।। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী।।
আজ ২৪ রমজান। রমজান মাস সবর ও সহমর্মিতার মাস। এটা আমাদের শিক্ষা দেয় মানুষের ব্যাথায় ব্যাথিত হতে, অন্নহীন মানুষের যন্ত্রনায় শরীক হতে। একজন মানুষ যখন রোজা পালনার্থে না খেয়ে থাকে ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত, তখন তার বুঝে আসে ক্ষুধার জ্বালা কি জিনিষ। গরীব মানুষেরা দিনের পর দিন অর্ধাহারে, অনাহারে কাটায়। কিন্তু ধনী লোকেরা কিভাবে বুঝবে ক্ষুধার যন্ত্রণা। এ কারণে আমরা বলতে পারি রোজার মাস কিছু দিনের জন্য হলেও আমাদেরকে অনাথ, গরিবদের কাছাকাছি নিয়ে আসতে সাহায্য করে। রাসুলে কারীম (সঃ) এর নির্দেশ হলো, রমজান মাসে অধীনস্থ চাকর-বাকর ও কর্মচারীদের কাজের বোঝা হালকা করে দেয়া।এটাও সহমর্মিতা প্রকাশের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এই মাস আত্মশুদ্ধির মাসও বটে। নিজের নফস বা আত্মাকে কূপ্রবৃত্তির হাত থেকে বাঁচিয়ে, অন্যায় কামনা-বাসনা থেকে মুক্ত রেখে আল্লাহর হুকুম শতভাগ মান্য করার নামই হলো আত্মশুদ্ধি। রমজানের সিয়াম সাধনা আমাদের এই আত্মশুদ্ধির সুযোগ করে দেয়। আর আত্মশুদ্ধিই হলো মানুষের জীবনের আসল উদ্দেশ্য। অন্তরের পরিশুদ্ধির মাধ্যমেই আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করতে পারি। আল্লাহ জাল্লাশানুহ এরশাদ করেছেন, যে নিজের নফসকে পরিশুদ্ধ করেছে সেই সফলকাম হয়েছে এবং যে নিজের নফসকে কলূষিত করেছে সেই ব্যর্থ হয়েছে (সূরা আশ-শামস: ৯-১০)। এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, মানুষের পরকালের সফলতা নির্ভর করে তার নফসকে শুদ্ধ করার উপর এবং ব্যর্থতা নির্ভর করে নফসকে নষ্ট করার মাধ্যমে। মানুষের আসল শত্রু হলো দুটি। মরদুদ শয়তান এবং নফসে আম্মারা। তবে সবচেয়ে বড় ও আদি শত্রু হল নফসে আম্মারা যা কূপ্রবৃত্তির প্রতি আমাদেরকে ফুসলাতে থাকে এবং সব সময় পাপাচারে নিমজ্জিত করতে চায়। বাকিটা এর শক্তি জোগায় এবং উসকানি দেয়। ইবলিশ শয়তানকে শয়তানে পরিণত করেছিল কোন জিনিষ? নিঃসন্দেহে তার নফস। নফসে আম্মারাই তাকে অহংকার করতে বাধ্য করেছিলো এবং আদমকে সিজদা করা থেকে বিরত রেখেছিলো। রোজা আমাদের এই শত্রুদ্বয় থেকে হেফাজত করতে সাহায্য করে। এক হাদিসে হুজুর (সাঃ) এরশাদ করেছেন, শয়তান তোমাদের শিরা-উপশিরাই চলাচল করে। সুতরাং তোমরা ক্ষুধার দ্বারা শয়তানের গতিরোধ কর। তবে রমজান মাসে এটা আল্লাহ তায়ালার অতিরিক্ত মেহেরবানী যে, তিনি বড় বড় শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখেন। আজেবাজে খাহেশ চূর্ণ করা এবং নফসে আম্মারা তথা কুকর্মের মদদদাতা নফসের বিরুদ্ধে জয়লাভ করা রোজার অন্যতম উদ্দেশ্য। বলা যায় এটিই রোজার সবচেয়ে বড় উপকারিতা। মানুষের সৌভাগ্য নফসকে পরাস্ত করে রাখার মধ্যে এবং দুভার্গ্য নফসের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার মধ্যে নিহিত। অবাধ্য ঘোড়াকে যেমন দানাপানি না দিলে নিয়ন্ত্রণে থাকে, ঠিক তেমনই রোজার মাধ্যমে অবাধ্য নফসকে ভুখা রাখলে সে নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং আল্লাহর নাফরমানি করতে সাহস পায় না। রোজার মাধ্যমে নফসকে নিয়ন্ত্রণে আনা আত্মার পরিশুদ্ধির উৎকৃষ্ট উপায়।
(লেখক: অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)