বয়স হয়েছে বিশ্বাস নেই : খাঁচায় বন্দি হলো পরীর ছেলে জো বাইডেন

মানুষের কোলেপিঠে, হেসেখেলে বেড়ে উঠেছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার বাঘের শাবকটি। তাকে সবাই পরীর ‘ছেলে’ জো বাইডেন নামে চেনে। লতে গেলে দিন যত যাচ্ছিল, ততই সবাইকে আপন করে নিচ্ছিল সে। কিন্তু তার স্থান যে মানবকুলে নয়; ফলে চিরাচরিত নিয়মে তাকে বন্দি হতে হলো খাঁচায়। কারণ বয়স হয়েছে, বিশ্বাস নেই। ছাড়া রাখলে বিপদ হতে পারে শঙ্কায় তাকে খাঁচায় বন্দি করা হয়েছে বুধবার।
২১ কেজি ওজনের ৪১ ইঞ্চি লম্বা শাবকটির অবাধ বিচরণ ছিল খাঁচার বাইরে। রাজকীয় স্টাইলে সোফায় শুয়ে বিশ্রাম করত। টাইলসের মেঝেতে চলত বাঁধনহারা ছোটাছুটি। বুধবার পাঁচ মাস পূর্ণ হওয়ায় বুধবার জো বাইডেনকে খাঁচায় বন্দি করেছেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এ সময় চিড়িয়াখানার পরিচালনা পরিষদের সদস্য সচিব ও হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমীন এবং চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ও চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন শুভ উপস্থিত ছিলেন। ডা. শুভই দিনরাত এক করে বাঘিনীর হিংস্র থাবা থেকে বাঁচিয়ে তুলেছিল জো বাইডেনকে। তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, জন্মের পর মায়ের দুধ না পেয়ে তিনটির মধ্যে দুটি শাবকের মৃত্যু হয়েছিল। ফলে অপরটিকে আমরা মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে আলাদা রাখি। খেলনা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা হয় শাবকটির জন্য। শিশুর মতোই ফিডারে দুধ খাওয়ানো হতো। শুরুতে বাজারে পাওয়া বিড়ালের দুধ খাওয়ানো হতো। পরে ছাগলের দুধের সঙ্গে অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। এতে শারীরিকভাবে বেশ পরিবর্তন আসে শাবকটির। বয়স পাঁচ মাস পূর্ণ হওয়ায় তাকে খাঁচায় দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, শাবকটি এখন ৬০০ মিলিলিটার দুধ ও দেড় কেজি মাংস খাচ্ছে। আপাতত এক মাস অন্যান্য বাঘের পাশাপাশি খাঁচায় একা থাকবে। এর মধ্যে তাদের ভাববিনিময় যেমন হবে, তেমনি বাঘসুলভ আচার-আচরণ আয়ত্ত করবে। তার পর তাকে বাঘের খাঁচায় নেওয়া হবে।
চিড়িয়াখানার পরিচালনা পরিষদের সদস্য সচিব ও হাটহাজারীর ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, মানবশিশুর মতোই পরম যত্নে বাঘ শাবকটিকে লালনপালন করেছেন চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ। খাওয়ানো থেকে শুরু করে সব কিছুই করতেন তিনি। তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঘের আগের খাঁচা সম্প্রসারণ করে সাড়ে সাত হাজার বর্গফুট করা হয়েছে। এতে বাঘ ভালো পরিবেশ পাবে, দর্শনার্থীরাও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বাঘ দেখতে পারবেন।
২০১৬ সালের নভেম্বরে ১১ মাস বয়সি রাজ ও ৯ মাস বয়সি পরীকে আনা হয় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। দেড় বছর পর ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তাদের ঘরে তিনটি ছানার জন্ম হয়। যার মধ্যে একটির মৃত্যু হলেও বেঁচে যায় দুটি। সেই বেঁচে যাওয়া দুই বাঘিনীর নাম রাখা হয় শুভ্রা ও জয়া।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে জন্ম নেওয়া শাবকটির নাম রাখা হয় ‘করোনা’। সর্বশেষ গত ১৪ নভেম্বর তিনটি শাবকের জন্ম হয়, মায়ের দুধ না পেয়ে রোগাক্রান্ত দুটি মারা যায়। একটি মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হয় কর্তৃপক্ষ। সেটির নাম জো বাইডেন রাখা হয়।

5

 

Comments (0)
Add Comment