ভারতীয় অভিনেত্রীদের রহস্যজনক মৃত্যু যেন বেড়েই চলছে। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে তিনজন ভারতীয় অভিনেত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হলো। এছাড়াও একজন অভিনেত্রীর ওজন কমানোর অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে মর্মান্তিক মৃত্যুকে বরণ করেছেন।সাহানা ও পল্লবী, চেতনা রাজের পর এবার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে দক্ষিণী অভিনেত্রী শেরিন সেলিন ম্যাথিউর নাম।
এদের মধ্যে তিনজনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আর চেতনারাজ ওজন কমানোর অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে মারা গেছেন। ৫ দিনের ব্যবধানে এই ৪ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শাহানা শুক্রবার, পল্লবী রবিবার, চেতনা রাজ সোমবার ও সেরিন মঙ্গলবার মারা যান।
শাহানা
গত শুক্রবার ভারতের কেরালার নামি মডেল ও মালয়ালম অভিনেত্রী সাহানার দেহ উদ্ধার করা হয়। কেরালার কোঝিকোড়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার ধুমধাম করে নিজের ২২তম জন্মদিন পালন করেছিলেন তিনি।
পরদিনই ঘটল এই মর্মান্তিক ঘটনা। সাহানার বাবা-মায়ের অভিযোগ, তার মেয়েকে খুন করা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বলেছে, শুক্রবার কোঝিকোড়ে সাহানার বাড়িতে তার ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায়। তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
সাহানার পরিবারের অভিযোগ, তাদের মেয়ে স্বামী সাজ্জাদের হাতে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার। সাজ্জাদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন তারা। অভিযোগের ভিত্তিতে অভিনেত্রীর স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ। মৃত অভিনেত্রীর মায়ের অভিযোগ, সাহানার কাছে টাকা চাইতেন সাজ্জাদ। টাকা না দিলেই মদ্যপ অবস্থায় ঝামেলা করত। সাজ্জাদ প্রায়ই সাহানাকে মেরে ফেলার হুমকি দিত।
এ ব্যাপারে নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করেছেন সাজ্জাদ। স্ত্রীকে বাথরুমে মৃত অবস্থায় দেখতে পান বলে জানিয়েছেন তিনি। স্থানীয় পুলিশ বলছে, এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এ নিয়ে তদন্ত শুরু করছে পুলিশ।
পল্লবী দে:
গত রবিবার দুই বাংলায় সুপরিচিত ছোট পর্দার অভিনেত্রী পল্লবী দের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। কলকাতার গড়ফা আবাসন এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় ওই অভিনেত্রীকে। কী কারণে এই মৃত্যু, সে বিষয়ে কিছু জানায়নি স্থানীয় পুলিশ। ওই ফ্ল্যাটেই প্রেমিকের সঙ্গে থাকতেন পল্লবী।
গড়ফার ফ্ল্যাটে গত মাসের ২৪ তারিখে ভাড়া এসেছিলেন পল্লবী দে। মৃত্যুর ঘণ্টাখানেক আগেও সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন তিনি।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার বরাত দিয়ে কলকাতা থেকে প্রকাশিত গণমাধ্যম এই সময় জানিয়েছে, শনিবার রাত থেকেই প্রেমিক সাগ্নিক ও পল্লবীর মধ্যে ঝগড়া চলছিল। রবিবার সকালেও থামেনি সে ঝগড়া। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঘরের বাইরে যান সাগ্নিক। পল্লবী ছিলেন ঘরের ভেতরেই। সাগ্নিক ফিরে এসে দেখেন ঘরের দরজা বন্ধ। এরপর ধাক্কা মেরে দরজা খুলে পল্লবীর লাশ নামান তিনি।
রবিবার সকালে গড়ফার কে পি রায় লেনের ফ্ল্যাট থেকে অভিনেত্রীকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন তার সঙ্গী। এরপর পুলিশে খবর দেন তিনি। পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চেতনা রাজ: ওজন কমানোর অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে মাত্র ২১ বছর বয়সেই মারা গেলেন অভিনেত্রী চেতনা রাজ। অস্ত্রোপচারের সময় তাঁর মৃত্যু হয়। যদিও পরিবার চিকিৎসকের গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে।সোমবার মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে পরিবার হাসপাতালে দৌড়ে যায়। সেখানেই মেয়ের মৃতদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন চেতনার মা।
২১ বছরের সিরিয়াল অভিনেত্রী চেতনা রাজ শেট্টি কসমেটিক হাসপাতালে ফ্যাট সার্জারির জন্য ভর্তি হয়েছিলেন। এই ফ্যাট সার্জারির কারণে তাঁর ফুসফুসে পানি জমে যায়, তার পরেই অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুতে দক্ষিণী সিরিয়ালের বিনোদন জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, পরিবারকে না জানিয়ে এদিন সকালে চর্বি কমানোর অস্ত্রোপচারের জন্য বেঙ্গালুরুর শেঠি কসমেটিক হাসপাতালে ভর্তি হন চেতনা। এরপর অস্ত্রোপচারের সময় তাঁর ফুসফুসে পানি জমে যায় এবং তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত চিকিৎসকরা সব চেষ্টা করেও তাঁকে বাঁচাতে পারেননি।মৃত্যুর খবর পেয়ে চেতনার পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে ছুটে যায়। সেখানে মেয়ের মৃতদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন চেতনার মা।
চেতনার বাবার অভিযোগ, ফ্যাট সার্জারির জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং পরিবারের থেকে সম্মতি না নিয়েই চিকিৎসক এই সার্জারি করেছিলেন। চেতনা একাধিক সিরিয়াল ও সিনেমায় অভিনয় করেছেন। চিকিৎসকের ভুলের কারণেই তাঁদের সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। তাই সুব্রহ্মমনিয়ানগর পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সেরিন সেলিন ম্যাথিউ:
কেরালার আরেক অভিনেত্রী সেরিন সেলিন ম্যাথিউএর ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া গেছে নিজ ফ্ল্যাটেই। গত মঙ্গলবার (১৭ মে) সকালে কেরালার এডাপ্পলি শহরের চাক্কারাপারম্বুতের ভাড়া বাসার ফ্ল্যাটে শেরিনের রুমমেটরা তাকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পায়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে তারা জানায়, কয়েকদিন ধরে বন্ধুদের সঙ্গে বাদানুবাদ চলছিল শেরিন। এ কারণে বিষন্নতায় ভুগছিল সে।
২৬ বছর বয়সী এই মডেল ও অভিনেত্রী একজন রূপান্তরিত নারী ছিলেন। পাঁচ বছর ধরে কেরালায় বাস করছিলেন তিনি। এরইমধ্যে তথ্য পেয়ে ভারতীয় পুলিশ তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের (যাদের সঙ্গে মনোমালিন্য চলছিল) জবানবন্দি গ্রহণ করেছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে শেরিন আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর একটি মামলা দায়ের করেছে। তদন্ত চলছে।