স্টাফ রিপোর্টার: হঠাৎ বেড়ে যাওয়া করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ঢাকার আশপাশের সাত জেলায় কঠোর বিধিনিষেধে (লকডাউন) রাজধানীর প্রবেশমুখে ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। গতকাল কঠোর বিধিনিষেধের প্রথমদিন দূরপাল্লার কোনো পরিবহন রাজধানীতে ঢুকতেও দেয়া হয়নি। রাজধানী থেকে কোনো পরিবহন বাইরে যেতেও দেয়া হয়নি। রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগও বন্ধ করে দেয়া হয়। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। হঠাৎ ঢাকার আশপাশের সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণায় দূরপাল্লার যাত্রীরা বেশ ভোগান্তিতে পড়েন। অনেকেই ঢাকার প্রবেশমুখ দিয়ে ১০-১৫ কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে বিভিন্ন পরিবহনে ওঠেন। আবার ঢাকার বাইরে থেকে অনেকে হেঁটে রাজধানীতে প্রবেশ করেন। অসুস্থ রোগীকে নিয়ে অনেকেই চরম দুর্ভোগে পড়েন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে গতকাল ভোর ৬টা থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। এ নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা-আরিচা ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ক দিয়ে ঢাকার আমিনবাজারে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি গণপরিবহন। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। কর্দমাক্ত পথে হেঁটে, বৃষ্টিতে ভিজে, চরম দুর্ভোগ সঙ্গী করে দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটার পথ পেরিয়ে রাজধানীতে পৌঁছেন হাজারো মানুষ। এদের বেশিরভাগই কর্মস্থল যাত্রী। সকাল থেকেই সাভারের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে দেখা গেছে এই চিত্র। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের হেমায়েতপুর, বলিয়ারপুর ও আমিনবাজারে দায়িত্বরত পুলিশ গতকাল রাজধানীতে কোনো গণপরিবহন প্রবেশ করতে দেয়নি। ফলে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হেঁটে রাজধানী পৌঁছে মানুষ। সড়কে গণপরিবহন না থাকলেও ছিল জনস্রোত। সড়কে যানচলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দীর্ঘ যানজটও দেখা গেছে ঢাকাগামী লেনে।
রাজধানীতে বেসরকারি অফিসে কর্মরত আশিক বলেন, ‘আমি প্রতিদিন সকালে বাসে আমার অফিসে যাই। আজ সকালে বের হয়েছি, হেমায়েতপুরের পরই বাস থেকে আমাকে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরে হেঁটেই অফিসে যেতে হয়েছে। সঙ্গে ছাতা না থাকায় বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছি। অফিসে পৌঁছতেও দেড় ঘণ্টা দেরি হয়েছে।’
সাভার জোনের ট্রাফিক ইনচার্জ (টিআই) আবদুস সালাম বলেন, ‘সকালেই ডিএমপি থেকে পরিবহন ঘুরিয়ে দেয়া হয়। উল্টো পথে কোনো পরিবহন যাতে ঢুকতে না পারে তার জন্য সড়কের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ দায়িত্ব পালন করেছে। আমরা কোনো পরিবহন থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেইনি।’ ডেমরা ট্রাফিক জোনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিষ্ণু শর্মা বলেন, ‘নির্দেশনা রয়েছে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যেতে পারবে না এবং কোনো বাস ঢাকায় ঢুকতেও পারবে না। আমরা সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছি। মূলত ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী যানবাহন ছাড়া দূরপাল্লার বাস চলছে না। দু-একটি বাস চলে আসলে আমরা সেগুলোর বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছি।’
যাত্রীবাহী নৌ চলাচল বন্ধ: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা থেকে সারা দেশে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। গতকাল ভোর ৬টা থেকে এ নিষেধাজ্ঞা শুরু হলেও দক্ষিণাঞ্চলের অনেক যাত্রী বিষয়টি জানেন না। এ কারণে তারা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এসে ফিরে গেছেন। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কিছু যাত্রী লঞ্চ না পেয়ে টার্মিনাল থেকে ফিরে যাচ্ছেন। বেশ কিছু লঞ্চ সরিয়ে অন্যত্র নোঙর করা হয়েছে। গতকাল সাভারের জিরাবো থেকে আসা রহিমা বেগম জানান, ‘আমি বরগুনা যাব। বেলা ১টার দিকে টার্মিনালে এসে শুনি লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। লঞ্চ চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। তাই গন্তব্যে যেতে না পেরে বাসায় ফিরে যাচ্ছি।’ ঢাকা নদীবন্দর সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার উদ্দেশে ৮১টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। গতকাল ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বন্দরে ৪৯টি লঞ্চ এসেছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থার ঢাকা নদীবন্দরের প্রচার সম্পাদক ও সালাউদ্দিন গাজী লঞ্চের মালিক বাবু গাজী বলেন, করোনার কারণে ঢাকাসহ সারা দেশে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভোলা ও শরীয়তপুর রুটে তার দুটি লঞ্চ যাওয়ার কথা ছিল। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেগুলোও বন্ধ রাখা হবে। নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল (মঙ্গলবার) সকাল ৬টা থেকে ঢাকা নদীবন্দরসহ সারা দেশে যাত্রীবাহী নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।’
যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ: করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ঢাকা থেকে দেশজুড়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গতকাল রাত ১২টার পর থেকে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধের সিদ্ধান্তটি কার্যকর হয়েছে। রেল মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়া ঢাকার সঙ্গে সারা দেশে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ঢাকার সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল চালু হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, মঙ্গলবার রাত ১২টার পর ঢাকা থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ হচ্ছে। ঢাকা থেকে কোনো ট্রেন পরিচালনা করা হবে না। করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সোমবার ঢাকার আশপাশের ৪ জেলাসহ যে ৭ জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলোতে আন্তনগর ট্রেন থামেনি। গতকাল (মঙ্গলবার) ঢাকা থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধের ঘোষণা আসে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গত ৫ এপ্রিল থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ওই সময় সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করলে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ট্রেনের মোট আসনের ৫০ শতাংশ যাত্রী খালি রেখে ২৪ মে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।