স্টাফ রিপোর্টার: নিরাপদ সড়কসহ ১১ দাবিতে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বৃহস্পতিবার বাধা দিয়েছে পুলিশ। এরপরও এদিন রামপুরা সেতু এলাকায় মিছিল, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন তারা। সেইসঙ্গে আজ সকাল ১০টায় আবারও মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে ১০-১৫ শিক্ষার্থী রামপুরা সেতু এলাকায় এসে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাগবিত-া ও ধাক্কাধাক্কিও হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা চলে যান। তবে দুজন দাঁড়িয়ে থাকেন। আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে তারাও চলে যান। পরে দুপুর ২টার দিকে হাতিরঝিল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে এসে রামপুরা সেতু এলাকায় মানববন্ধনে দাঁড়ান। তারা নিরাপদ সড়ক চেয়ে সেøাগান দেন। সড়কে নিহতদের স্মরণে ২ মিনিট নীরবতা পালন করেন। আজকের কর্মসূচি ঘোষণা করে বেলা ৩টার দিকে তারা চলে যান। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শির্ক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে যোগ দেন। তবে অন্যদিনের মতো সড়ক অবরোধ বা গাড়ির কাগজপত্র দেখেননি তারা। ফলে সড়কে যান চলাচলও ছিল স্বাভাবিক।
পুলিশের বাধা সত্ত্বেও আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের একজন খিলগাঁও মডেল কলেজের সোহাগী সামিয়া। তিনি বলেন, আমরা যোদ্ধার জাতি। যোদ্ধারা কখনো ভয় পায় না। আমরা কেন ভয় পাব, ভয় পেলে তো আর রাস্তায় নামতাম না। যত বাধাবিপত্তি ও হুমকি আসুক, আমরা ১১ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত হুমকি-ধমকি দিয়ে আমাদের আন্দোলন থেকে বিরত করা যাবে না।
পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সোহাগী বলেন, দুপুর ১২টার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা রামপুরা সেতুর ওপর জড়ো হচ্ছিলাম। হঠাৎ পুলিশ এসে আমাদের হাতের প্ল্যাকার্ড ছিনিয়ে নেয়। আমাদের ধাক্কা দিতে দিতে রামপুরা সেতু থেকে বনশ্রী সড়কে নিয়ে যায়। পরে আমাদের নাম-ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর রেখে জোর করে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। তিনি বলেন, রাষ্ট্র-পুলিশ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চায় না। আমরা ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী ছিলাম বলে পুলিশ দাঁড়াতে দেয়নি। এখন আমরা শক্তি বাড়িয়ে এসে কর্মসূচি পালন করছি। যত বাধা আসুক, মৃত্যুঝুঁকি থাকলেও দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাব।
সোহাগী বলেন, যে কদিন এইচএসসি পরীক্ষা চলবে, সেই কদিন আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করব, যাতে কারও চলাফেরায় বাধা সৃষ্টি না হয়। যেদিন পরীক্ষা থাকবে না, সেদিন আমরা রাস্তায় অবস্থান করব, মিছিল করব। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। তিনি বলেন, পুলিশ আমাদের আজ আটকিয়েছে। জেলখানা বড় করেন, আমরা আসছি। শিক্ষার্থীরা যখন দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে মাঠে নামবে, তখন কীভাবে আটকাবেন? ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যখন জনগণ রাস্তায় নামবে তখন আসলে কিছু করার থাকবে না।
জানতে চাইলে রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, দুপুরে কয়েকজন শিক্ষার্থী মানববন্ধন করে। তাদের বলি, তোমরা কষ্ট করে পরীক্ষা দিয়ে এসেছ, এ রোদে দাঁড়ানোর দরকার নেই। তোমরা রাস্তা ছেড়ে চলে যাও। তারা চলে গেলেও দুজন কিছুক্ষণ ছিল। পরে দুপুর ২টার দিকে হাতিরঝিল থানা অংশে ২০-৩০ জন শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে মানববন্ধন করে। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য পুলিশ সতর্ক ছিল। পুলিশের খিলগাঁও জোনের এডিসি নুরুল আমীন বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সম্মান করি। তবে ছাত্রদের আন্দোলনে কিছু কুচক্রী ঢুকে পড়েছে। তারা আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। বিষয়টি খুব সূক্ষ্মভাবে ফলো করা হচ্ছে। কারা কারা এ কাজ করছে এমন কিছু মানুষকে আমরা শনাক্ত করেছি। কুচক্রীরা ছাত্রদের আন্দোলনে যাতে ঢুকে পড়তে না পারে, আন্দোলনকে ভিন্নদিকে প্রবাহিত না করতে পারে, সে ব্যাপারে আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি।
সরকার বাস ভাড়া বাড়ানোর পর থেকে শিক্ষার্থীরা আগের মতো অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। প্রতিদিনই তারা বিভিন্ন এলাকায় সড়ক আটকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। এর মধ্যে ২৪ নভেম্বর সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী এবং ২৯ নভেম্বর রাতে রামপুরায় বাসের চাপায় এক এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ আরও বাড়ে। ঢাকা পরিবহণ মালিক সমিতি ৩০ নভেম্বর শর্ত দিয়ে শিক্ষার্থীদের ‘হাফ’ ভাড়ার দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু বিকালে তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। সারা দেশে হাফ ভাড়া ও সময়ের শর্ত প্রত্যাহারসহ দুটি দাবি যুক্ত করে (মোট ১১ দফা) আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। তবে এইচএসসি পরীক্ষার কারণে অবরোধ-বিক্ষোভের পরিবর্তে মানববন্ধন করার ঘোষণা দেন।
মৌলভীবাজার, মাইজদী ও গৌরীপুরে মানববন্ধন: রাজধানী ঢাকার মতো দেশের কয়েকটি স্থানে একই দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা।
মৌলভীবাজার: দুপুরে মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এ সময় ফয়েজ আহমদ, জসিম উদ্দিন, ইমা বেগম, হাসিব আহমেদ, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের ইমরান নাজির, মোহাম্মদ মাহি, টাউন কামিল মাদরাসার এইচএম মাহিদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী): মাইজদী টাউন হল মোড়ে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করে। সুমন চন্দ্র দাসের সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য দেন আহমদ রিয়াদ, কানিজ ফাতেমা, প্রমা, কামরুল হাসান শাকিল, মুনা, ফারদিন আহমেদ শিপন, মুনতাহা প্রীতি ও দীপন মজুমদার প্রমুখ।
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ): গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে পুরাতন সোনালী ব্যাংক কৃষ্ণচূড়া চত্বরে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়। সমাবেশের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে উপজেলা ছাত্র ইউনিয়ন। সভাপতিত্ব করেন গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ মো. শফিকুল ইসলাম মিন্টু। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান ফকির। বক্তব্য দেন গৌরীপুর সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ম. নূরুল ইসলাম, গৌরীপুর যুগান্তর স্বজন সমাবেশের সভাপতি মো. এমদাদুল হক, উপজেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক কমরেড হারুন আল বারী, ক্ষেতমজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ, গৌরীপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. নাজিম উদ্দিন, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন গৌরীপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রইছ উদ্দিন, উপজেলা সুজনের সভাপতি রিয়াজুল হাসনাত, সহকারী শিক্ষক আমিরুল মোমেনীন, উপজেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান, উপজেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এনামুল হাসান অনয় ও সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন প্রমুখ।