স্টাফ রিপোর্টার: লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া হাসাপাতাল থেকে ৮০ দিন পর গুলশানের নিজ বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছেন। এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্স-কর্মচারীদের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রওনা হন এবং নেতাকর্মীর প্রচন্ড ভিড় ডিঙিয়ে রাত সাড়ে ৮টায় ফিরোজায় পৌঁছান। বাসায় পৌঁছালে বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোটভাই শামীম এস্কান্দার ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র নেতা আমানউলস্নাহ আমান, আবদুস সালাম, তার একান্ত সচিব এবিএম আবদুর সাত্তারসহ ভাই প্রয়াত সাঈদ এস্কান্দারের স্ত্রী নাসরিন এস্কান্দার প্রমুখ তাকে স্বাগত জানান। এদিকে খালেদা জিয়ার বাসায় আগমনের খবর শুনে গুলশানের বাসায় সড়কের দুই পাশে কয়েকশ’ নেতাকর্মী ভিড় করে। নেতাকর্মীর ভিড়ে গাড়ি বাসায় ঢোকাতেও নিরাপত্তা কর্মীদের হিমশিম খেতে হয়। তারা গেটের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নেত্রীকে হাত তুলে সালাম জানান। ওই সময় নেত্রী মাস্কপরা অবস্থায় গাড়ির ভেতর থেকে হাত নেড়ে তাদের শুভেচ্ছার জবাব দেন।
এর আগে হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি প্রধানের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়, খালেদা জিয়া ‘ক্লিনিক্যালি স্থিতিশীল’, তবে রোগমুক্ত নন। এখনও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন। মাঝে মধ্যে মৃদু রক্তক্ষরণ হচ্ছে। হাসপাতালে করোনা সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা থেকে তাকে বাসায় যাওয়ার ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক সাহাবুদ্দিন তালুকদার বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল থাকায় করোনা সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা থেকে তাকে বাসায় রেখে চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। কোনো কারণে তার পরিস্থিতি আবার জটিল হলে হাসপাতালে এনে চিকিৎসা করানো হবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সম্ভব এমন সব চিকিৎসায় দেয়া হয়েছে। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের পরামর্শ নেয়া হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিতে হবে। তার যে রোগ এর শেষ চিকিৎসা লিভার প্রতিস্থাপন। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসনের এখনো সে অবস্থা তৈরি হয়নি।’
অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী বলেন, খালেদা জিয়ার পরিপাকতন্ত্রের ওপরের দিকে ১১টি এবং ক্ষুদ্রান্ত্রে ২টি রক্তক্ষরণের উৎস বন্ধ করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এন্ডোস্কপিতে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্যাপসুল এন্ডোস্কপি করা হয়েছে। আপাতত তার বড় ধরনের রক্তক্ষরণ হচ্ছে না। তবে আবার রক্তক্ষরণ হবে না এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার একটি টিউমার অপারেশন করা হয়েছে। তবে অপারেশন পরবর্তী চিকিৎসা স্থবির হয়ে আছে।
এফএম সিদ্দিকী জানান, এভার কেয়ার হাসপাতালে জানুয়ারি মাসে ৩৮০ কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এজন্য খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে তাকে বাসায় রেখে চিকিৎসা করানো হবে। কারণ তিনি করোনা সংক্রমিত হলে পরিস্থিতি জটিল হবে।
অধ্যাপক ডা. একিউএম মহসিন বলেন, আপাতত খালেদা জিয়ার বড় ধরনের রক্তক্ষরণ বন্ধ করা হয়েছে। লিভার সিরোসিসের একটি উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে ঞওচঝ. বাংলাদেশে এ প্রযুক্তি নেই। এজন্য তাকে বিদেশ নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্য চিকিৎসদের মধ্যে ছিলেন শেখ আবু জাফর, জাফর ইকবাল, সাদিকুল ইসলাম, মো. আরেফিন, এজেডএম জাহিদ হোসেন, ডা. রফিকুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, ১৩ নভেম্বর লিভারে সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। ওই সময় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দ্রুতই তাকে সিসিইউতে (ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট) ভর্তি করা হয়। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠন করা হয় মেডিকেল বোর্ড। সিসিইউতে চিকিৎসকদের পরামর্শে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হলে ক্ষণে ক্ষণে রক্তক্ষরণ বন্ধ হলে তাকে কেবিনে স্থানান্তরিত করা হয়।