স্টাফ রিপোর্টার: নতুন করে দেশের আরও ২ হাজার ৭১৬ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতায় ২ হাজার ৫১টি স্কুল ও কলেজ এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে ৬৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। এর আগে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) এক অনুষ্ঠানে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতঃপূর্বে সারা দেশে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৬ হাজার ৪৪৮টি। এর সঙ্গে বুধবারে নতুন তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান যোগ হবে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীন ১ হাজার ৬৫১টি এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের ৯৮৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছিলো। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, হঠাৎ করে আবারও করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না করে ছাত্র-ছাত্রীদের টিকার আওতায় এনে খোলা রাখার ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, সারা দেশে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হবে। তাদের পাঠ্যবই দেয়ার দুই সপ্তাহ পরে এসএসসি পরীক্ষা শুরু করা
সারা দেশে বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চমাধ্যমিক কলেজ, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান, শিক্ষার্থীদের সংখ্যা, পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং পাশের হার প্রভৃতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতাদি বা এমপিও সরকারিভাবে দিয়ে থাকে। এবার নতুন এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে গত বছরের ১০ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত আবেদন নেয়া হয়। এতে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার আবেদন জমা পড়ে। এরপর তা যাচাই-বাছাই করা হয়। চূড়ান্ত তালিকা শিক্ষামন্ত্রীর অনুমোদনের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন শেষে তালিকা প্রকাশ করা হলো।
নতুন এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীন ২ হাজার ৫১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬৬৬টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১ হাজার ১২২টি, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৩৬টি, উচ্চমাধ্যমিক কলেজ ১০৯টি ও ডিগ্রি কলেজ ১৮টি। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অধীন ৬৬৫টি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে এসএসসি ভোকেশনাল অথবা দাখিল ভোকেশনাল ৯৭টি, এইচএসসি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি ২০০টি, ডিপ্লোমা ইন অ্যাগ্রিকালচার দুটি, দাখিল মাদরাসা ২৬৪টি, আলিম মাদরাসা ৮৫টি, ফাজিল মাদ্রাসা ৬টি ও কামিল মাদরাসা ১১টি।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওর প্রাথমিক তালিকা থেকে বাদ পড়েছে মনে করলে প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও কমিটির সভাপতির যৌথ স্বাক্ষরে ১৫ দিনের মধ্যে সচিব বরাবর আপিল আবেদন করতে পারবেন। কোনো মিথ্য তথ্য ও প্রমাণ দাখিল করে এমপিওভুক্ত হলে পরবর্তী সময়ে তা প্রমাণিত হলে দায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী।
এমপিওভুক্তি নেই ৩২ উপজেলায়: দেশের মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের ৩২ উপজেলার একটি প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির অনুমোদন পায়নি। এছাড়া সিটি করপোরেশনভুক্ত ২২টি থানার একটি প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির অনুমোদনের জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। শিক্ষামন্ত্রী জানান, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের ক্ষেত্রে ১৮টি, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ২১৩টি এবং মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ১৫২টি উপজেলা থেকে এমপিওভুক্তির জন্য কোনো আবেদন পাওয়া যায়নি। এদিকে কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে ২২৩টি এবং মাদরাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে ২০০টি উপজেলা থেকে একটি প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির অনুমোদনের জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।
বিশেষ বিবেচনায় এমপিও: শিক্ষামন্ত্রী জানান, যেসব উপজেলায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি, সেখানে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া একটি প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ বিবেচনায় এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। আঞ্চলিক অসামঞ্জস্য দূর করার জন্য মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের ২৯টি, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনা করা হয়েছে। শিক্ষায় পশ্চাৎপদতা, অনগ্রসরতা বিবেচনায় নিয়ে এমপিওভুক্তির জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে না পারা মোট ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বাছাই করা হয়েছে। প্রতিটির জন্য শিথিল করা শর্ত এবং বাছাইয়ের যৌক্তিকতা উল্লেখ করা হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ নয়: করোনার সংক্রমণ বাড়লেও আপাতত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে না। ইতোমধ্যে ১২ বছরের বেশি বয়সি শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা হয়েছে। এর কম বয়সি শিক্ষার্থীদেরও টিকা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তাদের টিকার আওতায় আনা সম্ভব হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হবে না। আর সেটি সম্ভব না হলে ভিন্ন চিন্তা করা হবে।
ক্ষতিগ্রস্তদের বই বিতরণের পর এসএসসি: সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, সারা দেশে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হবে। বন্যা পরিস্থিতে মানুষ নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে পারলেও বইপত্র নিতে পারেনি। এমন কতজন শিক্ষার্থীর বই নষ্ট হয়েছে, সেই তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের পাঠ্যবই দেওয়ার দুই সপ্তাহ পরে এসএসসি পরীক্ষা শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন দীপু মনি। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় আমরা এসএসসি-সমমান পরীক্ষা স্থগিত করেছি। অনেক এলাকায় পানি নেমেছে, অনেক স্থানে এখানো পানি রয়েছে। সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি নেমেছে, সেখানে নানা ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তা নিরূপণ করা হচ্ছে।
ধর্মশিক্ষা বাদ দেওয়া হয়নি: দেশের পাঠ্যক্রম থেকে ধর্মীয় শিক্ষা ‘তুলে দেওয়া হচ্ছে’ বলে যে খবর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা চলছে, তা ‘মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা তুলে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। সম্প্রতি সংসদে একজন এমপির বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, একজন মাননীয় সংসদ-সদস্য পাঠ্যপুস্তকে ধর্মশিক্ষা বাদ দেওয়ার বিষয়ে সংসদে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। পরে আবার তিনিই স্পিকারকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, তার তথ্য সঠিক ছিল না এবং তার এ বক্তব্য এখনকার বইয়ের জন্য প্রযোজ্য নয়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অনেকে প্রশ্ন তুলছে যে নতুন শিক্ষাক্রমে ধর্মশিক্ষা তুলে দেয়া হয়েছে। এটি তারা না বুঝে বির্তক করছে। ধর্মশিক্ষা বাদ দেওয়া হয়নি আর হবেও না। বরং এতে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষক লাঞ্ছনা রোধে সামাজিক আন্দোলন: শিক্ষক লাঞ্ছনা ও অপদস্ত বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছের শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, একটি মহল উসকানি দিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এজাতীয় ঘটনা ঘটাচ্ছে। অনেকে দেখেও কোনো প্রতিবাদ করছে না। এটি শুধু সরকার অথবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একার দায়িত্ব নয়। এসব ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো সবার সামাজিক দায়িত্ব। শুধু ঘটনা ঘটল আর প্রশাসনিকভাবে আমরা ব্যবস্থা নিলাম তাতে এটি বন্ধ হবে না। বরং এটি প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। সেজন্য একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।