যশোর প্রতিনিধি: যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে গত ১৭ দিনে ২৮ জন করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগী পালিয়ে গেছেন। পালিয়ে যাওয়াদের অনেকেই অভিযোগ করছেন, নোংরা পরিবেশ, নি¤œমানের খাবার, সময়মত ডাক্তার না আসার কারণেই তারা সেখান থেকে চলে গেছেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, ভয় এবং আতঙ্কের কারণেই কাউকে কিছু না বলে কেউ কেউ আইসোলেশন ওয়ার্ড ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ করোনা রিপোর্ট আসার আগেই জোর করেই চলে যাচ্ছেন।
জানা যায়, করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসার জন্য গত ২৩ মার্চ এ হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড নামে নতুন একটি ইউনিট তৈরি করা হয়। ১০ জুন পর্যন্ত এ ওয়ার্ডে করোনা উপসর্গ নিয়ে ২৪৮ জন ভর্তি হন। যাদের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন যশোর শহরের নীলগঞ্জ এলাকার মিল্টন শিকদারের স্ত্রী সেলিনা খাতুন (৩০), ঝিকরগাছা উপজেলার বর্ণি গ্রামের শাহিনের স্ত্রী শাকিলা খাতুন (২৪), হায়াত আলীর স্ত্রী জোহরা বেগম (৫৫), গদখালী এলাকার ইব্রাহিম মল্লিকের ছেলে রুহুল কুদ্দুস (৭০), চৌগাছা উপজেলার জামিরা গ্রামের মৃত কানু ম-লের ছেলে রেজাউল ইসলাম (৬০) ও শার্শা উপজেলার শিয়ালকোনা গ্রামের মিজানুর রহমানের স্ত্রী জাহানারা বেগম (৬০)।
এছাড়া ১৩ এপ্রিল থেকে ৭ জুন পর্যন্ত ২৮ রোগী এ আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে কাউকে কিছু না বলে চলে গেছেন। তারা হলেন যশোর শহরের মিশনপাড়ার ইতি কর্মকার, খড়কী এলাকার সানজিদা ইসলাম, উপশহর সারথি মিল এলাকার রুনা, নীলগঞ্জ এলাকার মারিয়া, পুলিশ লাইন এলাকার শাহবুদ্দিন, পুরাতন কসবা এলাকার সুমাইয়া, বেজপাড়ার শায়লা খাতুন, মুহিত, সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের জাহেদা বেগম, হাসিনা, পদ্মবিলা গ্রামের ইউসুফ আলী, পূর্বপান্তাপাড়া সতিঘাটার আতিয়ার রহমান, খাজুরার সুমাইয়া খাতুন, ঝুমঝুমপুর এলাকার মর্জিনা, এনায়েতপুর গ্রামের মুক্তা, বসুন্দিয়ার মাহমুদা, শানু, মাহিদিয়া গ্রামের আঞ্জুরা খাতুন, বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা গ্রামের সালমা খাতুন, মহিরণ গ্রামের মুন্না, ইন্দ্রা গ্রামের নিলুফা, চৌগাছা উপজেলার লস্কারপুর গ্রামের নাজমা, ঝিকরগাছা উপজেলার কাটাখাল গ্রামের মনিরা, শার্শা উপজেলার সেলিনা, বেনাপোলের কাগমারি গ্রামের সালমান, মণিরামপুর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের হাজেরা বেগম, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মামুন ও নড়াইল সদর উপজেলার দত্তপাড়া গ্রামের সুরাইয়া।
মোবাইল ফোনে কয়েকজন রোগীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা অভিযোগ করেছেন, আইসোলেশন ওয়ার্ডে নোংরা পরিবেশ, ডাক্তাররা ঠিকমতো রাউন্ডে আসেন না, সেবিকারা অবহেলার চোখে দেখেন। তারা আরও অভিযোগ করেন, ওয়ার্ডে খাবার পানি তীব্র সংকট রয়েছে, খাবারের মানও নিম্নমানের এবং পরিমানে কম দেয়া হয়। সাধারণ জ্বর-সর্দির রোগী আর করোনা রোগী সবাইকেই একসাথে রাখা হয়। এসব কারণেই তারা সেখান থেকে চলে গেছেন।
তবে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আরিফ আহমেদ জানিয়েছেন, রোগীদের সব অভিযোগ ঠিক না। আইসোলেশন ওয়ার্ড পরিস্কার করার জন্য পরিচ্ছন্ন কর্মীরা রয়েছেন। খাবারের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রোস্টার অনুযায়ী চিকিৎসকরা আইসোলেশন ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি আরও বলেন, আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়ার পর রোগীদের মনে এক ধরনের ভয় আর আতঙ্ক কাজ করে। সে কারণে আতঙ্কে অনেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ করোনা পরীক্ষার ফলাফল আসার আগেই জোর করে হাসপাতাল থেকে চলে যাচ্ছেন। তাদের পালিয়ে যাওয়াটা জাস্টিফাই করার জন্যই এখন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। তিনি জানান, ডাক্তাররাতো পুলিশিং করতে পারে না, কীভাবে এসব রোগীদের আটকে রাখা সম্ভব। এক প্রশ্নের জবাবে আরএমও বলেন, যারা হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে গেছে তাদের অনেকেই করোনা নেগেটিভ। তবে যাদের নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ এসেছে, প্রশাসনের সহায়তায় তাদের খুঁজে বের করে তাদের বাড়ি লকডাউন করে রোগীকে আইসোলেট করা হয়েছে এবং চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।