স্বল্প উৎপাদনে শ্রমিক পুষতে গিয়ে দিশেহারা মাছের খাবার তৈরি মিল মালিকরা
মাজেদুল হক মানিক: অব্যাহত লোডশেডিংয়ের বিরূপ প্রভাব পড়েছে মেহেরপুরের মৎস্য শিল্পে। মাছের খাবার, পানি সরবরাহ কার্যক্রমে ছেদ পড়ায় মাছ চাষ উৎপাদনে ভাটা পড়েছে। অপরদিকে স্বল্প উৎপাদনে শ্রমিক পুষতে গিয়ে দিশেহারা মাছের খাবার তৈরি মিল মালিকরা। স্থানীয় মিলে পর্যাপ্ত খাবার জোগান না থাকায় চড়া দরে খাবার কিনতে হচ্ছে মাছের খামারীদের। অনিয়ন্ত্রিত লোডশেডিংয়ে শত কোটি টাকার মৎস্য শিল্পে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
মেহেরপুরে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে মৎস্য খাত। বিশেষ করে গাংনী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম মৎস্য গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এ এলাকার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস মাছের পোনা ও মাছ চাষ। মাছের খাবার সরবরাহের লক্ষ্যে গড়ে উঠেছে ফিস ফিড মিল। এক সময়ের রাইস মিলগুলো স্থানীয়ভাবে মাছের খাবার তৈরি থেকে মিলে রুপান্তরিত করা হয়েছে। অর্ধশতাধিক মিলে প্রতিদিন প্রায় দেড়শো টন খাবার তৈরি হয়। আর মিলগুলোতে কাজ করেন কয়েকশ শ্রমিক। এক ঘন্টার লোডশেডিং সরকারি ঘোষণা বাস্তবায়ন না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন মিল মালিক, শ্রমিক আর মাছের খামারীরা। ২৪ ঘন্টায় ৮-১০ ঘন্টা পর্যন্ত লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে এ এলাকাগুলোতে। ফলে মাছের খাবার উৎপাদন যেমনি তলানিতে নেমে এসেছে; তেমনি কমে যাচ্ছে মাছ উৎপাদন।
গাংনী উপজেলা মৎস্য অফিসার খন্দকার সহিদুর রহমান জানান, এ উপজেলায় ২ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে চার হাজারের ওপরে পুকুর রয়েছে। যেখানে পাঙ্গাস, কৈ, শিং, মাগুর, মনোসেক্স ও অন্যান্য শাদা মাছ উৎপাদন করা হচ্ছে। বছরে এখন উৎপাদন হয় ৬ হাজার ৩২০ মে.টন মাছ। যার বাজার মূল্য (১৫০ টাকা কেজি) প্রায় শত কোটি টাকা। অপরদিকে মাছ চাষে সহায়তা করতে গড়ে উঠেছে খাবার তৈরি মিল। সব মিলিয়ে এখানে বিনিয়োগ যেমনি রয়েছে তেমনি শত শত শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, শিল্প এলাকা বিবেচনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য পল্লী বিদ্যুত কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে।
ষোলটাকা গ্রামে অবস্থা জেলার একমাত্র অটো ফিস ফিড মিল ফাতেহা ফিস ফিড মিল মালিক আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন ৪০-৫০ মে.টন খাবার তৈরি করা হয়। কর্তৃপক্ষের ইচ্ছেমতো লোডশেডিং দেয়ার ফলে উৎপাদন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শ্রমিক ও অন্যান্য খরচ চালানো যাচ্ছে না। ফলে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে তিনি চরম বিপাকে পড়েছেন।
মৎস্য খামারী ষোলটাকা গ্রামের ময়নাল হক বলেন, ভুট্টা, গম, খৈল, চাউলের পালিশসহ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাদ্য দিয়েই মাছের পুষ্টিকর উত্তম খাবার তৈরি হয়। মিলগুলোতে নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে খাবার তৈরি করে নেন খামারীরা। এখন বাইরে থেকে খাবার কিনতে গিয়ে ব্যয় বেড়েছে মাছ চাষে।
এদিকে শুধু মাছের খাবার উৎপাদন খামারই নয় মাছ পরিবহনের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
মাছ চাষিরা জানান, বাইরের জেলায় মাছ সরবরাহ করা হয় প্লাস্টিকের ড্রামে। মাছ ধরার পর বিদ্যুৎ অভাবে পানি দিয়ে ড্রাম ভরা যাচ্ছে না। এতে সময়মতো সরবরাহ করতে না পেরে মাছের বাজারে কম দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষের সাথে। শিল্পএলাকা বিবেচনায় মাছের গ্রাম এলাকা গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানান মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির ডিজিএম (টেকনিক্যাল) যতীন মল্লিক।
তিনি বলেন, ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন গ্রামে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠেছে। ফলে লোডশেডিং ম্যানেজমেন্ট নিয়ে বিপাকে রয়েছে পল্লী বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ। তারপরও মিলগুলোর বিষয়ে নতুন পরিকল্পনা করা হচ্ছে।