স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি ঢাবি শিক্ষার্থীদের

স্টাফ রিপোর্টার: পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার বিপরীতে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগ দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। গতকাল শুক্রবার ক্যাম্পাসের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশন’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কুশপুত্তলিকাও দাহ করেন।এদিকে হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক তাসনিম বিন মাহফুজ বলেন, ‘আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নিঃশর্ত পদত্যাগ চাই। তার কারণ হিসাবে বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অপরাধই যথেষ্ট। পুলিশ এর আগেও প্রথম আলো অফিসের সামনে নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলা চালিয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তারা নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘পুলিশ জুলাইয়ের ব্যর্থতার ক্ষোভ এখনো মেটাচ্ছে। এসব দায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এখনো কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে সর্বোচ্চ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তাই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে। পাশাপাশি অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’ জেনারেল সেক্রেটারি এসএম তানিম বলেন, ‘পুলিশের কাছেই মানুষ অনিরাপদ। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশি হামলার কোনো বিচার এখনো হয়নি। এর দায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে নিতে হবে।’ নির্বাহী সদস্য তৌকির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আজও জনগণের কল্যাণে কাজ না করে শক্র হয়ে কাজ করছে।’ আরেক সদস্য মোয়াজ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আজ থেকে ৪ মাস আগে পুলিশ সংস্কারের দাবিতে আমরা আন্দোলন করেছি। পুলিশের বিপক্ষে অভিযোগের শেষ নেই। দেশজুড়ে এখনো তারা নানা অপরাধে জড়িত হচ্ছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে এর দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় আমরা কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হব।’ হামলাকারীদের শাস্তি দাবি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের: আদিবাসী শিক্ষার্থী-জনতার কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। একই সঙ্গে দায়ী ও তাদের মদদদাতাদের রাজনৈতিক পরিচয় জনসমক্ষে প্রকাশসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে। শুক্রবার দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যেদিন সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রের সাংবিধানিক নাম ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ ও রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসাবে সংবিধানে ‘বহুত্ববাদ’কে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করে খসড়া প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, ঠিক সেদিন ও পরের দিন এই রাষ্ট্রের তথাকথিত জাতি গরিমার বলি হয়েছেন বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠী। তাদের গণতান্ত্রিক নাগরিক অধিকারের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে হামলা করেছে সংখ্যাগুরুর আম্ভরিতায় উজ্জীবিত সন্ত্রাসী ও রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনী। স্পষ্টত এই সরকার জাতি-ধর্ম-শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে শক্তিশালীর অন্যায়ের প্রতি দুর্বলতা ও শক্তিহীনের ক্ষোভের প্রতি কাঠিন্য পোষণ করছে। অথচ, গণতন্ত্রের জন্য আমাদের যে দীর্ঘ সংগ্রাম সেটারই আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে আমরা সদ্যই সমতা, বৈষম্যহীনতা, সমঅধিকার আর সমমর্যাদার উদ্দেশ্যে সমবেত হয়েছিলাম ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে। সেই সমবায়ের অংশীদার হয়েও, বিগত সময়ের মতো ‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশ’ ও নিজেদের ‘ঝরা পাতা’ হিসাবে আবিষ্কার করা আদিবাসী শিক্ষার্থী-জনতা স্বভাবতই আজ ক্ষুব্ধ। তাদের এই ক্ষুব্ধতার সঙ্গে আমরাও সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করি এবং তাদের প্রতি রাষ্ট্র-সরকার ও সংখ্যাগুরুর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বৃক্ষের ‘আদিবাসী’ নামাঙ্কিত পাতার প্রতি ইঙ্গিত করে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ (সম্ভবত ফরাসি থেকে ইংরেজিতে আগত (ংড়াবৎবরমহঃু শব্দটির অপভ্রংশ) নামক একটি ভুঁইফোঁড় সংগঠন আদিবাসীদের অবমাননাকর ‘উপজাতি’ তকমা দিয়ে সেই প্রচ্ছদটি অপসারণের অযৌক্তিক দাবি তোলে। এই সংগঠনের ন্যক্কারজনক আপত্তির প্রতি সম্মতি জ্ঞাপন করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) দেয়াল চিত্রের প্রচ্ছদটি বাতিল করে ব্যাখ্যা দেয় যে, আদিবাসী শব্দটি সংবিধানসম্মত নয় বিধায় প্রচ্ছদটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কী নিদারুণ বৈষম্যবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছে এ সরকার! সরকারের এমন বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রকাশ করতে ১৫ জানুয়ারি এনসিটিবি কার্যালয়ের সামনে আদিবাসী শিক্ষার্থী-জনতা বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়। শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে কোনো উসকানি ছাড়াই তথাকথিত ‘সভারেন্টি’র গুন্ডা বাহিনী লাঠি ও জাতীয় পতাকা মোড়ানো ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে আদিবাসী শিক্ষার্থী-জনতাকে দানবীয় কায়দায় গুরুতরভাবে আহত করে। আক্রমণের শিকার আদিবাসী শিক্ষার্থী-জনতার একটি বড় অংশ মারাত্মকভাবে আহত হয়ে বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সন্দেহাতীতভাবেই, রাষ্ট্র ও সরকারের এমন কদর্য চেহারা আমরা এত দ্রুত প্রত্যাশা করিনি। আমরা জানতে চাই, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সংগ্রামী শ্রেষ্ঠা, ম্রং, ইসাবাসহ গুরুতরভাবে আহত বাকি শিক্ষার্থীরা কিসের মাশুল দিচ্ছেন? হামলা চলাকালে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা যেহেতু স্বৈরাচারের সহযোগী পুলিশ বাহিনীকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, তাই আমরা এটাও জানতে চাই, বর্তমান সরকারও স্বৈরাচারী কায়দায় পুলিশকে ব্যবহার করছে কিনা? আগের দিন আদিবাসীদের ওপর হামলার সময় নিষ্ক্রিয় থাকা পুলিশ পরদিন ১৬ জানুয়ারি প্রতিবাদমুখর ছাত্র-জনতার ওপর হাসিনাশাহীর আমলের মতোই মারমুখী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আমরা স্পষ্টত বুঝতে পারছি, রাষ্ট্রের মদদে প্রথমে অসরকারি বাহিনী দিয়ে আদিবাসীদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা চালানো হয়েছে, পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র নিজেই সরকারি বাহিনী দিয়ে লাঠি, জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড হাতে দমনমূলক আচরণ করেছে। পুলিশের সংস্কার নিয়ে গরমাগরম আলাপ যখন চলমান, তখন পুলিশ বাহিনীর এই ন্যক্কারজনক হামলায় আমরা স্তম্ভিত ও ক্ষুব্ধ। অ-সরকারি (ওরফে ছদ্মবেশী সরকারি) ও সরকারি সব হামলাকারীর এবং তাদের মদদদাতাদের রাজনৈতিক পরিচয় আমরা জনসমক্ষে চাই। অত্যাবশ্যকীয়ভাবে, পরিচয় প্রকাশের পরপর যথাযথ প্রক্রিয়ায় আমরা এই ফৌজদারি অপরাধের শাস্তি চাই। সহিংস উদ্দেশ্যে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের কারণে এদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন মোতাবেক ব্যবস্থার দাবি জানাই। সরকার এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে অবশ্যই এই প্রচ্ছদ বাতিলের কারণ দর্শাতে হবে। সন্তোষজনক জবাব না থাকলে মেরুদ-হীনতার পরিচয় দেওয়া সংশ্লিষ্ট দায়ীদের শাস্তিস্বরূপ অপসারণ করতে হবে। এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ শনিবার বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ দিকে (মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।