স্টাফ রিপোর্টার: যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের সঙ্গে কোনোরকম আলোচনা ছাড়াই রমজানে সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আর এতে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে দলটির সঙ্গে গত ডিসেম্বর থেকে যুগপৎভাবে আন্দোলন করে আসা জোটগুলোতে। তাই ঘোষিত এসব কর্মসূচি যুগপৎভাবে কোনো-কোনো জোট পালন নাও করতে পারে। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা বলেছেন, আন্দোলনের সঙ্গীদের সঙ্গে কোনোরকম আলোচনা ছাড়াই হুট করে প্রথম রমজানের ইফতার অনুষ্ঠানে সাত দিনের কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বসেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারপর বিএনপির পক্ষ থেকে যুগপৎ সঙ্গীদের কর্মসূচির প্রেস নোট পাঠানো হয়। আলোচনা ছাড়াই হুট করে বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণা যুগপৎ সঙ্গীদের অনেকে অপমানিত বোধ করেন। যার ফলে, জোটগুলোর নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এই কারণে কোনো-কোনো জোটের বিএনপির সঙ্গে যুগপৎভাবে এই কর্মসূচি পালন না করার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবার কোনো-কোনো জোট এসব কর্মসূচি আগে-পরে করে পালন করতে পারে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারসহ ১০ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রথম রমজানে (শুক্রবার-২৪ মার্চ) ৭ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এরমধ্যে ১ এপ্রিল সারাদেশে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি। ৮ এপ্রিল সারাদেশের মহানগরের থানা পর্যায়ে ও জেলার উপজেলা পর্যায়ে বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি। আর ৯-১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বিভাগীয় শহরগুলোতে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারাদেশের সব ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রচারপত্র বিলি, মানববন্ধন করা হবে। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বিএনপি তাদের মতো করে প্রোগ্রাম (কর্মসূচি) দিয়েছে। সেটা নিয়ে এখনও আমাদের মঞ্চের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। আগামীকাল মঞ্চের বৈঠক আছে, সেখানে রমজানের কর্মসূচি, ঈদের পরের আন্দোলনের কর্মসূচি এবং দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। বিএনপির আরেক যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী ১২ দলীয় জোটের শরিক দল বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, আমরা ১ এপ্রিল যুগপৎভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো। আর ৮ এপ্রিল লিফলেট বিলি না করে আগের দিন ৭ এপ্রিল ১২ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে লিফলেট বিলি করতে পারি। নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিলুপ্ত হওয়া বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের একটি দলের শীর্ষ নেতা বলেন, আলোচনা ছাড়া বিএনপির হুট করে কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া নিয়ে আমাদের জোটের মধ্যে অধিকাংশ নেতাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সবার একটাই কথা ছিলো-বিএনপি কী আমাদের তাদের সারভেন্ট (কৃতদাস) মনে করে নাকি। তারা কোনো আলোচনা ছাড়াই একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবে, আর আমরা সেটা পালন করবো। তিনি আরও বলেন, তারপরও সবাইকে বুঝিয়ে কর্মসূচি পালন করতে রাজি করানো হয়েছে। তবে বিএনপির সঙ্গে পরবর্তী বৈঠকে এই বিষয়টি তুলে ধরা হবে। কেন তারা শরিকদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া এভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করলো। নাম না প্রকাশ করার শর্তে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক একটি দলের শীর্ষ নেতা বলেন, কোনো আলোচনা ছাড়াই বিএনপি একতরফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এটা কোনো ভালো লক্ষণ নয়। তারা তাদের সাবেক জোটের সঙ্গে এটা করতে পারে, কিন্তু আমাদের সঙ্গে এটা করলে চলবে না। শরিকদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বিএনপি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কি না জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই বিষয়ে আমার কোনো দায়িত্ব নেই। আপনারা জানেন, শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য দলের পক্ষ থেকে লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। তারাই ভালো বলতে পারবে, কর্মসূচি নিয়ে শরিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না। এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, কর্মসূচি আগে যেভাবে শরিকদের জানানো হতো, এবারও সেভাবে জানানো হয়েছে। আগেও কর্মসূচি সাধারণ নেতাকর্মীদের জানানোর আগে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জানানো হতো, এবারও সেটা করা হয়েছে। তারা হয়ত এটা বলতে পারে যে, রমজানের মধ্যে কর্মসূচি ঘোষণা নিয়ে তাদের সঙ্গে সরাসরি কেন আমরা আলোচনা করিনি। এখন এটা নিয়ে তাদের আপত্তি থাকলে আমরা বসবো। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা বলছেন, বিএনপির মতো একটি বড় দলের কাছ থেকে এমন দায়িত্ব-জ্ঞানহীন আচরণ আশা করা যায় না। আবার এই মুহূর্তে তাদের ঘোষিত কর্মসূচি যুগপৎভাবে পালন না করলে বলবে, সরকারের দালাল হয়ে গেছি। টাকা খেয়ে আন্দোলন থেকে পিছু হটছি। অন্যদিকে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের মধ্যে বিভেদ, দ্বন্দ্ব দেখা দিলে সেটাকে সরকারও বিভিন্নভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে। ফলে আন্দোলনের শুরুতে তা নষ্ট হয়ে যাবে এবং দেশবাসীর কাছেও খারাপ বার্তা যাবে। সেটা যেন না হয় তাই আমরা রাজধানীতে কেন্দ্রীয় ১ ও ৮ এপ্রিলের দুটি কর্মসূচি পালন করবো। আর ৯ এপ্রিল থেকে ১৩ পর্যন্ত বিভাগীয় কর্মসূচিগুলো পালন নাও করতে পারি। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী গণফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, তারা (বিএনপি) আলোচনা ছাড়া কর্মসূচি ঘোষণা করলেও আমরা যুগপৎভাবে তা পালন করবো। আন্দোলন নিয়ে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হোক তা আমরা চাই না।