স্টাফ রিপোর্টার: সত্তরের নির্বাচনের পথ ধরে একাত্তরে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। এরপর এদেশে এগারো বার জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। কেমন ছিলো সেগুলো? কেমন হতে পারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন? বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন’-এমন দাবি পেশ করে এবারের ভোট থেকে দূরে আছে বিএনপি ও তার ‘সমমনা’ দলগুলো। তাদের সঙ্গে যুগপৎ না হলেও প্রায় একই দাবিতে নির্বাচন বর্জন করেছে আরেক জোট সিপিবি-বাসদ নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোটও। ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ইতিহাস এ অঞ্চলে নতুন নয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মওলানা ভাসানী এমনটি করেছিলেন। ন্যাপ ভোটে না থাকায় আওয়ামী লীগ তখন নিরঙ্কুশ বিজয় পায়, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে গণরায় বলে মনে করে থাকেন বিশ্লেষকরা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-র উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বড় বিজয় নিশ্চিত করতেই ন্যাপ ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়, এমন একটি কথা প্রচলিত আছে। তবে ভাসানী সেভাবে ভোটকেন্দ্রিক রাজনীতিকও ছিলেন না।’ বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচনেও সুবিধা করতে পারেনি ভাসানীর ন্যাপ। বাংলাপিডিয়ার তথ্য মতে, ১৯৭৩ সালের সেই নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৬৯ আসনে প্রার্থী দিয়ে কোথাও বিজয়ী হতে পারেনি তারা। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় ২৯৩ আসনে। মোট ভোট পড়ে ৫৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। নৌকার বড় বিজয় নিশ্চিত থাকলেও তখন কিছু আসনে আওয়ামী লীগ জালিয়াতি করেছিল-এমন দাবি করছেন মার্কসবাদী রাজনীতিক মনজুরুল আহসান খানের। তার মতে, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম নির্বাচন বলে তখন ভোটারদের মধ্যে বাড়তি আগ্রহ ছিলো। সব মিলিয়ে নির্বাচন ছিলো অংশগ্রহণমূলক।’ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ভোটারদের মধ্যে ভোট নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ নেই। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য দেখানোর জন্য তারা এবার কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চাইছে।’ ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনতার ভোট পাওয়ার আগেই অবশ্য আওয়ামী লীগের সংসদে সরকারি দল হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যায়। কারণ, বিএনপি জোটের বর্জনের মধ্যে সেবার ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ৫ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ করা হয় ১৪৭ আসনে। সেখানে ভোট পড়ে ৪০ দশমিক শূন্য চার শতাংশ। সেবার বিএনপি জোট ভোট বর্জনের পাশাপাশি তা ঠেকানোর জন্য হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতেও ছিলো, যা সহিংসতার দিকেও গড়ায়। তবে মাঠের রাজনীতির সুফল তারা পায়নি তখন। বিএনপি জোটের এখনকার যে দাবি, নির্বাচনকালীন সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সামনে রেখে আওয়ামী লীগ নির্বাচন বর্জন ও ভোট ঠেকানোর আন্দোলনে অনেকটাই সফল। আগের শতকের নব্বই দশকের মাঝভাগে তারা ১৭৩ দিন হরতাল করে। তবু তখনকার বিএনপি সরকার একতরফাভাবে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ বেশিরভাগ দল অংশ নেয়নি। ভোট দিতে গিয়েছিলো ২৬ দশমিক পাঁচ শতাংশ ভোটার। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্যমতে, সেই সংসদের মেয়াদ ছিলো ১১দিন। তখন আওয়ামী লীগের দাবি মেনে সংবিধানে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যুক্ত করা হয়। সাংবিধানিক তদারক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে বিএনপি বিদায় নেয়। তাদের অধীনে প্রথম একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১২ জুন। সেই সপ্তম সংসদের ভোটে আওয়ামী লীগ পায় ১৪৬ আসন, বিএনপি ১১৬ আর জাপার আসন সংখ্যা ৩২। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হু. মু. এরশাদকে নিয়ে ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফিরে আসে আওয়ামী লীগ। সেবার ভোট পড়েছিল ৭৪.৯৬ শতাংশ। দেশের ইতিহাসে সপ্তম সংসদীয় সরকারই প্রথম শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করে। সংবিধানসম্মতভাবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন সদ্য সাবেক হওয়া প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান। তার অধীনে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ভোট পড়ে ৭৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এ নির্বাচনে বিএনপি ১৯৩টি আসনে জয়ী হয়। আওয়ামী লীগ পায় ৬২টি আসন। এ সময়ে ক্ষমতাসীন বিএনপির বিচারপতিদের বয়স বাড়ানোর উদ্যোগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে আওয়ামী লীগের সংশয় তৈরি হয়। তাদের অভিযোগ, পছন্দের বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান করতেই বিএনপি এভাবে বয়স বৃদ্ধি করেছে। ফলে ২০০৭ সালে ২২ জানুয়ারি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগের আন্দোলনের মুখে তা আর হতে পারেনি। ঘটে যায় এক-এগারোর ঘটনা। ক্ষমতায় আসে সেনা-সমর্থিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যার প্রধান হন ড. ফখরুদ্দীন আহমদ। তারা জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে সময় নেন দুই বছর। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সেই নির্বাচনে ভোট পড়ে ৮৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। সেখানে আওয়ামী লীগের আসন ২৩০টি, আর বিএনপির ৩০টি। নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিরও অতীত-সাফল্য আছে। আশির দশকে এরশাদ সরকারের অধীনে পরপর দুটি জাতীয় নির্বাচনে তারা অংশ নেয়নি। এর মধ্যে ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারি দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তখনকার রাষ্ট্রপতি এরশাদের দল জাপা জয়ী হয় ১৫৩টি আসনে, আওয়ামী লীগ পায় ৭৬টি আসন। বিরোধীদলীয় নেতা হন শেখ হাসিনা। তারা অবশ্য প্রথম থেকেই ভোট কারচুপির অভিযোগ সামনে আনে। বেশিদিন তারা সংসদে থাকেনি। ভোটে না গিয়ে সেবার ‘আপোষহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিতি পান বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া। চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবশ্য বিএনপির মতো আওয়ামী লীগও অংশ নেয়নি। ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চের সেই একতরফা ভোটে এরশাদের জাপা পায় ২৫১টি আসন। সম্মিলিত বিরোধী দল (কপ)-এর আসন সংখ্যা ১৯। বিরোধীদলীয় নেতা হন আসম আব্দুর রব। তবে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা রাজনীতিকরা রবের দলকে তখন ‘গৃহপালিত বিরোধীদল’ তকমা দেয়। তুমুল আন্দোলনের মুখে এরশাদ সরকারের পতন হলে দুই বছর সাত মাসের মাথায় চতুর্থ সংসদেরও অবসান হয়। পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে থাকা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এতে ভোটগ্রহণ করা হয় ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। ভোট পড়ে ৫৫.৪৫ শতাংশ। বিএনপি পায় ১৪০টি আসন, আওয়ামী লীগ ৮৮, আর জাতীয় পার্টির আসন ৩৫। সরকার গঠন করে বিএনপি। সংসদ নেতা হন খালেদা জিয়া। বিরোধীদলীয় নেতা হন শেখ হাসিনা। তাদের যৌথ উদ্যোগে আবার সংসদীয় সরকারব্যবস্থায় ফিরে যায় বাংলাদেশ। বাহাত্তরে প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় নির্বাচনে এ ধরনের কোনো দল অংশ নিতে পারেনি। কিন্তু পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যে সরকার আসে, তারা আবার ধর্মের নামে যে রাজনীতি তার পৃষ্ঠপোষকতা দিতে থাকে। ১৯৭৭ সালে ধর্মভিত্তিক দল গঠনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া মুসলিম ও ডেমোক্র্যাটিক লীগ ২০টি আসন পায়। সামরিক শাসক জিয়ার সময়ের সেই ভোটে অংশ নিয়েছিলো আওয়ামী লীগও। তবে শেখ হাসিনা তখনো দেশে ফিরতে পারেননি। তার অনুপস্থিতিতে দ্বিধাবিভক্ত দলের একাংশ আওয়ামী লীগ (মালেক) পায় ৩৯টি আসন আর অপর অংশ আওয়ামী লীগ (মিজান) জয়ী হয় দুটি আসনে। তখন বিএনপি পায় সর্বোচ্চ ২০৭টি আসন। বিএনপির আরেক আমল ২০০১ সালে তাদের জোটসঙ্গী হিসেবে প্রথমবারের মতো সরকারের সহযোগী হয় জামায়াতে ইসলামী। তাদের শীর্ষ দুই নেতা মন্ত্রীর পদও পান। এর আগে ১৯৯১ সালে অবশ্য সরাসরি সরকারে না গেলেও ১৮টি আসন পাওয়া জামায়াত বিএনপিকে সরকার গঠনে সহায়তা করে। ভোটেও তখন তারা পরোক্ষ সহযোগী ছিলো। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে। এতে জামায়াতে ইসলামীর একাধিক শীর্ষনেতা দ-িত হন। একাত্তরের ভূমিকার জন্য একে ‘ক্রিমিনাল দল’ আখ্যায়িত করে আদালত। আইনি কারণে তাদের নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমানে সমান থাকলেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীরা এখনো পিছিয়ে। ৩৩ শতাংশ নারী কোটার যে বাধ্যবাধকতা-কোনো রাজনৈতিক দলই এখনো তা বাস্তবায়ন করেনি। এমপি হওয়ার দৌড়ে সরাসরি ভোটে প্রার্থী হিসেবে নারীর সংখ্যাও খুব বেশি নয়। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছিল ২৪ জন নারীকে। জোটের হিসাব করতে গিয়ে এখান থেকেও কেউ বাদ পড়েছেন। কারো মনোনয়ন আবার বৈধতা পায়নি। দ্বাদশ সংসদের ৩০০ আসনে তাই নারীর সংখ্যা ২০ ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ খুব কম। এর সঙ্গে যুক্ত হবে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০ আসন। সেখানে আবার সরাসরি নির্বাচন হয় না। পরোক্ষ এই ভোটের প্রক্রিয়ার শুরু ১৯৭২ সালে। তখন অবশ্য সংরক্ষিত নারী আসন ছিল ১৫টি। আর সুযোগটা রাখা হয় ১০ বছরের জন্য। সেই সময় পার হওয়ার আগেই ১৯৭৮ সালে সামরিক ফরমানে সময় বেড়ে হয় ১৫ বছর. বেড়ে যায় আসনও-১৫ থেকে ৩০। অষ্টম সংসদের সময় সংবিধানের সংশোধন করে নারী আসনসংখ্যা বাড়িয়ে করা হয় ৪৫। পরের সংসদে এসে ২০১১ সালে সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা করা হয় ৫০। এসব আসনে সরাসরি ভোট যেমন নেই, তেমনি কাজের বিষয়ও সুনির্দিষ্ট নয়। এটা এক ধরনের অসুবিধা-এ বিষয়ে একমত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার। ফেনী-১ আসনের বর্তমান এই সংসদ সদস্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘৩-৪টি সাধারণ আসন মিলিয়ে একটি সংরক্ষিত আসন। তাদের কাজ ও বাজেট স্পষ্ট নয়। এ কারণে নারীরা কীভাবে নিজেকে যুক্ত করবে, এটা বুঝার ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হয়। আবার সেখানে সরাসরি নির্বাচিত পুরুষ এমপিও থাকেন, তাই সংরক্ষিত নারী আসনের এমপির কাজ করাটা চ্যালেঞ্জের ব্যাপার।’ আওয়ামী লীগ জোট থেকে মনোনয়ন না পেয়ে এবার প্রার্থী না হওয়া শিরিন আখতার আরো বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যেখানে সরাসরি ভোটে নারীরা নির্বাচিত হচ্ছেন, সেখানে দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও সংসদের সংরক্ষিত আসনে এখনো হয়নি। তবে একটা সময় এটা হবে।’ দশম সংসদে জাতীয় পার্টি (জাপা) বিরোধীদলে ছিলো। আবার তাদের কেউ কেউ ছিলেন মন্ত্রিসভার সদস্য। এ নিয়ে তখন সমালোচনা ছিল। একাদশ সংসদে এসে জাপা শুধুই বিরোধী দলে আছে। বিরোধীদলীয় নেতা হন রওশন এরশাদ। এবার তিনি জিএম কাদেরের সঙ্গে নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে নির্বাচন থেকেই ছিটকে পড়েছেন। ফলে বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা আগামীতে আর একই পদে থাকছেন না এটা নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে জাপা প্রধান জিএম কাদেরের জন্য সুযোগ ছিল। কিন্তু নির্বাচনের মাঠ এবার অন্যরকম। আওয়ামী লীগ জাপাকে ২৬টি আসনে ছাড় দিলেও প্রায় সব জায়গায়ই নির্বাচন করছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ নেতা। দলটির কেন্দ্র থেকেই যাদের স্বতন্ত্র, ‘ডামি’ বা ‘বিদ্রোহী’ বলা হচ্ছে। এই প্রার্থীদের কাছে শুধু লাঙ্গল নয়, নৌকার কিছু প্রার্থীও ধরাশায়ী হবে-এই আলোচনা ব্যাপকভাবেই রয়েছে দেশের রাজনীতির অঙ্গনে। তাই বিএনপিবিহীন নির্বাচনে এবার সরকারি দলের চেহারা আগাম স্পষ্ট হলেও বিরোধীদলের চেহারা কেমন হবে- তা শুধু ভোটের ফলাফল পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়ের পাশাপাশি পরবর্তী সংসদে কার্যত দুর্বল বিরোধীদল পাওয়া প্রায় নিশ্চিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন শুরুর আগে এমন হয়েছে মাত্র একবার। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে তখনকার ক্ষমতাসীন দল বিএনপি পেয়েছিল ২৭৮টি আসন। বিপরীতে মাত্র একটি আসন পায় ফ্রিডম পার্টি। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পান ১০টি আসন। ফ্রিডম পার্টির হয়ে একমাত্র আসনটি জিতেছিলেন পরবর্তীতে (২০১৬) বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশিদ। মাত্র ১ আসনে জয়ী দলের প্রতিনিধি হিসেবে সংসদের প্রধান বিরোধী দলীয় নেতাও হন তিনি। বাকি ১১টির মধ্যে ১০টি আসনের ফলাফল ‘অসমাপ্ত’ থাকে ও আদালতের রায়ে একটি আসনের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। বিতর্কিত নির্বাচনের পর বিএনপি সরকারের প্রথম সংসদ অধিবেশন শুরু হয় ১৯ মার্চ, মাত্র চার কার্যদিবস পরই (১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ) সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন, অর্থাৎ ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চার মাসের মধ্যেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন।