স্টাফ রিপোর্টার: প্রথমে বিত্তবান ব্যক্তিকে টার্গেট করে ওরা। তারপর সংগ্রহ করা হয় ফোন নম্বর। এরপর নারী সদস্যদের টোপ দিয়ে পাতা হয় প্রেমের ফাঁদ। এক পর্যায়ে কৌশলে ডেকে আনা হয় ফাঁকা ফ্ল্যাটে। পরে আপত্তিকর অবস্থায় তোলা হয় ছবি, ধারণ করা হয় ভিডিও। সাংবাদিক ও পুলিশের ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নেয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা।
এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে প্রায় নয় বছর ধরে নিরীহ মানুষদের ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করা একটি প্রতারক চক্রের দুই নারী সদস্যসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে নগদ ৯০ হাজার টাকা, ঘটনায় ব্যবহৃত ১২টি লাঠি, রশি, ১২টি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন কোম্পানির ১০টি সিম উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সিলেটের বাহুবল থানার হরিতলা গ্রামের আবুল কালাম আজাদের ছেলে সাইফুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার নতুন ভা-ারদহ গ্রামের ফিরোজ ইসলামের মেয়ে বিথী আক্তার, ঝালকাঠির নলছিটি থানার রূপচন্দ্রপুর গ্রামের কালাম তালুকদারের ছেলে সজল তালুকদার, বরগুনার সদর থানার শিয়ালিয়া গ্রামের মো. শানু হাওলাদারের ছেলে শফিকুল ইসলাম শান্ত ও কুমিল্লার দ্বেবিদার থানার কালিকাপুর গ্রামের কাদির শেখের মেয়ে ইভা।
চক্রটি সম্পর্কে ডিবি জানিয়েছে, চক্রটির মূলহোতা সাইফুল ইসলাম এবং বিথী আক্তার। নিঃসঙ্গ পুরুষকে প্রলুব্ধ করে সম্পর্ক জড়ায় তাদের চক্রের নারী সদস্য। চক্রটির টার্গেট পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তি। এর মধ্যে বিথী আক্তার কৌশলে বিভিন্ন বয়সী পুরুষদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে টার্গেট ব্যক্তিদের সেখানে নিয়ে আপত্তিকর ছবি তোলে। এরপর টাকা দাবি করে। টাকা দিয়ে ছাড়া পান তারা। ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই লোকলজ্জার ভয়ে এ বিষয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেন না। সাইফুল ইসলাম ও বিথী আক্তার স্বামী-স্ত্রী বলে পরিচয় দিলেও তারা এই প্রতারণার ব্যবসা চালানোর জন্যই একসাথে স্বামী-স্ত্রীর মতো থাকার অভিনয় করে আসছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান।
তিনি বলেন, এই চক্রের সদস্যরা ২০১৩ সাল থেকে বিভিন্ন কৌশলে চক্রের নারী সদস্যেদের মাধ্যমে নিরীহ মানুষদের ফাঁদে ফেলে ভাড়া বাসায় ডেকে নেয়। এরপর একটি কক্ষে আটক রেখে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দাবি করে। তাদের দাবি করা টাকা দিতে অস্বীকার করলে এই চক্রের নারী সদস্যদের সাথে ভুক্তভোগীদের আপত্তিকর ছবি তুলে ভয়ভীতি দেখায়। পরে ভুক্তভোগীর আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা আদায় করে থাকে।
ডিসি মশিউর রহমান আরো বলেন, আমাদের সমাজের একটা শ্রেণী অতিরিক্ত ফূর্তির তাগিদ বোধ করতে গিয়ে তাদের পেছনে ছোটেন। আর তাদের এমন ভীমরতিকে কাজে লাগিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার মতো অনেক প্রতারক আছেন। আমরা এখন হয়তো পাঁচজনকে ধরেছি। এদের সাথে হয়তো আরো কেউ জড়িত থাকতে পারেন। তারা হয়তো আরেকটা গ্রুপ বানিয়ে ফেলেন। এ ধরনের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের দায় রয়েছে জানিয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ পুলিশের।
গ্রেফতারকৃতরা গণমাধ্যমে কাছে অপরাধের কথা স্বীকার করে তারা বলেন, প্রথমে টার্গেট করে বাসায় নিয়ে এসে মেয়ের সাথে রুম দিই। সেখানে আপত্তিকর কাজ করার পর ভিডিও ধারণ করি। পরে সাংবাদিক বা প্রশাসনের ভয় দেখাই। থানায় ফোন করব বা থানায় নিয়ে যাব- এ ধরনের কথা বলি। এতে মানসম্মান বাঁচাতে ভুক্তভোগীদের একটা লোভনীয় প্রস্তাব দেন। তাদের হাতে প্রতারণার শিকার অনেকেই মানসম্মানের ভয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে নিস্তার পেয়েছেন।