পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নারী পোশাকশ্রমিক নিহত

স্টাফ রিপোর্টার: নতুন ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে গাজীপুর ও ঢাকার আশুলিয়ায় পোশাকশ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে আন্দোলনরত পোশাকশ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে আঞ্জুয়ারা খাতুন (২২) নামে এক নারী শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশ ও শ্রমিকসহ অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছেন। বুধবার সকালে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী ও জরুন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। কোনাবাড়ীর নাওজোড় এলাকায় পুলিশের এপিসিতে বিস্ফোরণ ঘটলে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। এদের মধ্যে ফুয়াদ নামের একজন পুলিশ কনস্টেবলের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ ঘটনায় আহতদের গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
অন্যদিকে, বুধবার দুপুরের পর থেকে আশুলিয়ার জামগড়া, নরসিংহপুর, জিরাবো কাঠগড়া এলাকায় বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা বিভিন্ন কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর চালান। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদেরকে ছুটি দিয়ে দেয়। নিহত শ্রমিক আঞ্জুয়ারা খাতুন কোনাবাড়ী জরুন এলাকার ইসলাম গার্মেন্টস ইউনিট-২-এর সেলাই মেশিন অপারেটর পদে চাকরি করতেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর থানার চরগিরিশ এলাকায়।গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) ইব্রাহীম খান নারী শ্রমিক নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঘটনার সময় হুড়োহুড়িতে ঐ নারী শ্রমিক পড়ে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। নিহতের স্বামীর বড়বোন আরজিনা খাতুন জানান, নিহতের স্বামী জামাল হোসেনের বাড়ি একই গ্রামে। তারা কোনাবাড়ীতে ভাড়ায় বসবাস করেন। স্বামী জামাল হোসেনও কোনাবাড়ীর পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় একটি গামের্ন্টেসে চাকরি করেন। তাদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে আরিফ (৭) স্থানীয় স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে এবং মেয়ে জয়া দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করে।
পুলিশ, শ্রমিক ও এলাকাবাসী জানায়, মঙ্গলবার পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এতে শ্রমিকরা সন্তুষ্ট নন। বুধবার সকাল থেকে গাজীপুরের কোনাবাড়ী, জরুন এলাকাসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে রিপন গার্মেন্টস ও স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টের শ্রমিকরা জড়ো হয়ে সড়কে অবরোধ করে কাঠ ও টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেন। এছাড়া বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুরের চেষ্টা করেন। শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেট নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত শ্রমিক-পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে পুলিশ-শ্রমিকসহ অন্তত ১৫জন আহত হয়। গুরুতর আহতদের মধ্যে আঞ্জুয়ারা ও জামাল উদ্দিন নামে দুই শ্রমিককে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে দুপুর ১২টার দিকে আঞ্জুয়ারা খাতুনকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। কোনাবাড়ী থানার ওসি আশরাফ উদ্দিন জানান, শ্রমিকরা আঞ্চলিক সড়কগুলোতে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। এছাড়া ভাঙচুরের চেষ্টা করেন। শ্রমিকদের মহাসড়কে নামতে দেওয়া হয়নি। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।এদিকে বিকালে অন্দোলনরত শ্রমিকরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মহানগরীর নাওজোড় এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। এসময় তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ মহাসড়ক থেকে সরাতে গেলে শ্রমিকরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। শুরু হয় ধাওয়া পালটা ধাওয়া। এসময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ বেধে যায়। পরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশের এপিসিতে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে প্রবীর (৩০), ফুয়াদ (৩৫), খোরশেদ (৩৫), আশিকুর (২৮) ও বিটুল (২৪) নামে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। এদের মধ্যে ফুয়াদের ডান হাতের কবজি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।খবর পেয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব হোসেন গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে যান। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) ইব্রাহীম খান বলেন, কোনাবাড়ী থেকে শ্রমিকরা লাঠিসোঁটা নিয়ে নাওজোড় এলাকায় জড়ো হয়ে মহাসড়কে নামে। তাদের সরাতে গেলে পুলিশের ওপর প্রচুর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। সন্ধ্যার দিকে গাজীপুরের তিন সড়ক, চান্দনা চৌরাস্তা ও রওশন সড়ক এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভ চলছিল।