মাথাভাঙ্গা মনিটর: বেলারুশে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে দুপক্ষ তাদের রাজধানীতে ফিরে গেছেন। গতকাল সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পডোলিয়াক এমন তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, দুপক্ষের মধ্যে প্রথম দফা আলোচনা শেষ হয়েছে। তাদের প্রথম লক্ষ্য অস্ত্রবিরতি ও যুদ্ধের অবসান নিয়ে কথা হয়েছে। কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রোডম্যাপ আকারে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আরো পরামর্শ করতে প্রতিনিধিরা রাজধানীতে ফিরে গেছেন। সিদ্ধান্ত নিতে তারা আরেকদফা আলোচনায় বসবেন। এদিকে বেলারুশের সেনারা যুদ্ধ করতে ‘ইউক্রেনে যেতে প্রস্তুত, তারা ইউক্রেনে যাচ্ছেন কিংবা তারা ইউক্রেনে ঢুকে পড়েছেন’ বলে মনে করেন না মার্কিন কর্মকর্তারা। গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এমন দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনের ভেতরে থাকা সেনারা সবাই রাশিয়ান। বর্তমানে ইউক্রেনে অভিযান চালাতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ৭৫ শতাংশ যুদ্ধ সক্ষমতার মধ্যে রয়েছেন। এর আগে সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিতে বেলারুশের সেনারা প্রস্তুত রয়েছেন। এছাড়া নিজেদের ভূখ- রাশিয়াকেও ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। এক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর কারণে বেসামরিক লোকজন ভোগান্তিতে পড়েছেন, তারা বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছেন। কিন্তু এসব হামলা ইচ্ছাকৃত নাকি সরাসরি লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে, তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। এই কর্মকর্তা বলেন, আমি এখনে রুশদের নিয়ে কোনো দুঃখপ্রকাশ করবো না। তারা আবাসিক এলাকা ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানছে। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা সব ইউক্রেনীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার অঙ্গীকার জানিয়েছে জার্মানি। সোমবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্নালেনা বাইরবক বলেন, ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা সবাইকে আমরা জায়গা দেবো। তিনি যখন এই ঘোষণা দিচ্ছিলেন, তখন তার পাশে ছিলেন সেøাভানিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনজে লোগার। আন্নালেনা বলেন, ইউক্রেন থেকে লোকজনকে পালিয়ে আসতে আমরা সহায়তা করছি। লোকজনকে ইউরোপীয় দেশে নিয়ে আসতে আমরা সীমান্তে অবস্থান নিয়েছি। এ সময়ে ইউক্রেনে আরও বেশি মানবিক সহায়তা দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি। চলতি সপ্তাহে ইউক্রেনে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনকে সামনে রেখে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পুতিনের যুদ্ধের আজ পঞ্চম দিন। ইউক্রেনের নাগরিকদের ওপর তিনি দুঃসহ যন্ত্রণা চাপিয়ে দিয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন। লাখ লাখ মানুষ তাদের জীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায়। তিনি বলেন, এমন ভয়াবহ দৃশ্য দেখার পর আমাদের আরও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ইউক্রেন একা থাকতে পারে না, ইউরোপ ও পশ্চিমা মূল্যবোধ দুঃসাহসী ইউক্রেনীয়দের পাশে থাকবে। এছাড়া ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের অঙ্গীকার করে নীতিগতভাবে বড় ধরনের পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে জার্মানি। আন্নালেনা বাইরবক বলেন, পুতিনের যুদ্ধ আমাদের ভিন্ন একটা যুগে ফেলে দিয়েছে। আমরা সবকিছু পুর্নমূল্যায়ন করে অস্ত্র ও সরঞ্জাম দিয়ে ইউক্রেনের নাগরিকদের সহায়তা করবো।
৩
জাতিসংঘের সদর দফতরে জরুরি সাধারণ পরিষদের বৈঠক
যুদ্ধে উস্কানি দেয়ার জন্য পশ্চিমাদের দায়ী করলো রাশিয়া
মাথাভাঙ্গা মনিটর: যুদ্ধের মাঝেই বেলারুশে রাশিয়া-ইউক্রেনের শান্তি বৈঠকের প্রথম দিনের সমাধান ছাড়াই শেষ হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের সদর দফতরে ১১তম বারের মতো জরুরি সাধারণ পরিষদের বৈঠক বসেছে। বৈঠকে যে কোনো মূল্যে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিব। ইউক্রেন থেকে অস্ত্র বিরতি ও অবিলম্বে রুশ সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে কিয়েভ। ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য উস্কানি দিতে আবারও পশ্চিমাদেশগুলোকেই দায়ী করেছে রাশিয়া। নিউইয়র্কে একাদশবারের মতো জরুরি সাধারণ পরিষদের বৈঠকে বসেছে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যের সবাই। শুরুতে যুদ্ধে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, যে কোনো মূল্যে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। যুদ্ধ কোনো উত্তর নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। বৈঠকে জাতিসংঘে ইউক্রেনের প্রতিনিধি সের্গেই কিসলিৎসা যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকেই দায়ি করেছেন। একই সাথে ইউক্রেন থেকে অস্ত্র বিরতি ও অবিলম্বে রুশ সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে কিয়েভ। রাশিয়া হাসপাতাল চিকিৎসা কেন্দ্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। রুশ হামলায় ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহর প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য উস্কানি দিতে আবারও পশ্চিমাদেশগুলোকেই দায়ি করেছে রাশিয়া।
রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যদের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের মান ৩০ শতাংশ কমেছে। রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বৈশ্বিক ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক সুইফটের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ায় ব্যাংকে রাখা অর্থ তুলে নিতে ব্যাংকগুলোর বাইরে ভিড় দেখা গেছে। যদিও মস্কো আশ্বাস দিচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রার বড় ভা-ার থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই আছে। ধস এড়াতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ ঘণ্টা পরে খুলেছে রাশিয়ার শেয়ারাবাজার। রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া দেশের তালিকায় শামিল হয়েছে সাউথ কোরিয়া। যুদ্ধ এখন কিয়েভের দ্বারপ্রান্তে। রাজধানী শহরের সীমান্ত এলাকাগুলো দিয়ে বারবার প্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে ইউক্রেনীয় এক সিনিয়র কমান্ডারের দাবি, তাদের পাল্টা হামলায় রুশ বাহিনীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আকাশে ও মাটিতে রুশ বাহিনীকে সফলভাবে প্রতিরোধ করার কথা বলছে ইউক্রেন বাহিনী। চেরনিহিভ শহরে ভারি গোলাবর্ষণ হয়েছে, রাতভর সাইরেন বেজেছে চেরকাসি ও দিনিপ্রো শহরে। খারকিভে বোমাবর্ষণে বেশ ক’জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে শতাধিক। গোলাগুলি আর বোমাবর্ষণের মাঝেই শান্তি আলোচনা। বেলারুশ সীমান্তে বৈঠকে বসে ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধি দল। কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই ইউক্রেন আলোচনায় বসেছে বলে জানান প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। আগামী ৩ বছর ইউক্রেনের নাগরিকদের কোনো আবেদনপত্র ছাড়াই শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এখনও পর্যন্ত ৪ লাখের বেশি মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে আশপাশের দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। যুদ্ধে রাশিয়াকে সহায়তা করতে গিয়ে এবার নিজেদের পারমাণবিক নীতিতে পরিবর্তন এনেছে বেলারুশ। গণভোটে নিজেদের ভূখ-ে পারমাণবিক অস্ত্র রাখার পক্ষে রায় দিয়েছেন বেলারুশের জনগণ। এর আগে, রোববার নিজেদের পারমাণবিক হামলা প্রতিরোধী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখার কথা জানান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে নিউক্লিয়ার হামলার প্রস্তুতি নয়, পশ্চিমারা একে ইউক্রেনের ওপর চাপ তৈরির প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছে।