রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন দল হলে হতাশ হবে জনগণ : তারেক রহমান

স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করলে পলাতক ফ্যাসিস্টদের অবস্থান শক্তিশালী হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতি কটু মন্তব্য, প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য ও ঝগড়াসুলভ মন্তব্য জনগণের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত। এসব তর্ক-বিতর্কে সময়ের অপচয় হয়। অতীত থেকে বেরিয়ে এসে স্বচ্ছ পথে তরুণদের এগিয়ে যেতে হবে। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনকে স্বাগত জানায় বিএনপি। তবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তা হলে, হতাশ হবে জনগণ। গতকাল শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে শিক্ষক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় শিক্ষক দিবস এবং বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষ্যে এই সমাবেশ হয়। সারাদেশ থেকে আসা কয়েক হাজার শিক্ষক এতে অংশ নেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সন্ধ্যায় জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলের নেতাকর্মীর উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, নির্বাচনই হচ্ছে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার অন্যতম প্রধান কার্যকরী হাতিয়ার। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করার অর্থ নিজেদের অজান্তে পরাজিত পলাতক ফ্যাসিস্টদের অবস্থানকে শক্তিশালী করা। সর্বস্তরের নেতাকর্মীর প্রতি বরাবরের মতোই আহ্বান থাকবে, আপনাদের কোনো কার্যক্রম নিয়ে কেউ যাতে বিভ্রান্তি ছাড়ানো কিংবা বিতর্ক সৃষ্টির সুযোগ না পায়, সে বিষয়ে অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে। জনগণ সঙ্গে থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের পরাজিত করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘পুথিগত বিধির ওপর গণতন্ত্রের বিকাশ নির্ভর করে না। গণতন্ত্র বিকশিত এবং শক্তিশালী হয় প্রতিদিনের কার্যক্রম, আচরণে এবং চর্চায়। আমাদের মধ্যে অবশ্যই ভিন্নমত ভিন্ন পথ থাকবে– এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে আমাদের উদ্দেশ্য এক এবং অভিন্ন। আমাদের সবার উদ্দেশ্য একটি উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা।’
তারেক রহমান বলেন, পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র কিংবা বাংলাদেশের পক্ষের গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে অযাচিত ভুল বোঝাবুঝির কারণে গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন মানবিক দেশ প্রতিষ্ঠার সুযোগ এবং সম্ভাবনা যেন হুমকির সম্মুখীন না হয়।
তারেক রহমান বলেন, সংস্কার এবং নির্বাচন দুটিরই পক্ষে বিএনপি। সংস্কার নাকি নির্বাচন– কেউ কেউ এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রশ্ন নিয়ে কূট তর্ক করার অপচেষ্টা করেছে। দেশের কোটি কোটি পরিবারের কাছে এই মুহূর্তে নির্বাচন এবং সংস্কারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, সংসার পরিচালনা করা। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অন্যদিকে, জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে ভ্যাটের বোঝা। ফলে দেশের কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের মানুষ এমনকি নি¤œ-মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছেও সংসার টেকানোই অনেক ক্ষেত্রে দায় হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবারে চলছে নীরব হাহাকার।
তিনি বলেন, কীভাবে জনগণের নিত্যদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা যায়, কীভাবে বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য জনগণের হাতের নাগালে রাখা যায়, কীভাবে জনগণকে ফ্যাসিস্টদের আমলের মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই দেয়া যায়, কীভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় করা সম্ভব, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়– অন্তর্র্বতী সরকারের সামনে অগ্রাধিকারের তালিকায় এই বিষয়গুলো থাকা অত্যন্ত জরুরি। জনগণ বিশ্বাস করে, অন্তর্র্বতী সরকারের মতো সর্বজন সমর্থিত সরকারের পক্ষেই বাজার সিন্ডিকেটের কবল থেকে জনগণকে মুক্তি দেয়া সহজ। এখন প্রশ্ন, অন্তর্বর্তী সরকার এতদিনেও কেন বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। জনগণের ওপর কেন উল্টো ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এখনও কেন বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য চলছে। এমন পরিস্থিতিতে জনগণের মনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক-তাহলে কি সরকারের কেউ কেউ অন্য কোনো ইস্যুতে বেশি মনোযোগী, নাকি সরকার পারছে না। তবে তিনি এও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা মনে করি, এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। কারণ, হাজারো শহীদের রক্ত মাড়িয়ে একটি গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে এই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, দেশের ছাত্র-তরুণরা রাষ্ট্রের রাজনীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েছে। এটি অবশ্যই ইতিবাচক দিক। এসব তরুণই গত দেড় দশকে একটি নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকারবঞ্চিত তরুণদের কেউ যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে, অবশ্যই বিএনপি সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। তবে কোনো প্রশ্নবিদ্ধ পথে নয়, পথটি হওয়া উচিত স্বচ্ছ এবং স্বাভাবিক।
তারেক রহমান বলেন, এই সরকারের সঙ্গে কোনো ভুল বোঝাবুঝি, অযথা কূট তর্ক সময়ের অপচয় বলে মনে করি। তবে একই সঙ্গে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, জনগণ যদি বৃহত্তর স্বার্থে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা ধৈর্য ধরে মানতে পারে, তাহলে যারা সরকারে রয়েছেন তাদের ধৈর্য ও সহনশীলতা আরও অনেক বেশি থাকা জরুরি।
শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য জোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বিভিন্ন জেলার শিক্ষকরা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলনসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।