স্টাফ রিপোর্টার: গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের অফিসের ঠিকানায় অভিযানে গিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো ‘অস্তিত্ব মেলেনি’ বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। সূচনা ফাউন্ডেশনের কর মওকুফসহ বিভিন্ন অর্থিক অনিয়মের নথি সংগ্রহ করতে দুদক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেও অভিযান চালিয়েছে বলে দুদকের উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম জানিয়েছেন। বুধবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দুদকের সহকারী পরিচালক নওশাদ আলীর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি এনফোর্সমেন্ট টিম জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও সমাজ সেবা অধিদপ্তরের দেয়া সূচনা ফাউন্ডেশনের ধানমন্ডি অফিসের ঠিকানায় অভিযান চালায়। হাসিনাকন্যা পুতুল এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। তার মেয়ে পুতুলের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা হয়েছে। যার মধ্যে দুদক একটি মামলা দায়ের করেছে ‘তথ্য গোপন ও ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে পূর্বাচলে পুতুলের নামে পস্নট বরাদ্দের অভিযোগে। স্বেচ্ছাসেবী ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১৪ সালে গড়ে ওঠা সূচনা ফাউন্ডেশন মানসিক প্রতিবন্ধিতা, স্নায়বিক প্রতিবন্ধিতা, অটিজম এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে। সায়মা ওয়াজেদ এটির প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন ছিলেন। আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) গত নভেম্বরে এ ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশনা দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠায়। দুদক বলছে, পুতুল ‘সূচনা ফাউন্ডেশন’ নামের ওই প্রতিষ্ঠান খুলে বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে ‘জোরপূর্বক উপঢৌকন’ নেওয়ার মাধ্যমে অর্থ ‘আত্মসাৎ’ করেন। তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওপর ‘অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে’ ফাউন্ডেশনের নামে পাওয়া অর্থ করমুক্ত করিয়ে নেন, যাতে সরকারের বিপুল অর্থের ‘ক্ষতি’ হয়েছে। পুতুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে দুদকের নথিতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় অটিস্টিক সেলকে ব্যবহার করে ‘ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে’ পুতুল রাষ্ট্রের ‘বিপুল অর্থ আত্মসাৎ’ করে নিজে লাভবান হয়েছেন। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে লেখাপড়া করা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল যুক্তরাষ্ট্রে স্কুল সাইকোলজিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। তার মা শেখ হাসিনা তাকে অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার বিষয়ক বাংলাদেশ জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব দেন। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা প্যানেলেরও তাকে সদস্য করা হয়। ২০২৩ সালের নভেম্বরে ভারতের নয়া দিল্লিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক কমিটির ৭৬তম অধিবেশনে সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক নির্বাচিত হন সায়মা ওয়াজেদ। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সেই দায়িত্ব নেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দপ্তর ভারতের দিলিস্নতে। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে পুতুল সেখানেই আছেন। আর গত ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে শেখ হাসিনাও আছেন দিল্লিতে। দুদক বলছে, ‘যোগ্যতা না থাকলেও’ মেয়ে পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে নিয়োগে ‘ক্ষমতাকে অনৈতিকভাবে’ ব্যবহার করেছিলেন শেখ হাসিনা। কোনো কারণ ছাড়াই মেয়েকে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সফরে সফরসঙ্গী করেছেন তিনি। সায়মা ওয়াজেদের ক্ষেত্রে প্রার্থীর যোগ্যতা হিসেবে যেসব অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা উল্লেখ করা হয়েছে, তা ‘কেবলই কাগুজে ও ফরমায়েশি’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে দুদকের তৈরি করা সারসংক্ষেপে। দুদকের নথিতে বলা হয়েছে, পুতুলের ‘অযোগ্যতাকে’ ধামাচাপা দিতে ২০২৩ সালে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সঙ্গে করে ভারতে নিয়ে যান। একইভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭৬তম সম্মেলন উপলক্ষে ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় অর্থ ‘অপচয় করে’ শতাধিক কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি দল দিলিস্নতে অবস্থান করেন। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ‘দুর্নীতির’ আশ্রয় নিয়ে এবং তার মায়ের ‘রাজনৈতিক প্রভাবের অপব্যবহার’ করে বিভিন্ন ‘অপরাধমূলক কার্যক্রমে’ লিপ্ত হয়েছিলেন বলে দুদকের ভাষ্য। গত ১২ জানুয়ারি পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে ১০ কাঠার সরকারি পস্নট বেআইনিভাবে বরাদ্দের অভিযোগে পুতুল, তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের নামে মামলা করেছে দুদক।