রংপুরে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় ৫ সিএনজি-যাত্রীসহ ঈদের ছুটিতে প্রাণ গেল ১৩ জনের

ডেস্ক নিউজ:

দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে চার জেলাই মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের।  দুর্ঘটনায় হতাহতদের মধ্যে বেশিরভাগই ঈদ উপলক্ষে ঘুরতে বের হয়েছিলেন। অনেকে ঈদে আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন।

বুধবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পৃথক দুর্ঘটনায় চার জেলায় ১৩ জন নিহত হন।  তারমধ্যে- যশোরে বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধু, রংপুরের পাগলাপীরে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় ৫ সিএনজি-যাত্রী, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার মোল্লাকান্দি এলাকায় বাসের চাপায় অটোভ্যানের চালকসহ তিনজন এবং পঞ্চগড়ে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বেরিয়ে তিন স্কুলছাত্র নিহত হন। এছাড়াও অন্যান্য আরও বেশকয়েকটি জেলায় দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।

যশোর:

যশোরের চৌগাছায় বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা লেগে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। বুধবার (৪ মে) সন্ধ্যা ৬টার দিকে চৌগাছার ইলিশমারী ঈদগাহপাড়া ও মহেশপুরের মদনপুর মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু দুর্ঘটনার বিষয়ে ব্যবস্থা ও তাদের লাশ নিয়ে ঠেলাঠেলি করছে চৌগাছা ও মহেশপুর থানা পুলিশ।

নিহত শাহিনুর রহমান (২২) চৌগাছার নারায়ণপুর ইউনিয়নের হাজরাখানা গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে ও সাগর হোসেন (১৮) একই গ্রামের বাবর আলীর ছেলে।

নারায়ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান বলেন, ‘শাহিনুর ও সাগর মোটরসাইকেলে হাজরাখানা গ্রাম থেকে মহেশপুর উপজেলার বিদ্যাধরপুরে যাচ্ছিলেন। মহেশপুরের মদনপুর মোড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ধাক্কা লেগে ঘটনাস্থলেই শাহিন নিহত হন। স্থানীয়রা আহত সাগরকে উদ্ধার করে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তারা অতিরিক্ত গতিতে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন। কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ধাক্কা লেগে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক উত্তম কুমার বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। শরীরের জখম দেখে বোঝা যাচ্ছে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে। তাদের লাশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে।’

চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। ঘটনাটি মহেশপুর থানার ভেতরে ঘটেছে। ওই থানার পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নেবে।’

জানতে চাইলে মহেশপুর থানার ওসি মো. সেলিম মিয়া বলেন, ‘খবর শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আমাদের থানার অধীনে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করতে পারেনি। স্থানীয়রা আমাদের জানিয়েছে ঘটনাটি চৌগাছা থানার ভেতরে। ওই থানার পুলিশ লাশ উদ্ধার করে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। আমাদের থানার অধীনে হলে আমরা ব্যবস্থা নিতাম।’ 

রংপুর:

রংপুর সদরের পাগলাপীরে মাইক্রোবাসের সঙ্গে থ্রি-হুইলার মাহিন্দ্রার মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত চারজন।  বুধবার (৪ মে) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার পাগলাপীর সলেয়ালা বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

রংপুর সদর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহতরা হলেন- তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি খাড়ুয়াবাধা গ্রামের আমজাদ হোসেন (৫০), ইকরচালীর দোহাজারী ছুটহাজীপুর গ্রামের মাহিন্দ্রাচালক ছেয়াদুল ইসলাম ছোপড়া (৩৭) ও নাজমা বেগম (৩৫)। বাকি দুইজনের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। এদের নাজমা বেগম নামে একজনসহ  আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মরদেহ তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ বিষয়ে তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব মোর্শেদ জানান, নিহতদের মধ্যে দুইজনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। আহতদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

মাদারীপুর:

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার মোল্লাকান্দি এলাকায় বাসের চাপায় অটোভ্যানের চালকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এসময় ঢাকাগামী চাপা দেয়া ‘আমানত শাহ’ বাসটি খাদে পড়ে যায়। এতে আহত হয় আরো অন্তত ছয় যাত্রী। বুধবার রাত ৮টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন।

নিহতরা হলেন- রাজৈর উপজেলার নড়ারকান্দি গ্রামের শাজাহান শেখের ছেলে আমির শেখ (৩৫), দুর্গাবর্দ্দি গ্রামের মজিদ তপাদারের ছেলে শান্ত তপাদার (২৩) ও আমগ্রাম ইউনিয়নের তেলিকান্দি গ্রামের অটোভ্যানচালক নূরনবী (৪০)।

রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, রাত ৮টার দিকে ‘আমানত শাহ’ বাসটি ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। এসময় অপর দিক থেকে আসা অটোভ্যানের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই অটোভ্যানেরচালক নূরনবী মারা যায়। আর অটোভ্যানের যাত্রীর মধ্যে শান্ত তপাদার ও আমির শেখকে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পরে মারা যায়। এসময় বাসের আরো ছয় যাত্রী আহত হয়। তাদেরও হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

ওসি আরো জানান, বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। পরে বিক্ষুব্ধরা বাসের গ্লাস ভাঙচুর করে। এখনো বাসটি খাদে পড়ে আছে। নিহত ও আহতের পরিবার থানায় অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুঘর্টনা ঘটেছে বলেই ধারণা করা যাচ্ছে।

পঞ্চগড়:

ঈদে পঞ্চগড়ে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বেরিয়ে তিন স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। তারা তিন জন বাড়ির পাশের ভিতরগড় মহারাজার দিঘি বেড়াতে যাচ্ছিল। বুধবার (৪ মে) বিকালে পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের পুকুরীডাঙ্গা বালুরঘাট এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম।

নিহতরা হলো- হাফিজাবাদ ইউনিয়নের জিয়াবাড়ি খালপাড়া এলাকার পয়গাম ইসলামের ছেলে নতুন ইসলাম (১৬), একই এলাকার তারেক বিল্লালের ছেলে মাহাবুবার রহমান শিশির (১৭) ও আব্বাস আলীর ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক (১৬)। এর মধ্যে শিশির হাফিজাবাদ দ্বারিকামারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পাস করেছে। আবু বক্কর সিদ্দিক একই স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নতুন, শিশির ও সিদ্দিক তিন জনে মিলে বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেলে করে ভিতরগড় মহারাজার দিঘি বেড়াতে যাচ্ছিল। তালমা-মডেলহাট সড়কের পুকুরীডাঙ্গা বালুরঘাট এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলের হাতলে (হ্যান্ডেল) লাগলে তিন আরোহীর মোটরসাইকেলটি সড়কের পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে তাদের মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত লাগে। গুরুতর অবস্থায় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রুকসানা তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন।

Comments (0)
Add Comment