স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্র কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। সে সময় তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে, গণতন্ত্রকে হত্যা করে, বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। তারা সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। এদেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির নামে তারা লুটপাটের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা করেছিল। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে রক্ষীবাহিনী তৈরি করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে। এর মধ্যদিয়েই দেশে গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- শুরু করেছিল। ‘বিএনপি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে’- আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এই সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য বিভিন্নভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করছে। তাদের সত্যের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। এ ধরনের কথা বলে দেশের জনগণকে তারা বিভ্রান্ত করতে চায়। তারা দিনের ভোট রাতে করে গত ১৪ বছর ধরে গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে। দেশের রাষ্ট্র কাঠামো এক এক করে ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে আমরা ১০ দফা দিয়েছিলাম। ১০ দফার মূলকথা ছিল, এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগ করতে হবে। অবৈধ সংসদ বাতিল করতে হবে। এদেশে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন হতে হবে। মানুষ যেন নিজের হাতে ভোট দিয়ে তাদের পছন্দমতো প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে, যেন জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। ১০ই ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপি’র সমাবেশ প- ও ব্যর্থ করতেই সরকার গ্রেফতার, হামলা-মামলা করেছে বলে অভিযোগ করে বিএনপি নেতা মোশাররফ বলেন, এত কিছু করেও বিএনপিকে দমাতে পারেনি। বিএনপি ফিনিক্স পাখির মতো। বিএনপি আরও বেশি শক্তিশালী হয়েছে, সমর্থন আরও বেড়েছে। নানা বাধার পরও বিএনপি সব বিভাগীয় সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করেছে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের দুর্নাম বয়ে এনেছে। দেশের বিচারব্যবস্থা, গণতন্ত্র, সামাজিক অবকাঠামো সব ধ্বংস করে দিয়েছে। চাপাবাজি করে বলছে, বিএনপি’র আমলে নাকি রাষ্ট্র ধ্বংস হয়েছে। উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা জনগণ বিশ্বাস করবে না। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি’র ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমান বলেন, শেখ হাসিনা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আরেকটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে চায়। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। আমরা বলতে চাই, ২০১৪ এবং ২০১৮ সাল ভুলে যেতে হবে। বাংলাদেশে নির্বাচন হলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। সেটা যদি আপনি (প্রধানমন্ত্রী) না করেন তবে ’৫২, ’৬৯, ’৯০-এর মতো আরেকটি গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত করা হবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ইনশাআল্লাহ্ জনগণের সরকার নির্বাচিত হবে। সেই সরকার হবে বিএনপি সরকার। সভাপতির বক্তব্যে মহিলা দলের সভাপতি মির্জা আফরোজা আব্বাস বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগের বিএনপি’র সমাবেশ কেন্দ্র করে সরকার ক্রাকডাউন করে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা সমাবেশ বানচাল করতে চেয়েছিল। কিন্তু লাভ হয়নি। এ সরকারের আমলে নারীরা বেশি নির্যাতিত হয়েছে। নারীদের চোখের জল তাদের গুম, খুন ও গ্রেপ্তার হওয়া স্বামী-সন্তানদের জন্য বিসর্জন দিচ্ছে। গুলি করে আমাদের ভাইদের হত্যা করছে সরকার। আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা আর ভয় করি না। মহিলা দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খানের সঞ্চালনায় বিএনপি’র গ্রেপ্তার হওয়া সব নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এ মানববন্ধন আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেত্রী ও কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।