স্টাফ রিপোর্টার: মানবাধিকার লঙ্ঘন’র অভিযোগে র্যারব এবং এর সাবেক ও বর্তমান ছয় কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ঘটনা দেশের জন্য চরম লজ্জার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘কী লজ্জা। আমাদের পুলিশ প্রধান, র্যাব প্রধান তাদের যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটা দেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কী কারণে এ নিষেধাজ্ঞা, তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। বেআইনিভাবে মানুষ হত্যা করেছেন। সুতরাং জনগণের কাছে এর জবাব তো দিতেই হবে।’ শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন-জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, আহসান হাবিব লিংকন, কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপির আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, এনডিপির আবু তাহের, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, বিএনপি নেতা বরকত উল্লাহ বুলুর ছেলে ওমর শরীফ মো. ইমরান প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের এ অভিযোগের খবরে তিনি বিস্মিত হননি। তিনি বলেন, ‘পুলিশ প্রধান ও র?্যাব প্রধানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এটাকে আমি চমক মনে করি না। আমি মনে করি, এটি অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। এটাই তাদের পরিণতি। যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেন, যারা মানুষের অধিকার কেড়ে নেন, যারা জনগণকে হত্যা করেন-তাদের পরিণতি এমনই হয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে না ডাকা লজ্জার বলে অভিহিত করে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমরা এতদিন ধরে বলে আসছি-বাংলাদেশে মানবাধিকার হরণ করা হচ্ছে। আমরা বলেছি, এখনো বলছি, এ সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে, পুলিশকে ব্যবহার করছে। প্রশাসনকে ব্যবহার করে নির্মমভাবে মানুষকে হত্যা করছে।’ তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে রাখা উচিত-তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী-কর্মকর্তা। তারা কোনো ব্যক্তি বা দলের কর্মকর্তা নন। সংবিধানের বাইরে গিয়ে দায়িত্ব পালন করা তাদের দায়িত্ব নয়। যদি কেউ সেই কাজ করেন তাহলে একদিন না একদিন পরিণতি ভোগ করতেই হবে। আমরা জানি, কারা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে বেগমপাড়ায় বাড়ি বানাচ্ছেন। একদিন ওই সম্পদ আপনারা ভোগ করতে পারবেন না।
দুর্বার আন্দোলনের মধ্যদিয়ে সরকার পতনের হুঁশিয়ারি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি আশা করব-ভেদাভেদ ভুলে সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে এ সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। দুর্বার আন্দোলনের মধ্যদিয়ে ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে পরাজিত করতে হবে।
খালেদা জিয়াকে গণতন্ত্রের প্রতীক অভিহিত করে মির্জা ফখরুল জানান, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়া একা নন, গোটা জাতি তার সঙ্গে আছে। তিনি হচ্ছেন সার্বভৌমত্বের প্রতীক, গণতন্ত্রের প্রতীক। এ সরকারকে পরাজিত করতে হবে। খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে সুচিকিৎসা করিয়ে আনতে হবে।’
নিষেধাজ্ঞার জন্য দায়ী সরকার -রিজভী : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র সম্মেলন হয়ে গেল। বাংলাদেশকে ডাকা হয়নি। এরপর র্যারবের ছয় কর্মকর্তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে শনিবার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এজন্য দায়ী বর্তমান সরকার। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে অংশ নিয়ে তিনি এ সব কথা বলেন।
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) উদ্যোগে ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে সুচিকিৎসা ও স্থায়ী মুক্তি এবং শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কুরুচি বক্তব্যের প্রতিবাদে’ এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ডা. আবদুস সালামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, ডিইউজের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
রিজভী আরও বলেন, ‘কেন তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নিষিদ্ধ করেছে? তারা তো চোখ বন্ধ করে নেই। বাংলাদেশে কি হচ্ছে তারা সবাই দেখছে। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ বহু লোক গুম হয়েছেন। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) কি জানে না কেন গুম হয়েছে, কে গুম করেছে। আওয়ামী লীগ মনে করে চোখ বন্ধ করলে প্রলয় বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু চোখ বন্ধ করলে প্রলয় বন্ধ হয় না। সেটা এখন শুরু হয়েছে।’