বড় বিপর্যয়ে শিক্ষা খাত : অনিশ্চিত এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষা
স্টাফ রিপোর্টার: মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে প্রায় ১৪ মাস। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি পাঠদানও বন্ধ দীর্ঘ সময় ধরে। আগামী মে মাসে সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সুনির্দিষ্ট তারিখ আগাম ঘোষণা করা থাকলেও করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতির কারণে খোলা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা কবে অনুষ্ঠিত হবে তাও কেউ জানে না। সব মিলিয়ে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বড় বিপর্যয়ে পড়েছে দেশের শিক্ষা খাত। গত বছর করোনা মহামারী শুরুর পর সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন, অনলাইন, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের দূরশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। কিন্তু বর্তমানে এই দূরশিক্ষণ কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। গত বছর সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও অনলাইনে পাঠদান শুরু হয়েছিলো জোরেশোরেই। কিন্তু অধিকাংশ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অনলাইন পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও এই পাঠদান চলছে জোড়াতালি দিয়ে। দায়সারাভাবে অনলাইন ক্লাস নেয়া হলেও কোনো পরীক্ষা নিতে না পারায় শিক্ষার্থীরা সেশনজটের সম্মুখীন হয়েছে। তাদের শিক্ষাজীবন থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সময়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কোচিং সেন্টারগুলোও করোনার প্রকোপে বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পড়াশোনাই এখন ভরসা। কিন্তু দীর্ঘ সময় ছুটি থাকায় শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ক্রমে। পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে তাদের। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২৪ মে থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এর আগে ১৭ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হল খুলে দেয়া হবে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। মন্ত্রী এ সময় ঘোষণা দেন, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে ক্লাস চালুর আগ পর্যন্ত অনলাইনে ক্লাস চলমান থাকলেও কোনো ধরনের পরীক্ষা নেয়া যাবে না। শিক্ষামন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর বন্ধ হয়ে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষা ও বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাও। করোনা সংক্রমণের মধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ের অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যকার্যক্রমে সম্পৃক্ত রাখার উদ্যোগ ছিলো মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের। কিন্তু সম্প্রতি ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। সব মিলেই শিক্ষা সেক্টর বড় একটি অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
এদিকে গত মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৩ মে থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরু হবে। সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হলেও ঘোষিত তারিখে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদসহ সচেতন মহল। কারণ, সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে। তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হতে পারে সরকারকে।
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির শুরুতে এসএসসি ও সমমান এবং এপ্রিলের শুরুতে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার আয়োজন করে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু করোনার সংক্রমণের কারণে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনিশ্চয়তায় পড়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্কুল খুলে ৬০ দিন পাঠদান শেষে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দিয়ে আগামী জুনে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার কথা বলেছিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়া কলেজ খুলে দেয়ার পর ৮৪ দিন পাঠদান শেষে আগামী জুলাই বা আগস্টে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার কথা বলা হয়েছিলো। গত ২৯ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে হিসেবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ বন্ধ না হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খোলা সম্ভব হয়নি। সে হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে ক্লাস নিয়ে নির্ধারিত সময়ে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া অনেকটাই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সে কারণেই পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে এই দুই পাবলিক পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীরা। করোনার কারণে গত বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা না নিয়ে অটোপাস দেয়ায় এ বছরও পরীক্ষা ছাড়া অটোপাস দেয়া হবে কি না এ নিয়ে দোলাচলে আছে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ বছর পরীক্ষা না নিয়ে অটোপাস দেয়ার সুযোগ নেই।