স্টাফ রিপোর্টার: দেশে গত একদিনে নতুন করে আরও ১৬ হাজার ৩৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। একদিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটের সময় গত বছরের ২৮ জুলাই। সেদিন ১৬ হাজার ২৩০ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। মহামারির মধ্যে সেটিই ছিল সর্বোচ্চ। নতুন শনাক্তদের নিয়ে করোনায় দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১৫ হাজার ৯৯৭ জনে। আর আক্রান্তদের মধ্যে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। এ নিয়ে এ ভাইরাসে মৃত্যু ঠেকল ২৮ হাজার ২৫৬ জনে।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সর্বোচচ সংক্রমণের সময় গত বছর ৫ ও ১০ আগস্ট এই দুইদিনে ২৩০ করে ৪৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সে তুলনায় বর্তমানে মৃত্যুর সংখ্যা কম। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, করোনার ওমিক্রন ভয়াবহ রকমের সংক্রামক। ফলে সংক্রমণের আগের রেকর্ড তো ভাঙবেই; বরং এক দিনে সংক্রমণ ৫০ হাজারের ঘর অতিক্রম করবে খুব শিগগিরই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৪৯ হাজার ৬৯৭টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর সরকারি-বেসরকারি ৮৫৭ ল্যাবরেটরিতে ৪৯ হাজার ৪৯২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ সময় নতুন করে আরও ১৬ হাজার ৩৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে। শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ৪০ শতাংশ। দেশে ১২ জানুয়ারি শনাক্ত রোগীর মোট সংখ্যা ১৬ লাখের ঘরে পৌঁছেছিল। এরপর মাত্র ১৩ দিনে সেই তালিকায় যুক্ত হল আরও এক লাখ নাম। আর সরকারি হিসাবে এক দিনে দেশে সেরে উঠেছেন ১ হাজার ৯৫ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৪ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এক দিনে করোনায় মারা যাওয়া ১৮ জনের মধ্যে ১২জন পুরুষ ও ৬ জন নারী। এর মধ্যে দুটি শিশু রয়েছে। মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৮ জন ও চট্টগ্রাম বিভাগে মারা গেছেন ৬ জন। রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে একজন করে মারা গেছেন। ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সিদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। ৬১ থেকে ৭০ বছরের আছেন চারজন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের তিনজন, ৯১ থেকে ১০০ বছর এবং আর ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সসীমার মধ্যে দুইজন করে মারা গেছেন। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১০ জন আর বেসরকারি হাসপাতালে আটজন। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওই বছরের শেষদিকে সংক্রমণ কিছুটা কমলেও গত বছরের এপ্রিল থেকে জুন-জুলাই পর্যন্ত করোনার ডেল্টা ধরন ব্যাপক আকার ধারণ করে। বছরের শেষ কয়েক মাস পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল থাকলেও এ বছরের শুরু থেকে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টসহ করোনার বিস্তার আবারও বাড়তে শুরু করে।
অতি আত্মবিশ্বাসে সংক্রমণ বাড়ছে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টার: মানুষের অতি আত্মবিশ্বাসের কারণে সংক্রমণ বাড়ছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল মঙ্গলবার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেন, এরকম একটা পরিস্থিতির কারণে ১ থেকে ৩২ শতাংশে উঠেছে সংক্রমণের হার। এটা খুবই আশঙ্কাজনক। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে সংক্রমণ বাড়ছে, বাড়ছে বাংলাদেশেও। তবে আশার খবর হলো, ইউরোপে কমছে, ভারতে কমছে। তাদের আক্রান্তের সংখ্যা লাখ লাখ ছিল, এখন কমে আসছে। ওমিক্রন মাইল্ড হতে পারে কিন্তু তার সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেশি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সংক্রমণ যখন বেশি হবে তখন মৃত্যুও বেশি হবে।
করোনা রোগীদের চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি। বলেন, রাজধানীতে সরকারি যে হাসপাতাল আছে, সেগুলোর ২৫ শতাংশ শয্যা ভরে গেছে।
সংক্রমণ বাড়লেও সেই হারে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে না উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, এটার কারণ হচ্ছে টিকা। অনেক মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। ফলে হসপিটালাইজেশন কম হবে। আমাদের টার্গেটেড আরো তিন কোটি লোক টিকা নেয়ার বাকি আছে। ট্রান্সপোর্ট, ইন্ডাস্ট্রি, কনস্ট্রাকশন সেক্টরে বাকি আছে। তারা এগিয়ে আসেনি টিকা নিতে। তাদের কীভাবে টিকা দেয়া যায় সে বিষয়ে আমরা বৈঠক করেছি।
হাসপাতালে রোগী যারা আসছেন তাদের ৮৫ শতাংশই টিকা নেননি এবং যারা মারা যাচ্ছেন তাদেরও ৮৫ শতাংশই টিকা নেননি বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, বাসার বাইরে মানুষ সেভাবে মাস্ক পরে না। স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। ওমিক্রন মাইল্ড হওয়ায় আমরা যদি ইচ্ছামতো চলাফেরা করি তাহলে ক্ষতি হবে। আমাদের দেশ অনেক ভালো অবস্থায় আছে। আমাদের সব সূচকই ভালো আছে। আমরা যদি ফেল করি তাহলে সূচকগুলো ভালো থাকবে না।
আগেও বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকরা যেভাবে এগিয়ে এসেছিলেন, এবারও সেভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আশা করি এবারও আপনারা আগের মতো পাশে থাকবেন।