দেশে নিজস্ব ব্যবসার জন্য স্বর্ণবার আমদানির ক্ষেত্রে জামানত প্রয়োজন হবে না। এছাড়া সোনার বার ও স্বর্ণালঙ্কারের পাশাপাশি অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক এবং আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি করা যাবে। পরে তা দেশে পরিশোধন করে বিভিন্ন গ্রেডের সোনার বার তৈরি করার সুযোগ হবে।
রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে দেশে অপরিশোধিত ও আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি এবং পরিশোধনের সুযোগ রেখে এ সংশোধিত নীতিমালার খসড়া অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ (সংশোধিত-২০২১)’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সংশোধিত নীতিমালায় স্বর্ণ শোধনাগারের সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কোনটি স্বর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে, কোথায় পরীক্ষা করা যাবে- এসব বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। স্বর্ণ পরিশোধানাগার স্থাপন ও পরিচালনায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি অনুসরণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি মান ঠিক করে দেবে। যারা সোনার বার রপ্তানি করতে চান, তাদের অবশ্যই স্বর্ণ পরিশোধানাগার থাকতে হবে। তিনি বলেন, “আমরা তো (বিশ্বে) স্বর্ণ রিশোধনাগারের তালিকায় নেই। এ নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করলে এ তালিকায় আসতে পারব। সেক্ষেত্রে বাইরের অনেক বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিও এখানে আসবে।”
শুধু স্বর্ণ নয়, প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য দামি দ্রব্যও এর সঙ্গে যুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “কারণ সেগুলোর সাথে অনেক বাই প্রডাক্ট থাকে। এখানে শ্রম সস্তা, তাই বাই প্রডাক্ট আসলে অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে তৈরি হবে। এসব বাই প্রডাক্টের আন্তঃর্জাতিক বাজারও রয়েছে। “যেমন হীরার কাটিংয়ে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। এসব দ্রব্যর অনেক বাই প্রডাক্টও পাওয়া যায়। পেট্রোলের যেমন বাই প্রডাক্ট আসে বিটুমনি, পলিথিন; তেমন অন্যান্য দ্রব্যেরও হয়।”
দেশের ভেতরে সোনার বাণিজ্যিক ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানির লক্ষ্যে সোনা আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করা, আমদানি ও পরবর্তী বাণিজ্যিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, স্বর্ণালঙ্কার রপ্তানিতে নীতি সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে এ খাতের বিকাশের লক্ষ্যে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে ২০১৮ সালে দেশে স্বর্ণ নীতিমালা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই বছর অক্টোবরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন পাওয়ার পর ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ কার্যকর করা হয়। এরপর সোনা আমদানির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি গাইডলাইন তৈরি করে এবং ১৮টি প্রতিষ্ঠান এবং একটি ব্যাংককে অনুমোদিত গোল্ড ডিলার হিসেবে লাইসেন্স দেয়। বর্তমানে এসব অনুমোদিত গোল্ড ডিলাররাই সোনার বার এবং স্বর্ণালঙ্কার আমদানি করতে পারে। ওই নীতিমালায় সোনার বার এবং স্বর্ণালঙ্কার আমদানির সুযোগ থাকলেও অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক বা আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানির বিষয়ে কিছু ছিল না। কিন্তু রপ্তানি করতে চাইলে অবশ্যই নিজস্ব শোধনাগার থাকতে হয়। সে কারণে নীতিমালা সংশোধন করে এবার অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক, আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি এবং শোধনাগার স্থাপনের পথ তৈরি করা হল।