স্টাফ রিপোর্টার: জরুরি ১১১টি সংস্কার সুপারিশ প্রশাসনিকভাবেই বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। যেসব সংস্কার করতে সংবিধান ইস্যু নেই সেগুলো মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব সুপারিশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তাদের কাছে সংশোধন প্রস্তাবসহ বাস্তবায়নের সময়সীমাও জানতে চেয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছে, ১১১ সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন হলে নির্বাচনকে ত্বরান্বিত করার কাজে সহায়ক হবে। সরকার ইচ্ছা করলে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো অধ্যাদেশ জারি করে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছে, দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলোর তালিকা নির্ধারিত ছকে ‘অতি জরুরি ভিত্তিতে’ পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে। সংস্কার সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে মতামত নেয়ার পাশাপাশি ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ চলার মধ্যে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য ১১১টি সুপারিশের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য ৯ বিষয়ে সুপারিশ রয়েছে। এ ছাড়া বিচার বিভাগের ২৮ দফা, দুদক সংস্কার কমিশনের ৪৩ দফা, পুলিশ সংস্কার কমিশনের ১৩ দফা ও জন প্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮ দফা রয়েছে। ‘সংস্কার কমিশনের আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অবহিতকরণ’ বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়, রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার অনুশাসন মোতাবেক ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে ছয়টি কমিশন প্রধান উপদেষ্টার নিকট তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এর মধ্যে ১) নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ২) পুলিশ সংস্কার কমিশন ৩) বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ৪) দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন এবং ৫) জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন থেকে আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলো চিহ্নিত করে আইন উপদেষ্টা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পাঠিয়েছেন। ১৩ মার্চ ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সংস্কার কমিশনগুলোর বাছাইকৃত আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়/বিভাগ নির্ধারিত ছকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রস্তাব পাঠাতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চিঠিতে সিদ্ধান্তের বিষয়ে বলা হয়েছে- সংস্কার কমিশনগুলোর বাছাইকৃত আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলো নির্ধারিত ছকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রস্তাব পাঠাবে। মন্ত্রণালয়/বিভাগভিত্তিক বিন্যস্তকৃত আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলো তালিকা এবং সরবরাহকৃত ছক অনুসারে অতি জরুরিভিত্তিতে হার্ডকপি এবং নিম্নবর্ণিত ই-মেইলে পাঠাবে। এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সদস্য নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলো নেয়ার সরকারের উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে যুক্তি হলো-এর মাধ্যমে নির্বাচনকে তরান্বিত করার কাজে সহায়ক হবে। সরকার ইচ্ছে করলে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো অধ্যাদেশ জারি করে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচন সংক্রান্ত অতি জরুরি সংস্কার সুপারিশগুলো আরপিও সংশোধন, আইন-বিধি সংশোধন করা যেতে পারে। ঐকমত্য কমিশনের এ সদস্য বলেন, আমরা ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে দলগুলোর মতামত নিচ্ছি। এর মধ্যে অধিকাংশই সংবিধানসংক্রান্ত। এগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। কিন্তু সরকারের ১১১টি সুপারিশের মধ্যে আশু বাস্তবায়নযোগ্য তালিকা হলে আইনি সংশোধন সম্ভব। এ ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের মাধ্যমে এক্সপার্টদের মতামত নিয়ে অধ্যাদেশ করে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সংস্কার অনুবিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (শুদ্ধারচার শাখা) মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত চিঠি ১৯ মার্চ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়সহ এক ডজনেরও বেশি মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো হয়। ইসি সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ৯টা বিষয়ের সুপারিশের ওপর আমাদের মতামত চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আরপিও সংশোধন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন সংশোধন, নির্বাচন কর্মকর্তা বিধান আইন সংশোধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও গণমাধ্যম নীতিমালা, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, হলফনামার খসড়া, ভোটার তালিকাকরণ অভ্যন্তরীণ ও প্রবাসী, পোস্টাল ব্যালট, রাজনৈতিক ও নির্বাচনি অর্থায়নে স্বচ্ছতা এবং শুদ্ধাচার চর্চা নিশ্চিতকরণ। এই ৯টি বিষয়ে আশু বাস্তবায়নযোগ্য বিষয়গুলোর সম্পর্কে জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনাররা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমরা যত দ্রুত সম্ভব এসব বিষয়ের ওপর মতামত পেশ করবো।