব্যবহৃত ৭টি মোবাইলফোন সেট উদ্ধার করা হয়।
সফল এ অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন যারা: অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম, আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর কবীর, ওসি (তদন্ত) মাসুদুর রহমান, ওসি (অপারেশন) দেবব্রত রায়, এসআই সুলতান মাহমুদ, এসআই আমিনুল হক, এসআই কামরুল ইসলাম, এসআই গিয়াস উদ্দীন, এসআই খসরু আলম, এসআই হাসনাইন, এসআই তৌকির, এসআই এমদাদ প্রমুখ।