অবৈধ মজুত রোধে চলছে অভিযান ও জরিমানা আদায়
স্টাফ রিপোর্টার: আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধিসহ সাত কারণে বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। তাই গত ৫ মে আবারও তেলের দাম সমন্বয় করে নতুন দর নির্ধারণ করা হয়েছে। আর দাম বাড়বে এমন তথ্য পেয়ে অতি মুনাফা করতে খুচরা ও পাইকারি ডিলাররা তেলের অবৈধ মজুত করেছেন। লুকিয়ে রেখে তৈরি করেছেন কৃত্রিম সংকট। যে কারণে গত কয়েক দিন তেলশূন্য হয়ে পড়ে বাজার। পণ্যটি না পেয়ে ক্রেতাদের ফিরতে হয় খালি হাতে। আর যেখানে পাওয়া গেছে গুনতে হয়েছে বাড়তি টাকা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে গতকাল ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল জব্দ ও জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- মালয়েশিয়ায় শ্রমিকস্বল্পতার কারণে পাম অয়েলের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে সানফ্লাওয়ার অয়েলের সরবরাহ ৬০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সানফ্লাওয়ার ও পাম তেলের বিকল্প তেল হিসাবে সয়াবিনের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। লাতিন আমেরিকায় খরার কারণে সয়াবিন তেলের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহণ ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে পামতেলের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটন অপরিশোধিত সয়াবিন ২ হাজার মার্কিন ডলার ও পাম অয়েল এক হাজার ৯৫০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। মূলত এসব কারণে দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ অনুযায়ী গত পাঁচ মে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ভোজ্যতেলের দাম নতুন করে নির্ধারণ করে। সেই নির্ধারণ পদ্ধতি অনুযায়ী প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন এক হাজার ৭৯০ ডলার ও প্রতি টন পাম তেল এক হাজার ৭৫০ ডলার ভিত্তি মূল্য ধরে দেশের খুচরা বাজারে প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন ১৮০ টাকা, বোতল সয়াবিন ১৯৮ টাকা ও পাঁচ লিটারের বোতল সয়াবিন ৯৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি প্রতিলিটার খোলা পাম অয়েল ১৭২ টাকা দরে নির্ধারণ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজারে ভোজ্যতেল সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য রেপসিড অয়েল/ক্যানোলা ও সানফ্লাওয়ার অয়েলের শুল্ক কমানোর জন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। শুল্ক কমানো হলে বাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের বিকল্প হিসাবে বাজারে সরবরাহ বাড়বে।
সূত্র জানায়, দেশে এখন পর্যাপ্ত তেলের সরবরাহ আছে। মিল থেকেও সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু দাম বৃদ্ধির তথ্যের ওপর ভিত্তি করে খুচরা বিক্রেতা ও পাইকারি ডিলাররা বেশি মুনাফার লোভে তেল মজুত করেছেন। যে কারণে ঈদের আগ থেকে খুচরা বাজারে তেলের সংকট দেখা দেয়। ঈদের পর তা তীব্র আকার ধারণ করে। পরিস্থিতি এমন হয়, বাজারে তেল নেই। ক্রেতারা পণ্যটি কিনতে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। আর কিছু দোকানে পাওয়া গেলেও উচ্চ মূল্য দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে মাঠে নামে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদ্যস্যরাও কঠোর ভূমিকা পালন করছে। তদারকিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলের খুচরা ও পাইকারি ডিলারের অবৈধভাবে মজুত করা তেল বের হতে শুরু করে। করা হয় জরিমানা। এমন পরিস্থিতিতে ভোক্তা পর্যায়ে তেল দৃশ্যমান হতে শুরু করে। পাশাপাশি মিল পর্যায়ে থেকে নতুন দামের তেল বাজারে ছাড়া হলে সরবরাহ আরও বাড়ে। তবে সরবরাহ বাড়লেও বাজারে সোমবার পর্যন্ত সীমিত পরিসরে তেল পাওয়া যাচ্ছে।