অন্তঃহীন সমস্যায় ভরা ২ নম্বর ওয়ার্ডের মহল্লার নামকরণে আভিজাত্য : উন্নয়নের ছোঁয়া সামান্য

বিশেষ প্রতিবেদন

শামসুজ্জোহা রানা: চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার যে এলাকার মহল্লাগুলোর নামে আভিজাত্য আছে সেই মহল্লাগুলো নিয়েই গঠিত ২ নম্বর ওয়ার্ড। বুদ্ধিমানপাড়াও এই ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। মহল্লার নাম-ধামে বুদ্ধিদীপ্ত আর আভিজাত্য থাকলেও উন্নয়নের ছোঁয়া খুবই সামান্য। এলাকাবাসী সুপ্তক্ষোভ থেকেই বদলে নিয়েছেন কাউন্সিলর। আগামীতেও বদলাতে হবে কিনা তা জানা নেই যেনো কারো।

রাস্তাগুলোর প্রায় সবই সংস্কারের অভাবে চলাচলের যেমন অযোগ্য, তেমনই বর্ষায় বহু এলাকা জলমগ্ন হওয়ায় দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এতোটাই অপরিষ্কার যে, ওগুলো উপকারের বদলে অপকারই বয়ে আনছে। মশা উৎপাদনের কারখানা। দুর্গন্ধ সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর অনেকটাই নাক-সওয়া। এসব সমস্যা নিরসনসহ পৌর নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছেন আব্দুল আজিজ জোয়ার্দ্দার মিণ্টু। দায়িত্বে থাকা কাউন্সিলর মুন্সি রেজাউল করিম খোকনকে পরাজিত করে তথা তার চেয়ে প্রায় ৪শ’ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মিণ্টু। মিষ্টি হাসিমাখা মুখে আব্দুল আজিজ জোয়ার্দ্দার মিণ্টু নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়রকে সাথে নিয়ে এলাকার উন্নয়নে সাধ্যমত চেষ্টা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এলাকাবাসী বলেছেন, সমস্যা সমাধানে উদাসীন হলে নবনির্বাচিত কাউন্সিলর মিণ্টুর পরিণতিও অন্যদের মতো হবে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের বুজরুকগড়গড়ি বনানীপাড়া, বুদ্ধিমানপাড়া, মাদরাসাপাড়া, সুমিরদিয়া, সুমিরদিয়া কলোনী, বারীধারাপাড়া, মুন্সিপাড়া, দক্ষিণ হাসপাতালপাড়া, শান্তিপাড়া ও পলাশপাড়া নিয়ে গঠিত পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড। ভোটার সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। ভোট কেন্দ্র বুজরুকগড়গাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজ, আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সুমিরদিয়া পুটে মোহাম্মদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এবারের নির্বাচনে ৫ হাজার ১৫৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। বুজরুকগড়গড়ি বনানীপাড়ার মৃত আকছেদ আলী জোয়ার্দ্দারের ছেলে আব্দুল আজিজ জোয়ার্দ্দার পর পর ৪ বার কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়ে এবার নির্বাচিত হয়েছেন। এলাকাবাসীর নিকট সমস্যার কথা জানতে গেলে নানাবিধ সমস্যার ফিরিস্তি তুলে ধরেন তারা। সুমিরদিয়ায় এবার একটি রাস্তা হলেও বাকি রাস্তা ও সরুগলিগুলোর প্রায় সব কটিই ভাঙাচুরা, খানাখন্দে ভরা। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকলেও দূর থেকে বাঁশের খুঁটি দিয়ে তার টানা। বাঁশের খুঁটিতে দেড়-২শ’ গজ সার্ভিসিং তার টানার কারণে তা ঝুলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মাঠে যাওয়ার নোনামাটির রাস্তা নামক রাস্তাটি বর্ষায় কাদায় ভরে থাকে, শুকনো সময় ধুলো উড়োয়। নীলারমোড় কালক্রমে বাজারে রূপান্তর হয়েছে। এ বাজার কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এলাকার ময়লা এলাকায় যেখানে সেখানে পড়ে থাকে। বড় রাস্তার পাশে ড্রেন নির্মাণ করা হলেও পাশের এলাকা নিচু হওয়ায় তা দিয়ে পানি নিষ্কাশন হয় না। উন্মুক্ত পয়নিষ্কাশন নালায় ময়লা পড়ে নোংড়া পানি পঁচে গা ঘিণঘিণ অবস্থা। আর বারীধারপাড়া? নামটি শুনে পুলকিত হলেও প্রায় সব রাস্তা কাচা। দেখে পৌর এলাকা বলে বিশ^াস করাও কষ্ট। পৌর সরবরাহকৃত পানির পাইপ এখনও এসব এলাকায় পৌছুয়নি। শান্তিপাড়া? ঘিঞ্জিগলিগুলো অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষায় অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় এ পাড়াও। বুজরুকগড়গড়ি মোড়ে যেখানে এক সময় বুদু মিয়ার বিশাল আমবাগান ছিলো তারই এক কোনে গড়ে তোলা হয়েছে বিদ্যালয়। বাগানের জমিতে প্লট করে গড়ে তোলা হয়েছে ঘরবাড়ি। বিদ্যালয়ের পাশেই গড়ে উঠেছে বাজার। বাজারটি বেশ জমজমাট। স্কুলমোড় থেকে শান্তিপাড়ার ভেতর দিয়ে বেলগাছির দিকে যাওয়া রাস্তাটি শেষ কবে মেরামত করা হয়েছে তা এলাকার অনেকেই মনে করতে পারছেন না। তারা বলছেন, দেখুনতো, এটা পৌর এলাকার কোন রাস্তা? ফিরোজরোডও সংস্কার করা হয়েছে। দক্ষিণ হাসপাতালপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার নূরুল ইসলাম মালিক এলাকার উন্নয়ন সম্পর্কে বলেন, দক্ষিণ হাসপাতালপাড়ায় যে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে তা কোনো কাজেই আসছে না। ড্রেনের কারণে উৎপাদন হচ্ছে মশা। অথচ মশা নিধনের নাম নেই। দক্ষিণ হাসপাতালপাড়ার অধিকাংশ এলাকা নিচু। ফলে বর্ষায় দুর্দশার শেষ থাকে না। তবে মাদরাসাপাড়ার তেমন সমস্যা নেই। এলাকার ময়লা নিয়ে এলাকাবাসীর যতো দুশ্চিন্তা। সুমিরদিয়া মহল্লার কবরস্থানে বৈদ্যুতিক লাইটের ব্যবস্থা নেই। ফলে রাতে প্রয়োজন হলে হ্যাসাগ ধরাতে হয়। ক’দিন আগে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সমস্যা জানতে এলাকায় যান এ প্রতিবেদক, এলাকার ভ্যান চালক আব্দুল মজিদ খানিকটা ক্ষোভের সাথে বলেন, পৌর নাগরিক সুবিধা ন্যূনতম না বাড়লেও পৌরসভা পৌর কর বাড়াতে খুব পারে। যে বাড়ির জন্য ৩০ টাকা কর দিতাম, সেই বাড়ির কর এখন সাড়ে ৩শ’ টাকা করেছে পৌরসভা।

পৌরসভার তরফে এলাকার উন্নয়ন যেমন প্রত্যাশিতভাবে হয়নি, তেমনই এলাকার কিছু মহল্লা এতোটাই ঘিঞ্জি এবং সরুগলির মধ্যে বসবাস। আগুন লাগলে সেখানে ফায়ার স্টেশনের গাড়ি পৌছুনো প্রায় অসম্ভব। আর পানির সংস্থান? কোনো মহল্লাতেই তার সুব্যবস্থা নেই। কিছু বাড়ি রয়েছে যেখানে কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্স নেয়ারও জো নেই। মানুষ মারা গেলে খাটিয়াও ঘোরানোর জো নেই কিছু বাড়ির দরজা ও রাস্তায়। অতীব জরুরি প্রয়োজনীয় রাস্তার সুব্যবস্থা না রেখে বসতবাড়ি নির্মাণের নকশা পৌরসভা অনুমোদন দিয়েছি কীভাবে? এসব প্রশ্নের সুষ্ঠু জবাব মেলে না। মিলছেও না। তবে নবনির্বাচিত কাউন্সিলর আব্দুল আজিজ জোয়ার্দ্দার মিণ্টু বলেছেন, সবকিছু নিয়ম মেনেই করার চেষ্টা করবো। এলাকার মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। এলাকাবাসীর আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করবো। এলাকার হতদরিদ্র্যদের ভাগ্যের পরিবর্তনে কিছু করার ইচ্ছে আছে। দেখি কতটা কী করতে পারি!

 

Comments (0)
Add Comment