কুড়ুলগাছি প্রতিনিধি: বিনোদনের পরিবেশ নেই, নেই পর্যাপ্ত বসার সুব্যবস্থা, শিশুদের জন্য নেই কোনো বিনোদনের উপকরণ। এরপরও একটু প্রশান্তির আশায় হাজার হাজার মানুষের ঢল দামুড়হুদার কুড়–লগাছি রায়সা বিলপাড়ে। ঈদ মানেই উৎসব। ঈদ মানেই আনন্দ। উৎসবে মেতে ওঠে শহর নগর। বাদ পড়ে না পাড়া গ্রাম। ঈদকে কেন্দ্র করে দামুড়হুদার কুড়–লগাছির রায়সা বিলের ঈদের দিন থেকে ঈদের ৪র্থ দিনেও বিনোদন প্রেমী মানুষের ঢল।
ঈদের সময়টাতে বিনোদনের জন্য পার্ক, পর্যটনকেন্দ্র অথবা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোতে ব্যস্ত থাকে সবাই। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো উৎসবের একটা বড় অংশ। গ্রামের বাইরে যারা থাকেন তারাও গ্রামে এসে এ সময়টাকে নিজের মতো করে উপভোগ করে থাকেন। নাড়ির টানে বাড়ির ভালোবাসায় হাজারো প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে শহর থেকে চলে আসেন লাখ লাখ মানুষ গায়ের পথে। ঈদের আনন্দ স্বজনদের সঙ্গে ভাগ করতে পেরে ভুলে যায় পথের সব ক্লান্তি। দোস্ত-দুষমন এক হয়ে যাওয়ার এই ঈদ সবার মুখেই এক মিষ্টি হাসি দিতে সক্ষম হয়। এ হাসির উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে আকাশে বাতাসে। পর্যটন এলাকাগুলোর চেয়ে কোনো অংশে কম ছিলো না কুড়–লগাছির রায়সা বিলের পাড় ও পর্যটকদের নৌকা ভ্রমণ।
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নদী ভ্রমণ, নৌকা ভ্রমণ করতে আসা দর্শনার আরমান, সাগর, ও নয়ন জানান, বৌ-বাচ্চাদের ঐতিহ্যবাহী রায়সা বিল দেখানোর জন্য এসেছি। ঈদের আনন্দকে আরো ভালো লাগার জন্যই মূলত এখানে আসা। নৌকা ভাড়া করে সময় কাটাচ্ছি।
স্থানীয়দের পাশাপাশি জেলার ও অনেক দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা নিয়মিতই এখানে আসে; শুধু তাই নয় বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আসেন পরিবার পরিজন নিয়ে। ঈদের ছুটিতে আরও বেশি মানুষের উপস্থিতিতে নদীপাড় সরব হয়ে উঠেছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দীন জানান, বছরের সব সময় রায়সা বিলে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটলেও ঈদের সময় কয়েকগুণ বেশি মানুষ এখানে নৌকা ভ্রমণে আসেন, আসেন ঘুরতে। জীবননগর এলাকা থেকে ঘুরতে আসা হালিম, হাসান, মৌমিতা এবং নাসগিস জানান, রায়সা বিলে নৌকা ভাড়া করে আনন্দ উপভোগ করার জন্যই এখানে এসেছি।
রায়সা বিলের পাড় ঘুরে দেখা গেছে সেখানে বিভিন্ন বয়সের হাজারো মানুষের ঢল। বিলের পাড়গুলোতে দর্শনার্থীদের আগমনে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট দোকানঘর। তারা পানি ও পণ্যসহ বিভিন্ন রকম খাবারের পসরা সাজিয়ে বসিয়েছে সেখানে। অপরদিকে ঘাটে অবস্থান করা নৌকা শোভা পাচ্ছে। দর্শনার্থীরা এসব নৌকা ভাড়া করে বিলে ঘুরছে ইচ্ছেমতো। ছোট বড় এবং মাঝারি সাইজের এসব নৌকা ঘণ্টা চুক্তিতে ভাড়া পাওয়া যায়। বছরের অন্য সময়ে মাথাপিছু ৫০ টাকা ভাড়া নিয়ে থাকে। কিšুÍ ঈদের সময় তা বেড়ে ১শ থেকে ২শ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে। ঈদে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ের কারণে ঘন্টা চুক্তিতে আটশো থেকে হাজার টাকার কমে নৌকা মিলছে না। অপর দিকে দর্শনার্থীদের কাছে এই সময় টাকা কোনো বিষয় না। নৌকাতে ঘুরতে পারছে এতেই তারা তৃপ্তি। নৌকার মাঝি ভিম হালদার, নবা, স্বপন, ও কার্তিক হালদার জানান, ঈদের মরসুমে সপ্তাহজুড়ে লোকজন বেশি আসে এখানে, এ সময়ে তাদের নৌকা চালিয়ে তুলনামূলক বেশি আয় হয়। এজন্য তারা খুশি। ঈদের আনন্দ এভাবেই নদীতে ভেসে ভেসে ছড়িয়ে পড়ছে দিক-দিগন্তে।